দাবি না মানলে তুমুল আন্দোলনের হুমকি ভারতীয় কৃষকদের

দাবি না মানলে তুমুল আন্দোলনের হুমকি ভারতীয় কৃষকদের

ছবি : সংগৃহীত

সোমবারের সংলাপে দাবি মানা না হলে দেশব্যাপী তুমুল আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে ভারতের কৃষক নেতারা। সংলাপকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সরকারকে চাপে রাখতে তারা এই হুমকি দেয়।

কৃষক ইউনিয়নগুলো বলছে, সোমবারের সংলাপে তিনটি কেন্দ্রীয় কৃষি আইন বাতিল ও এমএসপি’র আইনগত গ্যারান্টি প্রভৃতি প্রধান দাবিগুলো পূরণ না হলে তারা ৬ জানুয়ারি থেকে দুই সপ্তাহব্যাপী জোরদার আন্দোলন গড়ে তুলবে।

আইন বাতিলের কোনো বিকল্প সম্ভব নয় ঘোষণা দেয়ার এক দিন পর কৃষকরা জানায়, সরকারের উচিত নয় তাদের দাবিগুলো ‘হালকাভাবে’ নেয়া। ‘আইনগুলোর বাতিল’ ছাড়া অন্য কিছু আমরা গ্রহণ করবো না, বলছে কৃষক ইউনিয়নগুলো।

জয় কিষান আন্দোলনের নেতা যোগেন্দ্র যাদব বলেন, ‘৫০ শতাংশ বিষয় সমাধান করার দাবিটির তেমন ভিত্তি নেই। আমাদের প্রধান দু’টি দাবি এখনো ঝুলে আছে। (হিন্দিতে বলেন) মাত্র তো লেজ সরানো হলো, এখনো গোটা হাতি দাঁড়িয়ে। সরকার এখনো এমএসপির আইনগত গ্যারান্টি দেয়ার ব্যাপারে নীতিগতভাবে সম্মত হয়নি।’

দিল্লি-হরিয়ানার সিঙ্গু সীমান্তে কৃষক ইউনিয়েনের নেতাদের সাথে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন যাদব।

তিনি বলেন, ৪ জানুয়ারি সংলাপে কোনো সন্তোষজনক ফলাফল না আসলে কৃষকরা ৬ জানুয়ারি কুনদলি-মানেসার-পালওয়াল (কেএমপি) মহাসড়কে ট্রাক্টর ‘মার্চ’ করবে। এর আগে ৩১ ডিসেম্বর ট্রাক্টর মার্চ করার কথা ছিল কৃষকদের। তবে ৩০ ডিসেম্বর সরকারের সাথে তাদের সংলাপের ফলে কৃষকরা তা স্থগিত করে।

‘আমরা কবে শাহজাহানপুর সীমান্ত থেকে অগ্রসর হবো সে বিষয়ে আগামী সপ্তাহে তারিখ ঘোষণা করব। সরকারের সাথে আমাদের চলমান সংলাপের সফলতা বা ব্যর্থতার উপর ভিত্তি করে আমারা পরবর্তী আন্দোলন কর্মসূচি ঠিক করব,’ বলেন যাদব।

শনিবার কৃষক ইউনিয়নগুলোর নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনের ভেন্যু সিঙ্গু সীমান্ত থেকে রাজধানির মধ্যভাগের প্রেস ক্লাবে স্থানান্তরিত হবে। সেখানে ‘সমযুক্ত কিষান মোর্চা’র সাত সদস্যবিশিষ্ট জাতীয় সমন্বয় কমিটি প্রধান দু’টি দাবির ব্যাপারে কৃষকদের অবস্থান ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করবেন।

এমএসপির গ্যারান্টির বিষয়ে সরকার কীভাবে মূল কমিটির পরিবর্তে ২০১৮ সালে সংসদে উপস্থাপিত একটি বেসরকারি সদস্য বিল থেকে নির্দেশনা নিতে পারে- এ ব্যাপারে তারা সংবাদ সম্মেলনে আলোচনা করবেন। ইউনিয়নগুলো মনে করে মূল কমিটি সময় ক্ষেপণের কৌশল মাত্র।

সরকারের সাথে আলোচনার সময় কৃষক প্রতিনিধিরা এমএসপি গ্যারান্টির উপর বেসরকারি সদস্যের বিলের বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন। তারা জানান, আলোচনার সময় প্রায় ২১টি বিরোধী রাজনৈতিক দল বিলটির প্রতি তাদের সমর্থন জানিয়েছেন।

কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তমার বুধবার কৃষকদের সাথে অনুষ্ঠিত শেষ সংলাপে আইন বাতিলের বিকল্প কিছু প্রস্তাব করতে বলেছিলেন। তবে কৃষক সংগঠনগুলোর সমন্বয়ক কমিটি এআইকেএসসিসি এ ব্যাপারে তাদের প্রাথমিক আলোচনার পর বৃহস্পতিবার প্রস্তাবটিকে নাকচ করে দেয়।

তমার এমএসপি ইস্যু নিয়ে আলোচনার জন্য একটি কমিটি গঠনেরও পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে ইউনিয়নগুলো এটিকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাখ্যান করে।

শুক্রবারের সভায় তারা কেন্দ্রীয় কৃষি আইনের বিরুদ্ধে কেরালা এসেম্বলি’র রেজ্যুলেশনের প্রশংসা করে।

ভারতীয় কিষান ইউনিয়নের (বিকেইউ) নেতা যুধভির সিং বলেন, ‘মনে হচ্ছে সরকার কৃষকদেরকে ‘হালকাভাবে’ গণ্য করছেন। সরকার শাহিনবাগের (সিএএ-বিরোধী) আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে সক্ষম হয়েছিল। তারা আমাদের ব্যাপারেও তাই ভাবছে। তবে এমন দিন কখনো আসবে না। সরকার ৪ জানুয়ারির সংলাপে দাবি না মানলে কৃষকরা (তাদের আন্দোলন আরো জোরদারের) সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবে।’

কৃষক নেতারা আরো ঘোষণা করেন, ক্রান্তিকারি কৃষক ইউনিয়নের কৃষক নেতা দর্শন পালের সাথে সমন্বয় করে তাদের চলমান আদানি ও আম্বানির সেবা ও পণ্য বর্জনের পাশাপাশি উক্ত কর্মসূচিগুলো পালিত হবে।

তারা ঘোষণা করেন কৃষকরা ৭ জানুয়ারি থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশব্যাপি ‘দেশ জাগৃতি অভিযান’ শুরু করবে। পাশাপাশি ১৮ জানুয়ারি তারা ‘মহিলা কৃষক দিবস’ পালন করবে এবং ২৩ জানুয়ারি ‘কিষান চেতনা দিবস’ হিসেবে সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্মদিন পালন করবে।

সংবাদ সম্মেলনে হরিয়ানার কৃষক নেতা বিকাশ সিসার বলেন, হরিয়ানায় সকল টোল প্লাজাগুলো খালি থাকবে। সকল পেট্রোল পাম্প ও দোকানপাট বন্ধ থাকবে। বিজেপি ও জান্নায়ক জনতা পার্টি (জেজেপি) রাজ্যে আন্দোলনের মুখোমুখি হবে এবং তাদের মৈত্রী ভেঙ্গে না যাওয়া পর্যন্ত এটা চলবে।’

সূত্র : টাইমস অভ ইন্ডিয়া