জাঁকজমকপূর্ণ নানা আয়োজনে পালিত হলো পাবনা জেলার ১৯২ তম জন্মদিন

জাঁকজমকপূর্ণ নানা আয়োজনে পালিত হলো পাবনা জেলার ১৯২ তম জন্মদিন

ছবি: প্রতিনিধি

নানা আয়োজন ও জাঁকজমকভাবে পাবনাবাসীসহ বিভিন্ন সংগঠন পালন করলো পাবনা জেলার ১৯২ তম জন্মদিন। দিনটি উপলক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক গোলাম ফারুক প্রিন্স এমপি পাবনাবাসীর পক্ষে শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৯ টায় পাবনা শহরের প্রধান সড়কে জেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয় চত্বরে কেক কাটেন এবং আতশবাজি করে শহরবাসী আনন্দ উপভোগ করে। মুহূর্মুহু করতালি দিয়ে শহরবাসী আনন্দ আত্মহারা হয়ে পড়ে।

এসময় জেলা দপ্তর সম্পাদক এডভোকেট আহাদ বাবু, উপজলো আওয়ামীলীগরে সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ রাসেল আলী মাসুদ, পৌর আওয়ামীলীগ দপ্তর সম্পাদক সাইফুল ইসলাম পলাশ, পৌর আওয়ামীলীগ নেতা কামরুজ্জামান রকি, জেলা শ্রমিক লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কুমার সাহা,জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান সুইট, জেলা যুব লীগের আহবায়ক কমিটির কার্যকরী সদস্য ফাইমূল কবীর শান্ত, সদস্য ওসমান গনি, জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মনিরুজ্জামান রাসেল, সদর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান শেখ, সেচ্ছাসেবকলীগ নেতা রাজিব আহমেদ, ফিরোজ খান, পল্লবসহ বিপুল সংখ্যক  লোক উপস্থিত ছিলেন। 

ব্যতিক্রমী আয়োজনে পাবনার ১৯২ তম জন্মদিন পালন করে বাংলাদেশ ইয়াংস্টার সোস্যাল অর্গানাইজেশন- বায়সো, পাবনা জেলা শাখা।

“পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গিকার, বাইসো আমার অহংকার” এই প্রত্যয়কে সামনে রেখে বায়সো পাবনা জেলা শাখার সভাপতি সুমাইয়া আফরিন তন্নির সমন্বয়ে বায়সোর একঝাক তরুণ সেচ্ছাসেবক পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ এবং রেলওয়ে স্টেশন’র প াশের অধিক সুবিধা বি ত শিশু-কিশোরদের সাথে মধ্যাহ্নভোজ এর মাধ্যমে পাবনার ১৯২ তম জন্মদিনের আনন্দ ভাগাভাগি করেছে। এর আগে কেক কাঁটার মধ্য দিয়ে জন্মদিনটি পালিত হয়।

উল্লেখ্য, ১৬ অক্টোবর, পাবনাবাসীর প্রাণের ঠিকানা পাবনা জেলার ১৯২তম জন্মদিন।১৭৯৩ সালে যখন চিরস্থায়ী বন্দবস্ত ব্যবস্থার প্রবর্তন হয় তখন দেশের আয়তন ও সীমারেখার পরিবর্তন ঘটে এবং রাজশাহীর অন্তর্ভুক্ত হয় পাবনা। ১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দে ১৬ অক্টোবর সরকারের ৩১২৪ স্মারকে জেলা হিসেবে পাবনা গঠিত হয়। ১৮৫৫ এর ১২ জানুয়ারি ময়মনসিংহ জেলা সিরাজগঞ্জ থানা পাবনা জেলার অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৮৭৫ এর ১৪ জানুয়ারি রায়গঞ্জ থানা পাবনার অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৮৭১ পর্যন্ত বর্তমান কুষ্টিয়া জেলা কুমারখালী এবং খোকসা থানা পাবনা জেলার অন্তভূক্তছিল। ১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দে পাংশাকে পাবনা থেকে আলাদা করে ফরিদপুর জেলার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ সময় কুমারখালী ছিল দক্ষিণা লের অন্যতম সমৃদ্ধ শহর, কুমারখালী ছিল পাবনা জেলার একটি মহকুমা।

১৮৭৮ সালের ১৯ জানুয়ারি জেলায় প্রথম রেলপথ স্থাপিত হয়। প্রথম মোটর সার্ভিসের প্রবর্তন করা হয় ১৯২৬ সালে। ১৯৪০ সালের পর পাবনা শহরে রিকশার প্রচলন ঘটে। হোসিয়ারী শিল্প, তাঁত শিল্প, কাঁচি শিল্প, বেনারসি-কাতান সহ অন্যান্য শিল্প সমৃদ্ধ এই জেলা একসময়ে ছিল দেশের অন্যতম বাণিজ্যকেন্দ্র। ৩৫১ দশমিক ৫০ বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট পাবনা জেলা বর্তমানে ৯টি উপজেলা ও ৭৩টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত।

গত ২০১০ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী জেলার মোট জনসংখ্যা ছিল ২৪ লাখ ৯৭ হাজার জন। এর মধ্যে পুরুষ ১২ লাখ ৫০ হাজার এবং নারী ১২ লাখ ৪৭ হাজার জন।পাবনার উপজেলাগুলো হলো পাবনা সদর,আটঘরিয়া,ঈশ্বরদী, বেড়া,সুজানগর,সাঁথিয়া,চাটমহর,ভাংগুড়া ও ফরিদপুর।

