২০২১ : অনিশ্চয়তাময় এক নতুন বছরের শুরু

২০২১ :  অনিশ্চয়তাময় এক নতুন বছরের শুরু

ডা. মুহাম্মদ আব্দুস সবুর

নতুন একটি বছরের শুরু হয়েছে এমন সময়ে যখন সবাই পর্যুদস্ত করোনার কারণে। পৃথিবীময় দাপিয়ে বেড়ানো এই ভাইরাসে সব কিছু অনিশ্চয়তাময় হয়ে উঠেছে। যদিও একাধিক টিকা পাওয়া গেছে এবং অনেক দেশেই তার প্রয়োগও শুরু হয়েছে, কিন্তু অতিমারীর প্রকোপ তাতে একটুও কমেনি। দ্বিতীয় ধাক্কার সাথে এসেছে নতুন ধরণের ভাইরাসের অস্তিত্ব, ফলে শঙ্কা কমেনি বরং বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপের কয়েকটি দেশ ও পাশ্ববর্তী ভারতে এখনও সংক্রমণ নাগালের বাইরে। আমাদের দেশে সংক্রমণের সংখ্যা কিছুটা কমতির দিকে গেলেও মৃত্যুর সংখ্যা আশঙ্কাজনক। 

কবে সবার জন্য টিকা প্রদান করা সম্ভব হবে এবং তার ফলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসবে কি না সেটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। সংক্রমণ থেকে রক্ষার প্রয়াসে প্রায় ১০ মাস শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। কবে খোলা যাবে সেটিরও নিশ্চয়তা নেই। শিক্ষাজীবনের এই ক্ষতি কিভাবে কাটিয়ে ওঠা যাবে তারও নিশ্চয়তা নেই। 

জীবনের অনিশ্চয়তার সাথে যুক্ত হয়েছে জীবিকার অনিশ্চয়তা। বিদেশে কাজ হারিয়ে অনেকেই দেশে ফিরছেন। দেশে এসেও অনেকে আটকে গেছেন, যেতে পারছেন না কর্মস্থলে। দেশেও কাজ হারিয়েছেন কিংবা কম বেতনে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, জীবিকা হারানো ও আরও অনেক কারণে অনেকেই শহর ছেড়ে গ্রামে ফিরে গেছেন। শহরের অলিতে গলিতে ঝুলছে বাড়ি ভাড়ার বিজ্ঞপ্তি। বাড়ী ভাড়ার টাকায় যাদের সংসার চলে কিংবা ঋণ করে যারা বাড়ী করেছেন তারা জানেন না কবে কেটে যাবে এই অনিশ্চয়তা।  

প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে শ্রমঘণ পোশাক খাত যখন ঘুরে দাঁড়াতে যাচ্ছিল তখনই করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা আবার ওলট-পালট করে দিচ্ছে সব কিছু।  দ্বিতীয় ধাক্কার কারণে পোশাক শিল্পে আবারও ধ্বস নামার আশঙ্কা। চাহিদা কমার কারণে বিদেশ থেকে ক্রয়াদেশ কমে যাবার আশঙ্কা করছেন অনেকেই।  স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বাধ্য-বাধকতায় গৃহে  অন্তরীণ অনেকেই। এর ফলে দাম্পত্য-কলহ বাড়ছে। তালাকের পরিমাণ বেড়ে গেছে। শিশু-কিশোররা মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। বাইরে বেরুলে করোনার ভয় আবার ঘরে থাকলে মানসিক সমসস্যা- এই শাখের করাতের মাঝে বসবাস আর কতদিন চলবে তারও নিশ্চয়তা নেই।  

আয় কমে যাবার সাথে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধি আরেক অনিশ্চয়তায় ফেলেছে জনজীবনকে। কিছুদিন আগে আলু-পিঁয়াজের দাম আর এখন চাল ও তেলের দাম কোনভাবে স্বস্তি দিচ্ছে না অধিকাংশ মানুষকে।  

তারপরেও মানুষ আশা নিয়েই বেঁচে থাকে। রাতের পরেই সকাল হয়। সুড়ঙ্গের শেষে আলোর হাত-ছানি থাকে। তাই অনেক ধরণের অনিশ্চয়তার মাঝে শুরু হলেও সবার প্রত্যাশা অচিরেই কেটে যাবে সব অনিশ্চয়তা। সবাই আবার ফিরতে পারবে স্বাভাবিক জীবনে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রাণ ফিরে পাবে, অতিমারীর শঙ্কা পাশে সরিয়ে রেখে সবাই যাপন করবে স্বাভাবিক সুস্থ্য জীবন। 

লেখক : সম্পাদক, নিউজজোনবিডি ডট কম।