ভাত খেলেই কি ওজন বাড়বে, জেনে নিন

ভাত খেলেই কি ওজন বাড়বে, জেনে নিন

ফাইল ছবি।

ওজন বৃদ্ধির দুশ্চিন্তা তো ছিলই, সঙ্গে যোগ হল করোনার ভয়। যে দিন থেকে জানা গেল ওজন বাড়লে করোনার আশঙ্কা ও জটিলতা বাড়ে, মানুষ ওজন কমাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। আর সেই চেষ্টায় প্রথমেই কোপ পড়ল ভাতে। ভাত খেলে কি ওজন বাড়ে এসম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের মতামত জেনে নেই।  

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সুকুমার মুখার্জি জানিয়েছেন, সুষম খাবারের অঙ্গ হিসেবে অল্প করে ভাত খেলে, সে আপনি যদি ফ্যানযুক্ত ভাতও খান, ওজন বাড়ে না, বরং উচ্চ রক্তচাপ, মেটাবলিক সিনড্রোম (হৃদরোগের অন্যতম কারণ) ও কোমরের মাপ বাড়ার আশঙ্কা কমে যথাক্রমে ৩৪, ২১ ও ২৭ শতাংশ। কমে কিছু ক্যানসারের আশঙ্কাও। কাজেই সারা দিনে ১৫০ গ্রামের মতো ভাত খেতেই পারেন। এতে ৫০০ ক্যালোরির বেশি প্রবেশ করে না শরীরে। সঙ্গে কম তেলে রান্না করা ডাল–সবজি–মাছ–ডিম ইত্যাদি খেলে এক দিকে যেমন যথাযথ পুষ্টি হয়, ক্যালোরির হিসেবও ঠিক থাকে। অতএব ভাতের আসক্ত হলে, রুটি খেয়ে অতৃপ্ত থাকার দরকার নেই। দিনে একবার কি দু–বার ভাতই খান।’

পুষ্টিবিদ বিজয়া আগরওয়াল জানান, শুধু ব্রাউন কেন, কালো বা লাল চালের ভাতও হয়। হয় ওয়াল্ড রাইস বা বন্য চাল। এরা হল সব হোল গ্রেইন বা আনপলিশড চাল। খেতে পারলে খুবই ভাল। অনেক বেশি প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন, মিনারেল পাবেন। তবে সমস্যা হয় স্বাদ–গন্ধ নিয়ে। কালো, বাদামি বা লাল চালের ভাতে বাদামের মতো গন্ধ থাকে, বন্য চালের ভাতে থাকে মাটির গন্ধ। ফলে অনেকেই খেতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে সাদা ভাত খান, তারও অনেক উপকার আছে।

ভাতে রয়েছে স্টার্চ, শরীরকে শক্তি জোগাতে যার বিরাট ভূমিকা। আছে ফাইবার, পেটের সমস্যা কমাতে, ওজন–সুগার–রক্তচাপ বশে রাখতে যার ভূমিকা আছে।

•    ভাত সহজে হজম হয়। ফলে জ্বর, পেটের গোলমাল বা অন্য অসুখ–বিসুখের মধ্যেও খেতে পারেন। ডায়াবেটিসেও সে ব্রাত্য নয়। ফাইবারসমৃদ্ধ শাক–সবজি–স্যালাড, ডাল, মাছ ইত্যাদি থাকলে এক–আধ কাপ ভাত খাওয়া যেতে পারে।

•    ভাত হজম হয় ধীরে, হোল গ্রেইন চালের হলে আরও ধীরে। ফলে পেট অনেকক্ষণ ভরা থাকে। তা ছাড়া ভাত খেলে সেরেটোনিন নামে হরমোনের ক্ষরণ বাড়ে বলে অল্প খেলেও শরীর–মন তৃপ্ত থাকে। ভুলভাল খাবারের প্রতি আকাঙ্খা কম জাগে।

•    ভাতে রয়েছে প্রোটিন ও বিভিন্ন ভিটামিন–মিনারেল। বিভিন্ন খাবারের সঙ্গে মিলিয়ে–মিশিয়ে খেলে সে উপকার আরও বাড়ে। যেমন বিনসের সঙ্গে খেলে বেশি প্রোটিন পাওয়া যায়। ডাল–তরকারির সঙ্গে লেবু মিশিয়ে খেলে পাওয়া যায় প্রচুর আয়রন। তবে এত উপকার পেতে গেলে ভাত রান্না করতে হয় সঠিকভাবে।

ভাত রান্নার নিয়ম

•    চাল বেশি ধুলে ভিটামিন বি-র অনেকটা পানির সঙ্গে বেরিয়ে যায়। কাজেই দু–এক বারের বেশি চাল ধুবেন না।

•    চাল ভিজিয়ে রেখে ওই পানিতেই কম আঁচে ঢাকনা দিয়ে রান্না করুন। এমন মাপে পানি দিন যাতে ফ্যান ফেলতে না হয়। তাহলে ভিটামিন–মিনারেলরা ভাতের মধ্যেই থেকে যাবে। ফুটন্ত পানিতে ভেজানো চাল দিয়েও রাঁন্না করতে পারেন। চাল নরম হয়ে গেলে আঁচ বন্ধ করে ঢাকনা দিয়ে রাখুন। বাকিটা ভাপেই হয়ে যাবে। প্রেশার কুকারেও রান্না করা যায়।

•    ভাপে রাখা ভাত যত ধীরে ধীরে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় আসে ততই তার মধ্যে থাকা স্টার্চ রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চে পরিণত হয় ও সেই ভাত খেলে অল্পেই পেট ভরে যায় বলে ওজন কমার সুরাহা হয়। কিছু ক্যানসারের আশঙ্কাও কমে, জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

ভাত ঘুম ও ওজনবৃদ্ধি

মেডিসিনের চিকিৎসক সুকুমার মুখার্জি জানান, কাজের সময় ভাত খেলে ঘুম পায় বলে যে জনশ্রুতি আছে, তা অমূলক। সকালে ভাল করে কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খেলে ও দুপুরে পেট খানিকটা খালি রেখে ভাত খেলে খুব একটা ঘুম পায় না, যদি না রাতে ঘুমের সমস্যা হয়ে থাকে। দ্বিতীয় কথা হল, ঘুম পেলেও কোনও ক্ষতি নেই। কারণ দুপুরে ভাত খেয়ে ১৫–৩০ মিনিট ঘুমোলে ওজন তো বাড়েই না বরং দিনের দ্বিতীয়ভাগে কাজে উৎসাহ বাড়ে। করোনা–কালে হাতে একটু বেশি সময় থাকলে তা ঘুমিয়ে উসুল করতে পারেন।


সূত্র: আনন্দবাজার।