বাস্তবের ‘মোগলি’!

বাস্তবের ‘মোগলি’!

দেখতে অন্যরকম বলে গ্রামের মানুষের কটাক্ষ শুনতে হয় এলির।

হলিউডের বিখ্যাত সিনামা ‘দ্যা জঙ্গল বুক’। সেখানে মোগলী নামে এক বালকে দেখা যায় সে জঙ্গলে পশুদের সাথে বসবাস করত। বাস্তবেও এমন এক মোগলির সন্ধান পাওয়া গেছে মালয়েশিয়ায়।

তাকে দেখতে একেবারেই আলাদা। তাই গ্রামের মানুষের কাছে রীতিমতো বিদ্রুপের পাত্র সে। ২১ বছর বয়সি বাস্তবের ‘মোগলি’ জেঞ্জিম্যান এলি রুডইয়ার্ড কিপলিংয়ের গল্পের নায়কটির মতোই জঙ্গলে গিয়ে বেশির ভাগ সময় কাটায়। ফলমূল খায়। সন্তানের এমন জীবন কোন মা-ই বা চায়? সম্প্রতি এক টিভি চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেকথা জানিয়েছিলেন তিনি। আর এবার সেই চ্যানেল দাঁড়িয়েছে এলি ও তার মায়ের পাশে। শুরু হয়েছে ক্রাউন্ডফান্ডিং। লক্ষ্য তাদের জীবনযাপনের দুর্দশা ঘোচানো।

‘আফ্রিম্যাক্স’ নামের স্খানীয় টিভি চ্যানেলটিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এলির মা জানিয়েছিলেন, তিনি নিজের প্রথম পাঁচটি সন্তানকে হারিয়েছিলেন। একটা সময় তাঁর মনে হয়েছিল, এজীবনে হয়তো মাতৃত্বের স্থায়ী সুখ তাঁর অধরাই থেকে যাবে। সেই সময়ই ১৯৯৯ সালে তাঁর জীবনে আসে এলি। কিন্তু তবুও সেই সন্তানের জীবনে কোনও সুখের জোগান করতে পারেননি মা। সে যে একেবারে ‘আলাদা’। গ্রামের লোকেরা তাকে তাড়া করে, ঢিল ছোঁড়ে। তাদের উদ্দেশে অদ্ভুত মুখভঙ্গি করে এলি। আসলে তার একটা অসুখ আছে। মাইক্রোসেফালি নামের এই অসুখে বাচ্চার মাথা শরীরের তুলনায় অনেকটাই ছোট থাকে। এই কারণে ছোট থেকে সে কথাও বলতে পারে না। ফলে সব মিলিয়ে দ্রুতই সকলের বিদ্রুপের শিকার হয়ে ওঠাটা যেন ভবিতব্যই হয়ে ওঠে।

মায়ের আক্ষেপ সন্তানকে স্কুলেও পাঠাতে পারেননি তিনি। পরিবারের কোনও উপার্জনও নেই সেই অর্থে। তাঁর কথা শোনার পর এবার ওই চ্যানেলের পক্ষেই পদক্ষেপ করা হয়েছে এলি ও তার পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। খোলা হয়েছে ‘গোফান্ডমি’ নামের এক পেজ। সেই পেজে চ্যানেল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে লেখা হয়েছে, ‘‘এই একলা মা ও তাঁর সন্তানকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসুন। কোনও উপার্জন নেই। তাই খাদ্যের অভাবে ভুগছে পরিবারটি। এই তরুণটিকে জঙ্গলে গিয়ে ঘাস খেতে হয় ক্ষুধার তাড়নায়। আসুন এই ছেলেটি ও তার মায়ের জীবন বাঁচাই।’’

এই আবেদনে মিলেছে অভূতপূর্ব সাড়া। এরই মধ্যে উঠে গিয়েছে প্রায় ৪ হাজার ডলার। বহু মানুষের আবেগপ্রবণ মন্তব্যও রয়েছে পেজে। তার মধ্যেই একজন লিখেছেন, ‘‘ওর মধ্যে কী বিশেষত্ব আছে, সেটা কেবল আবিষ্কার হওয়ার অপেক্ষায়। ঈশ্বর নিশ্চয়ই ওর মধ্যে কোনও বিশেষ গুণ দিয়েছেন।’’