হল খুলে পরীক্ষা নেওয়ার দাবি ইবি'র ছাত্র সংগঠনগুলোর

হল খুলে পরীক্ষা নেওয়ার দাবি ইবি'র ছাত্র সংগঠনগুলোর

বিশ্ববিদ্যায় শিক্ষক-ছাত্র মিলোনায়তন কেন্দ্র (টিএসসিসি)। ফাইল ছবি

আবাসিক হল ও পরিবহন সুবিধা নিশ্চিত করে পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কমিটির সভায় আবাসিক হল বন্ধ রেখে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরসহ বিভিন্ন বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্তের পর থেকেই এর প্রতিবাদ করে আসছেন তাঁরা। একই দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনগুলোও।

জানা যায়, গত মঙ্গলবার ১১৯তম একাডেমিক কমিটির সভায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে আবাসিক হল বন্ধ রেখে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের আটকে থাকা চূড়ান্ত পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। একইসাথে শিক্ষার্থীদের আবেদনের ভিত্তিতে বিভাগ চাইলে বিভিন্ন বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা গ্রহণের অনুমতিও দেওয়া হয়।
 
তবে আবাসিক ও পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত না করে পরীক্ষায় অংশ নিতে নারাজ শিক্ষার্থীরা। সিদ্ধান্তের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় তুলেছেন তাঁরা। শিক্ষার্থীদের দাবি, শুধু পরীক্ষা দেওয়ার জন্য হঠাৎ করে মেস বা বাসা খুঁজে পাওয়া কঠিন। ফলে পরীক্ষা দিতে এসে শিক্ষার্থীদেরকে ভোগান্তির শিকার হতে হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন জায়গায় থেকে পরীক্ষা দিলে স্বাস্থ্যবিধি মানা ও নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। তাই আবাসিক হল খুলে পরীক্ষা নেওয়ার দাবি তাদের। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গ্রুপ, পেজে ব্যাক্তিগত একাউন্টে এসব দাবি জানিয়ে আসছেন শিক্ষার্থীরা। 

শিক্ষার্থীদের দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র মৈত্রী ও ছাত্র ইউনিয়ন। শুক্রবার (২৫ ডিসেম্বর) সংগঠনগুলো পৃথক প্রেস বার্তায় এ দাবি জানায়। এ ছাড়াও একই দাবি জানিয়েছেন শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও। 

বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়ন নেতারা বলেন, আবাসিক হল বন্ধ রেখে পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকায় পর্যাপ্ত আবাসন সুবিধা নেই। তাছাড়া কেবল পরীক্ষাকালীন মেস বা বাসা ভাড়া পাওয়া সহজ হবে না। সবার পক্ষে শহর থেকে এসে পরীক্ষা দেয়াও কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে। এছাড়াও যারা দূর থেকে এসে পরীক্ষা দিবে তাদের জন্য সাময়িক থাকার ব্যবস্থায় নানা জটিলতা রয়েছে, বিশেষ করে মেয়েদের। অনেক ক্ষেত্রে তাদের নিরাপত্তার সমস্যা হতে পারে। তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি স্বাস্থ্যবিধি মেনে আবাসিক হলগুলো খুলে দেন। যাতে শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে।

প্রশাসনের হল বন্ধ রেখে পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে শাখা ছাত্র মৈত্রী। বিবৃতিতে সংগঠনটির নেতারা বলেন, আবাসিক সুবিধা ছাড়া পরীক্ষা নিলে শিক্ষার্থীরা নিজেদের মতো করে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করে কেন্দ্রে উপস্থিত হবে। এতে করোনা ভাইরাসের বিস্তার আরো ঘটবে। কোনো শিক্ষার্থী করোনায় আক্রান্ত হলে এর দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এড়াতে পারে না। এছাড়া প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকলেও অনলাইনে সম্পন্ন করা কোর্সসমূহের রিভিশন না করে চূড়ান্ত পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান করছি। আবাসিক হল খুলে স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে নয় দফা প্রস্তাবনাও দিয়েছে সংগঠনটি। 

এদিকে শাখা ছাত্রলীগ বিবৃতি দিয়ে দাবি না জানালেও নেতাকর্মীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হল খুলে পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন। শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক ফয়সাল সিদ্দীকি আরাফাত বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেছি, তাদের সবার দাবি আবাসিক ও পরিবহন সুবিধা নিশ্চিত করে পরীক্ষা নেয়া হোক। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, এ ব্যাপারে আমিও ব্যক্তিগতভাবে পজিটিভ। তবে একাডেমিক কাউন্সিলের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিবো, একার পক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব না। তবে আমরা সরকারের সবুজ সংকেতের দিকে চেয়ে আছি। ইউজিসির সঙ্গেও আমি এ ব্যাপারে কথা বলব।