পাপুলের স্ত্রী-মেয়ে-শ্যালিকার ৬১৩ ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ

পাপুলের স্ত্রী-মেয়ে-শ্যালিকার ৬১৩ ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ

ফাইল ছবি

লক্ষ্মীপুরের সংসদ সদস্য (এমপি) মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম পাপুলের ও তার সাংসদ স্ত্রীসহ চারজনের ৬১৩টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ ও ৩০.২৭ একর জমি ক্রোক করতে ঢাকা মহানগর দায়রা জজের কাছে আবেদন পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) তদন্ত কর্মকর্তা ও দুদক উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিন স্বাক্ষরিত আবেদনটি বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হয়। 

একই দিন সকালে আদালত থেকে অনুমতি পায় দুদক। চিঠিতে এম পি পাপুল, তার স্ত্রী, শ্যালিকা ও মেয়ের মোট ৮টি ব্যাংকের এমডিকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া অনুরোধ করা হয়েছে।

অর্থ পাচারের অভিযোগে কুয়েতের কারাগারে আটক লক্ষ্মীপুর-২ আসনের এমপি পাপুল, তার স্ত্রী সেলিনা ইসলাম, মেয়ে ওয়াফা ইসলাম ও শ্যালিকা জেসমিন প্রধানের বিরুদ্ধে দুদক মামলা করেছে গত ১১ নভেম্বর। তাদের বিরুদ্ধে ১৪৮ কোটি ২১ লাখ টাকা পাচার করে আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।

ওই এজাহারে বলা হয়, পাপুল তার শ্যালিকা জেসমিনের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও এফডিআরে দুর্নীতির অর্থ জমা করে পরে উত্তোলন করে আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচার করেছেন। আসামিরা এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকসহ পাঁচটি ব্যাংকের হিসাবে ১৪৮ কোটি ২১ লাখ টাকা স্থানান্তর, রূপান্তর, হস্তান্তর করে আত্মসাৎ করেছেন। যা মানিলন্ডারিং বা অর্থ পাচার সংক্রান্ত অপরাধ।

এজাহারে আরও বলা হয়, এনআরবি কমার্শিয়ালসহ তিনটি ব্যাংকে পাপুলের শ্যালিকা জেসমিন প্রধানের নামের পাঁচটি হিসাবে জমা হয় মোট ১৪৮ কোটি ৪১ লাখ ৪৫ হাজার ৯৬১ টাকা। ওই হিসাবগুলোতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তি নগদে অর্থ জমা করেছেন ও কেউ কেউ তাদের ব্যাংক হিসাব থেকে স্থানান্তর করেছেন। মানবপাচার ও বিভিন্ন উৎস্য থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত পাপুলের অর্থই শ্যালিকার হিসাবগুলোতে জমা করা হয়েছে। এনআরবি কমার্শিয়াল, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ও সিটি ব্যাংকে খুলা হয় জেসমিনের নামে পাঁচটি হিসাব।

গত ১১ নভেম্বরে লক্ষ্মীপুর দুই আসনের এমপি শহিদ ইসলাম পাপুল তার স্ত্রীসহ চারজনের বিরুদ্ধে অর্থপাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক। এমপি পাপুলের মেয়ে ওয়াফা ইসলাম, শ্যালিকা জেসমিন আক্তারকে ১৪৮ কোটি টাকার অবৈধ লেনদেন এবং প্রায় ২ কোটি ৩১ লাখ টাকার সম্পত্তি গোপন করার অভিযোগে আসামি করা হয়। 

এক মাস পর অনুসন্ধানে পাওয়া এমপি পাপুল, তার স্ত্রী, শ্যালিকা ও মেয়ের মোট ৮টি ব্যাংকের ৬১৩টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ বা অবরুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। একই সঙ্গে তাদের নামের দেশের বিভিন্ন স্থানের মোট ৩০ দশমিক ২৭ একর জমি ও গুলশানের ফ্ল্যাট এটাচমেন্ট করা হবে বলে জানায় দুদক সূত্র। এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এখন থেকে এসব সম্পদ ও ব্যাংক হিসাব হস্তান্তর, রূপান্তর, বা ব্যবহার করতে পারবেন না পাপুল পরিবার। 

গত কয়েক বছরে মানব পাচারের মাধ্যমে লক্ষ্মীপুর ২ আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম পাপুল ৩৮ কোটি টাকা উপার্জন করেছেন। তার পরিবারের সদস্যদের ১৩ টি ব্যাংকে ৫২৬টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও এফডিআরে সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেনের তথ্য পেয়েছে বলে জানিয়েছে সিআইডি।
 
সম্প্রতি মানব পাচারের অভিযোগে কুয়েতে গ্রেপ্তার সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে সিআইডির অর্থপাচারের অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। 

অন্যদিকে মানবপাচার, ভিসা বাণিজ্য ও অর্থপাচার সম্পর্কিত মামলায় শহীদকে জুনে কুয়েতের কারাগারে বন্দি লক্ষ্মীপুর দুই আসনের সংসদ সদস্য শহিদ ইসলাম পাপুলের বিরুদ্ধে আগামী ২৮ জানুয়ারি কুয়েতের আদালতে রায় হওয়ার কথা রয়েছে।