করোনাকাল-স্বাস্থ্য সম্মত আচরনই রক্ষাকবচ

করোনাকাল-স্বাস্থ্য সম্মত আচরনই রক্ষাকবচ

ডা. মুহাম্মদ আব্দুস সবুর

ডা. মুহাম্মদ আব্দুস সবুর-

সারা পৃথিবী এখন করোনা অতিমারীতে পর্যদুস্ত। বিশ্বের ২২০ টি দেশ ও অঞ্চলে আক্রান্ত হয়েছেন ৬ কোটি ১৪ লাখ ৯২ হাজার ৫২৭ জন আর মারা গেছেন ১৪ লাখ ৪১ হাজার ১০৭ জন। বাংলাদেশে শনাক্তের সংখ্যা ৪ লাখ ৫৮ হাজার ৭১১ জন আর মৃত্যু হয়েছে ৬ হাজার ৫৪৪ জনের।  পৃথিবীর অনেক দেশই করোনার প্রথম ঢেউ সামলানোর পর এখন মুখোমুখি দ্বিতীয় ধাক্কার। আমাদের দেশে প্রথম ঢেউই শেষ হতে না হতেই সংক্রমণ আবর উর্ধ্বমুখী হওয়া শুরু হয়েছে। এটাকে দ্বিতীয় ঢেউ বলার চেয়ে প্রথম ঢেউয়ের ধারাবাহিকতা বলা যায়। গত ১২ দিন ধরে প্রায় প্রতিদিন ২ হাজারের বেশী শনাক্ত হচ্ছে। শীতকালে করোনা সংক্রমণ বেশী হবার যে আশংকা করা হয়েছিল তা সত্যি হতে চলেছে।  

করোনার কোন সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা এখন পর্যন্ত জানা নেই। নেই কোন প্রতিষেধক টীকাও।  যদিও মৃত্যু হার অনেক কম, কিন্তু প্রতিটি মৃত্যই অনাকাংক্ষিত। মৃতের স্বজনদের কাছে যেটি কোন সংখ্যা বা হার না, সেটি অপূরনীয় ক্ষতি। তাই আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা হওয়ার দরকার শনাক্ত এড়ানো আর সেটিই মৃত্যু আটকাতে পারে। 

করোনা যুদ্ধে এখন পর্যন্ত আমাদের জানা অস্ত্র স্বাস্থ্য সম্মত আচরণ। দূরত্ব বজায় রাখা সংক্রমণ প্রতিরোধের প্রথম ধাপ। তারপর রয়েছে বাইরে বেরুলে মাস্ক ব্যবহার। আর ঘন ঘন সাবন পানি দিয়ে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া। দূরত্ব বজায় রাখার সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি যতদুর পারা যায় স্ব-স্ব গৃহে অবস্থান। তবে যেহেতু জীবিকার প্রয়োজনে অনেককেই বাইরে বের হতে হয়, তাই প্রত্যেকের প্রচেষ্টা হওয়া দরকার নিতান্ত প্রয়োজন না হলে বের না হওয়া। সবাই মিলে অপ্রয়োজনে বাইরে বেরুনো বন্ধ করলে প্রয়োজনীয় দূরত্ব বজায় রাখা খুবই সম্ভব। তবে অপ্রয়োজনে বাইরে বেরুলে দূরত্ব বজায় রাখা অসম্ভব হয়ে ঝুকি বাড়তে পারে সবার। যেহেতু করোনাভাইরাস শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ছড়ায়, তাই বাইরে বেরুলে সার্বক্ষণিক নাক মুখ ঢেকে  মাস্ক পরা সংক্রমিত হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারে।  মাস্ক পরা, সর্বক্ষণ পরা ও সঠিকভাবে নাক ‍মুখ ঢেকে পরা গুরুত্বপূর্ণ। মাস্ক পরে কথা বলার বা খাবারের প্রয়োজনে বা অন্য কোন কারণে মাস্ক নামিয়ে রাখলে পুরো উদ্দেশই ব্যর্থ।

সম্প্রতি সরকারিভাবে মাস্ক পরা নিয়ে বেশ কড়াকড়ি হচ্ছে। সবাই যদি বাইরে থাকা অবস্থায় সর্বক্ষণ মাস্ক পরে থাকেন তাহলে সংক্রমণ এড়ানো সম্ভব। তারপর রয়েছে সাবান পানি দিয়ে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে কিছুক্ষণ পর পর হাত ধোয়া। সাবান পানির পরিবর্তে স্যানিটাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে। যেহেতু আমরা হাত দিয়ে অনেক কিছু স্পর্শ করি, তাই সংক্রমণ প্রতিরোধে হাত পরিচ্ছন্নতা কার্যকরী।

তাহলে দেখা যাচ্ছে তিনটি স্বাস্থ্য সম্মত আচরণই করোনাকালে আমাদের জন্য রক্ষাকবচ। এগুলো আমরা যতটুকু সবাই মিলে মেনে চলবো তার উপর নির্ভর করছে এই করোনা অতিমারীতে আমাদের শনাক্ত ও মৃত্যু ঝুঁকি। আসুন সকলের সম্মিলিত স্বাস্থ্য সম্মত আচরণ দিয়ে আমরা করোনাকে মোকাবিলা করি।  

লেখক: জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও 
সম্পাদক: নিউজজোনবিডি ডট কম।