কুবিতে নিয়োগ পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হয়েও চাকরি

কুবিতে নিয়োগ পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হয়েও চাকরি

ফাইল ছবি।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরও এক প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন স্থানীয় এক প্রভাবশালীর প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে এ লঙ্কাকাণ্ড ঘটিয়েছে। বিষয়টি উপাচার্য স্বীকার করলেও এক পদে ফেল করায় অন্য পদে দিয়েছেন বলে গোঁজামিল দিয়ে দায় এড়িয়ে যান। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী ফেল করার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ঐ প্রার্থী অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার টাইপিস্টের ব্যবহারিক পরীক্ষায় ফেল করায় কম্পিউটার টাইপিস্টের যোগ্যতা নেই বলে তাকে অফিস সহায়ক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আর অভ্যন্তরীণ আপগ্রেডেড যে পদ ওটাও স্থায়ী এবং একই পদ। যদি শূন্য পদে অভ্যন্তরীণ লোকদের নিয়োগ দিই তাহলে নতুন লোক নিয়োগ দিতে পারতাম না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ০৯ মার্চ কম্পিউটার অপারেটর, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার টাইপিস্ট পদে নিয়োগ প্রত্যাশীদের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ব্যবহারিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হয় ১১ এবং ১৫ মার্চ। এরপর গত ১৮ অক্টোবর এই তিন পদে চূড়ান্ত নিয়োগ প্রাপ্তদের নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগ চূড়ান্ত হওয়ার পর থেকেই এই নিয়োগের নানা অসঙ্গতি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এর মধ্যে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার টাইপিস্ট পদে ৫ নম্বর রোলধারী প্রার্থী নিয়োগের জন্য অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় ফেল করলেও প্রকাশিত ফলাফলে তাকে পাস দেখিয়ে অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নাম প্রকাশ না করা শর্তে নিয়োগ কার্যক্রম সংক্রান্ত এক সদস্য বিষয়টি স্বীকার করেন। 

অন্য আরেক সূত্র জানায়, শুধু একজন না এমন আরও চার জন ফেল করার পরও তাদের নিয়োগ দেয়া হয়। এদিকে তাকে যে পদে দেয়া হয়েছে সে পদে ওই প্রার্থী আবেদনই করেননি বলে জানা যায়। এছাড়াও ফেল করার বিষয়টি উপাচার্য স্বীকার করলেও প্রকাশিত ফলাফলের তালিকায় তাকে পাস দেখানো হয়েছে। পাস করা প্রার্থী থাকার পরও ফেল করা প্রার্থীদের নিয়োগ দেয়ায় অন্য প্রার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে কর্মচারী নিয়োগের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পরীক্ষায় ফেল করার পরও প্রার্থীকে উর্ত্তীণ দেখিয়ে চূড়ান্ত নিয়োগ প্রদানের ঘটনা সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নষ্ট হয়েছে। এ নিয়োগ সংক্রান্ত সকল তথ্য প্রকাশ করে যে সকল প্রার্থীদের অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাদের নিয়োগ বাতিল করতে হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষক বলেন, এ কাজের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেজ ক্ষুন্ন হয়েছে, এটি একটি গর্হিত অপরাধ। এ অসঙ্গতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ প্রক্রিয়ার উপর মানুষ আস্থা হারাবে। যারা এ ধরণের কাজের সাথে জড়িত তাদের শাস্তি হওয়া উচিত।

এছাড়াও এ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অভ্যন্তরীণ প্রার্থীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের। তাদের দাবি, বেশ কয়েকজন কর্মচারী যথাযথ অনুমোদন নিয়ে এ নিয়োগ পরীক্ষা আবেদন করে ব্যবহারিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মৌখিক পরীক্ষায়ও অংশগ্রহণ করে। কিন্তু চূড়ান্ত পরীক্ষায় অধিকাংশ অভ্যন্তরীণ প্রার্থীদের বাদ দেওয়া হয়। আর যে কয়েকজনকে দেওয়া হয় তাদের ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠ্যতা অনুসরণ না করে অপেক্ষাকৃত কনিষ্ঠ প্রার্থীকে নিয়োগ প্রদান করে জ্যেষ্ঠ্য প্রার্থীদের বঞ্চিত করা হয়েছে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী সমিতি উপাচার্যের নিকট স্মারকলিপি দিয়েছে।

ব্যবহাররিক পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলেও ফলাফলে পাস দেখিয়ে চূড়ান্ত নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে নিয়োগ বোর্ডের সদস্য সচিব এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. আবু তাহের বলনে “নিয়োগ কমিটির সকল সদস্যের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এর চাইতে বেশি কিছু মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।