ঠিকাদারের স্বেচ্ছাচারিতায় জিম্মি কুবির ‘শেখ হাসিনা হল’ ; ভোগান্তিতে ছাত্রীরা

ঠিকাদারের স্বেচ্ছাচারিতায় জিম্মি কুবির ‘শেখ হাসিনা হল’ ; ভোগান্তিতে ছাত্রীরা

নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হলেও ভবনের অর্ধেক কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) শেখ হাসিনা হলের নির্মাণ কাজ নির্ধারিত সময়ের তিন গুণ পার করলেও এখন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। টেন্ডার বাতিল করে নতুন টেন্ডার আহ্বান করা কথা ছিল, কিন্তু এ নিয়ে প্রশাসনের কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ কিংবা সুষ্ঠু তদারকির দেখা মেলেনি। 

জানা যায়, ২০১৭ সালের মার্চে টেন্ডার আহ্বান করে আবদুর রাজ্জাক জেবিসিএ নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে প্রকল্পটির কাজ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তাদের ১৮ মাস সময় বেঁধে দেওয়া হয়, কিন্তু ৪৩ মাস অতিবাহিত হলেও প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এখন পর্যন্ত অতিরিক্ত তিন গুণ সময় অতিবাহিত হয়েছে, কিন্তু ভবনের তৃতীয় তলার ছাদ ঢালাই সম্পন্ন করলেও বাকি রয়ে গেছে প্রায় অর্ধেক কাজ। কাজ নিয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প তদারক জাহাঙ্গীর আলম বিলম্বিত হওয়ার জন্য উল্টো প্রশাসনের ওপরই দায় চাপান। ফলশ্রুতিতে ছাত্রীরা আবাসন সমস্যায় ভুগছে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবি, প্রশাসনের সুষ্ঠু তদারকির অভাবে অদক্ষ জনবল আর স্বল্প পরিমাণে শ্রমিক দিয়ে কাজ করানোর কারণে প্রকল্পের অগ্রগতি হচ্ছে না। কিন্তু এই অনিয়মের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দপ্তর কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি। বরং বিভিন্ন মেয়াদে কয়েকধাপ সময় বৃদ্ধি করেও কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি দেখাতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। যার ফলে ছাত্রীদের দীর্ঘদিনের আবাসন সমস্যা থেকেই যাচ্ছে। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের তিন তলার কাজ আংশিক সম্পন্ন হলেও সেটি অপূর্ণাঙ্গ। যে পরিমান শ্রমিক দরকার তার বিপরীতে হাতেগোনা কয়েকজন শ্রমিক দিয়ে চলছে প্রকল্পটি। অনেক সময় শ্রমিকের অভাবে বন্ধ থাকতে দেখা যায় নির্মাণ কাজ। জানা যায়, মূল প্রকল্পের ঠিকাদারি আবদুর রাজ্জাক জেবিসিএ নামের একটি প্রতিষ্ঠান নিলেও তৃতীয় ব্যক্তি জাহাঙ্গীর আলমের তদারকিতে চলছে প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ।

বিলম্বিত হওয়া প্রকল্পের সার্বিক অবস্থা নিয়ে কথা বলতে গেলে জাহাঙ্গীর আলম স্বীকার করেন আমরা নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারি নাই। কারণ হিসাবে তিনি বলেন প্রকল্পের চারপাশে সীমানা প্রাচীর ছিল না, যা পাশ ও বাস্তবায়ন হতে সময় লাগছে। এছাড়াও জটিল নকশা এবং করোনার কারণে কাজের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তবে আগামী জানুয়ারির মধ্যে আমরা এ প্রকল্প প্রশাসনকে বুঝিয়ে দিতে পারব।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এর আগেও তিনি দুই-তিন মাসের ভিতর কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও ৪৩ মাস অতিবাহিত হলেও প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারেনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. মোঃ আবু তাহের নিউজজোনকে জানান, শেখ হাসিনা হলের কাজ নিয়ে ইউজিসি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বলেছি। তারা বিভিন্ন মেয়াদে সময় বৃদ্ধি করলেও কাজের যথাযথ অগ্রগতি দেখাতে ব্যার্থ হয়েছে। এর মধ্যে আমরা প্রতিষ্ঠানটিকে জরিমানা ও করেছি। তবে সর্বপরি এখন আমাদের লক্ষ হল যে কোন উপায়ে কাজ বুঝে নেয়া। তাদের সাথে কথা হয়েছে। আগামী দুই তিন মাসের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করছি।