ইতিহাস ঐতিহ্য সংস্কৃতিতে পাবনা জেলার রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন ভাষা সংগ্রাম আর সুমহান স্বাধীনতা সংগ্রামে এই জেলার মানুষদের বীরত্বপূর্ণ অবদান ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। বিশ্ব বরেণ্য কবি-সাহিত্যিক, রাজনীতিক সাংবাদিক, শিল্প উদ্যোক্তা, বরেণ্য ব্যক্তিত্ব, বিজ্ঞানী, অভিনেতা-অভিনেত্রী পাবনা তথা গোটাদেশকে বিশ্ব দরবারে স্বগৌরবে তুলে ধরেছে।

উপমহাদেশের প্রখ্যাত নায়িকা মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের জন্মভুমি পাবনা। এ পাবনায় রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সব দর্শনীয় স্থান ও কালের স্বাক্ষী হয়ে থাকা ঐতিহাসিক স্থাপনা।।

পাবনার হেমায়েতপুরে রয়েছে বাংলাদেশের একমাত্র মানসিক হাসপাতাল, সনাতন ধর্মালম্বীদের তীর্থস্থান শ্রী শ্রী অনুকুল ঠাকুরের জন্মভুমি । মসজিদ মন্দির জমিদারী আমলের বাড়ী ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে পর্যটকদের নজরকাড়ে।

বৃটিশ স্থাপত্যের টেকসই নিদর্শন দেশের একমাত্র বৃহত্তর মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত রেল সেতুর সাথে বর্তমানে লালন শাহ সেতু যুক্ত হয়ে এক সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হবার হাতছানি দিচ্ছে।ছুটির দিন বা বিশেষ দিনে দূর দূরান্তে পর্যটক বেড়াতে আসে। সরকারিভাবে উদ্যোগ নিলে দেশের এই স্থানটি দেশের অন্যতম পর্যটন স্পট।

বিশ্ব দরবারে স্বগৌরবে তুলে ধরার দেশের একমাত্র পারমাণবিক প্লান্ট পাবনায় অবস্থিত। স্কুল কলেজ, বিশেষায়িত হাসপাতাল শিল্প কলকারখানার যে বিকাশ রয়েছে তা পাবনাবাসীর জন্য আশির্বাদস্বরূপ।

কিন্তু দীর্ঘদিন যাবত পাবনা বাসীর প্রাণের দাবীগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে না। ঢাকা পাবনা সরাসরি ট্রেন যোগাযোগ, মেডিকেল কলেজ চালু,যানজট নিরসন, ইছামতী খনন,বিনোদন পার্ক এসকল পাবনাবাসীর প্রাণের দাবী।

এছাড়া পাবনা পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করার দাবী পাবনাবাসীর এবং সময়ের সাথে সাথে দেশের যে বিকাশ হচ্ছে তাতে দ্বিতীয় পদ্মা সেতুতে পাবনা জেলার সংযুক্তিসহ বেশ কয়েকটি দাবী পাবনার জনমানুষের মুখে উচ্চারিত হচ্ছে।এই সেতু হলে রাজধানীর সাথে পবনা সহ কয়েকটি জেলার যাতায়াতের দূরত্ব বর্তমান দূরত্বের চেয়ে ১০০ কিলোমিটার কমে যাবে।

পাবনা শহরের পেটের ভেতর দিয়ে বয়ে চলা ইছামতি আজ মৃত্য পায়। এক সময় বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ যে ইছামতি দিয়ে রাজার মতন যেতেন লিখতেন কবিতা। সেই ইছামতি এখন ময়লা আবর্জনায় ভরা।অথচ আজ থেকে ৩৫ থেকে ৪০ বছর আগেও নদীতে নৌকা চলত। এখন পাবনার মানুষের সবচেয়ে বড় দাবী ইছামতি খনন।

পাবনার একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক লেখক কলামিস্ট রণেশ মৈত্র জানান,“ ইছামতি নদী খনন করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে হবে। শহরকে সুন্দর করতে ইছামতি নদী খননের বিকল্প নেই।” পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমান বলেন,“ ব্রিটিশ আমলের প্রাচীন জেলা হিসেবে পাবনা এখনো কাঙ্খিত মানে পৌঁছায়নি। এব্যাপরে পাবনাবাসীকে আরো বেশি উদ্যোগ নিতে হবে।”  মাছরাঙা টেলিভিশনের ব্যুরো চিফ সাংবাদিক উৎপল মীর্জা বলেন, পাবনা বাসীর যৌক্তিক দাবী বাস্তবায়ন করতে হবে। রাজধানীর সাথে পাবনার সরাসরি যোগাযোগ হচ্ছে না।এতে কাঙ্খিত সেবা থেকে বি ত হচ্ছে মানুষ। এ সকল প্রাণের দাবী বাস্তবায়নে সোচ্চার হচ্ছে পাবনাবাসী।

শিকড়ের মায়া জড়ানো আবাস ভূমিকে অপরূপ সুন্দর করে গড়ে তুলতে কে না চায়।এসব জন দাবী পূরণ হলে পাবনা যোগাযোগ ও অর্থনীতিক ভাবে নতুন দিনের সূচনার পাশাপাশি এসব স্বপ্ন বাস্তবায়ন হলেই একটি অপরূপ সুন্দর শহর হবে পাবনা।