এইডস্: ভালো-মন্দের বাংলাদেশ

এইডস্: ভালো-মন্দের বাংলাদেশ

প্রতীকী ছবি।

ডা. মুহাম্মদ আব্দুস সবুর:-

সারা বিশ্বের এবং প্রত্যেক বছরের মতো এবারও ০১ ডিসেম্বর বাংলাদেশে পালিত হলো বিশ্ব এইডস্ দিবস। এইচ আইভি ভাইরাসের সংক্রমণ ও এইডস্ রোগী আমাদের দেশে অনেক কম। ১৯৮৯ সালে প্রথম শনাক্তের পর এখন পর্যন্ত শনাক্তের সংখ্যা ৮ হাজার ৩২ জন। অনুমান করা হয় সংক্রমিত ব্যক্তি রয়েছে ১৪ হাজার। সাধারণ মানুষে সংক্রমণের হার ০.০১ শতাংশ। ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীতে সংক্রমনের হার ৩.৯ শতাংশ। যৌনকর্মী, প্রবাসী, শিরার মাধ্যমে মাদক গ্রহণকারী, দূর-পল্লার যানবাহনের চালক, পুরুষ সমকামী ইত্যাদি ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী। বাংলাদেশে সংক্রমণের নিম্ম হরের অরেক কারণের  মধ্যে প্রধান হচ্ছে মুসলমান প্রধান দেশ, ফলে অধিকাংশ পুরুষ মুসলমানী করা। গবেষণায় প্রমাণিত যে পুরুষের মুসলমানী যৌন কাজরে সময় মহিলাদের কাছে থেকে সংক্রমিত হবার ঝুঁকি ৬০ শতাংশ কমিয়ে দেয়। এর সাথে রয়েছে আমাদের রক্ষণশীল সমাজব্যবস্থা, যেখানে বহুগামিতা, বিবাহ বহির্ভুত যৌন সম্পর্ক, সমকামিতা অগ্রহণ যোগ্য। পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে পরিচালিত কার্যক্রমও যথেষ্ঠ ভূমিকা রাখছে। এসবই এইডস্ নিয়ে বাংলাদেশের জন্য ভালো খবর।

খারাপ খবর হচ্ছে পৃথিবীর অল্প কয়েকটি দেশের মাঝে রয়েছে বাংলাদেশ, যেখানে সংক্রমণ থামানো যায়নি বরং বেড়ে চলেছে ক্রমাগতভাবে। বিগত বছরগুলোর পরিসংখ্যান বলছে প্রতি বছরই সংক্রমিত ও মৃত্যু বাড়ছে। ২০১২ সালে সংক্রমিত হয়েছিলেন ৩৩৮ জন, ২০১৩ সালে ৩৭০ জন, ২০১৪ তে ৪৩৩ জন, ২০১৫ তে ৪৬৯ জন, ২০১৬ তে ৫৭৮ জন, ২০১৭ তে ৮৬৫ জন, ২০১৮ তে ৮৬৯ জন, ২০১৯ এ ৯১৯ জন আর ২০২০ এ ৬৮৫ জন।

এই রোগে মৃত্যুবরণ করেছেন ২০১৪ তে ৬৫ জন, ২০১৩ তে ৮২জন, ২০১৪ তে ৯১ জন, ২০১৫ তে ৯৫ জন, ২০১৬ তে ১৪১ জন, ২০১৭ তে ১২৫ জন, ২০১৮ তে ১৪৮ জন, ২০১৯ এ ১৭০ জন আর ২০২০ এ ১৪১ জন।

২০২০ সালের পরিসংখ্যানে নিম্ম হার করোনার কারণে তথ্য সংগ্রহ ঘটতিজনিত কিনা তা নিয়ে সন্দেহ করার কারণ আছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও জানাচ্ছে ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশে অনুমিত সংক্রমণ ও মৃত্যু ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। যদিও নীতিনির্ধারক ও কর্মসূচী ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িতরা দাবী করছেন যে, লক্ষমাত্রা অনুযায়ী ২০৩০ সালে সংক্রমণ শূণ্যের কোটায় নামানো সম্ভব হবে, তবে সেটিতে ভরসা করার মতো পরিসংখ্যান নেই।

এর আগে লক্ষমাত্র ছিল ২০২০ সালের মাঝে ৯০-৯০-৯০ অর্থ্যাৎ ৯০ শতাংশ সংক্রমিত ব্যক্তি তাদের পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন, ৯০ শতাংশ সংক্রমিত চিকিৎসা গ্রহণ করছেন আর চিকিৎসা গ্রহণকারীদের মাঝে ৯০ শতাংশের ভাইরাস-ভার নিয়ন্ত্রনে আছে।

বাংলাদেশে এর বিপরীতে অর্জন এখন ৫৭ শতাংশ সংক্রমিত ব্যক্তি তাদের পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন, ৭৬ শতাংশ সংক্রমিত চিকিৎসা নিচ্ছেন, ভাইরাস-ভারের অবস্থার চিত্র জানা নেই।

সাধারণ মানুষের সংক্রমণের হার নগণ্য পরিমাণ ধরে রাখা গেলেও, ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীতে সংক্রমণের মাত্রা বাড়ছে। মনে রাখতে হবে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী সমাজেরই অংশ, ফলে তাদের মাঝে মংক্রমণের হার বাড়লে তা এক সময় সাধারণ মানুষের মাঝেও ছড়িয়ে যাবে। ফলে সংক্রমণের নিম্ম হার নিয়ে সন্তুষ্ট না থেকে ঝুঁকিপূণূ জনগোষ্ঠীর মাঝে সংক্রমণ আটকানোর সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করা আবশ্যক।

লেখক: জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও 
সম্পাদক: নিউজজোনবিডি ডট কম।