হোয়াইট হাউস ছাড়ার আগে সৌদিকে অস্ত্র দিতে যাচ্ছেন ট্রাম্প

হোয়াইট হাউস ছাড়ার আগে সৌদিকে অস্ত্র দিতে যাচ্ছেন ট্রাম্প

ডোনাল্ড ট্রাম্প-সৌদি প্রিন্স সালমান

হোয়াইট হাউস ছাড়ার আগে সৌদি আরবের কাছে ৫০ কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রির অনুমোদনের পরিকল্পনা করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। মার্কিন গণমাধ্যমের বরাতে কাতার ভিত্তিক আল-জাজিরা এমন খবর দিয়েছে।

এটাকে ‘নৈতিক অবনমন’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন একজন বিশেষজ্ঞ।

সৌদি আরবের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির পরিকল্পনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দু’টি সূত্র মার্কিন সংবাদ মাধ্যম ব্লুমবার্গকে বলেছে, মঙ্গলবার পররাষ্ট্র দফতর দেশটির সংসদের উচ্চকক্ষ কংগ্রেসকে সৌদি আরবের কাছে ৪৭৮ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির লাইসেন্স ইস্যু করার ব্যাপারে অবগত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে নির্ভুলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম ও বিমান থেকে স্থলে নিক্ষেপের মতো প্রাণঘাতী অস্ত্র।

ব্লুমবার্গ বলছে, কংগ্রেসের কাছ থেকে লাইসেন্স পেলে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র প্রস্তুতকারক কোম্পানি রায়থিওন টেকনোলজিস করপোরেশন এসব অস্ত্র সৌদি আরবের কাছে সরাসরি বিক্রি করতে পারবে।

মার্কিন প্রভাবশালী দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, চুক্তির শর্ত অনুযায়ী- সৌদি আরবেই অস্ত্র উৎপাদন করতে পারবে রায়থিওন টেকনোলজিস করপোরেশন।

গত বছরের শুরুর দিকে এই চুক্তির বিষয়ে প্রথমে আলোচনা হয়। অস্ত্রের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে থেকে ৯৭ মিলিয়ন ডলারের একটি অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা যোগাযোগ ব্যবস্থাও পাবে সৌদি আরব।

মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের অন্যতম প্রধান মিত্র সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের কট্টর সমর্থক রিপাবলিকান দলীয় নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প; মধ্যপ্রাচ্য নীতিতে তার প্রশাসনের শক্তিশালী স্তম্ভ হিসেবে গড়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি আরব সম্পর্ক।

রাজপরিবারের সমালোচক ও নির্বাসিত সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ড, ইয়েমেন যুদ্ধ ও সৌদি আরবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের রেকর্ড নিয়ে বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড় বইলেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সব সময়ই ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

ওয়াশিংটন ডিসির অলাভজনক সংস্থা সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল পলিসির অস্ত্র ও নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিচালক উইলিয়াম হার্টুং বলেছেন, ইয়েমেনে বিমান হামলা চালিয়ে হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক হত্যায় জড়িত সৌদি আরবের কাছে বোমা বিক্রির এটি সময় নয়।

তিনি বলেন, সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে ২৩ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এখন রিয়াদের কাছে পায় ৫০০ মিলিয়ন ডলারের মারণাস্ত্র বিক্রি করছে। যুক্তরাষ্ট্রের এমন পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘনের শামিল হতে পারে।

হার্টুং বলেন, দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার আগ মুহূর্তে ট্রাম্প প্রশাসনের অস্ত্র বিক্রির এসব চুক্তি চরম গর্হিত কাজ। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস এবং নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উচিত এসব চুক্তি যত দ্রুত সম্ভব আটকে দেয়া।

আগামী ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন জো বাইডেন। গত ৩ নভেম্বরের নির্বাচনের আগে প্রচারণা চালাতে গিয়ে নির্বাচিত হলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়ন করবেন বলে অঙ্গীকার করেন।

এর আগে, অক্টাবরে বাইডেন বলেন, বাইডেন-হ্যারিস প্রশাসনের আমলে আমরা যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়ন করবো। একই সঙ্গে ইয়েমেনে সৌদি আরবের যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়ারও ঘোষণা দেন তিনি।

সূত্র : আল-জাজিরা