টিকা দ্রুত আনতে সব ধরনের চেষ্টা করছি: প্রধানমন্ত্রী

টিকা দ্রুত আনতে সব ধরনের চেষ্টা করছি: প্রধানমন্ত্রী

ছবি: সংগৃহীত

করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে এক গভীর সঙ্কটের মধ্য দিয়ে আমাদের বিগত ২০২০ সাল অতিক্রম করতে হয়েছে। সেই সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান এবং উপর্যুপরি বন্যা আমাদের অর্থনীতির উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। আমরা সেসব ধকল দৃঢ়তার সঙ্গে কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু করোনাভাইরাস-জনিত সঙ্কট থেকে বিশ্ব এখনও মুক্ত হয়নি।

বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের বর্তমান মেয়াদের দুই বছর পূর্তিতে এ ভাষণ দেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে বাংলাদেশে এখনও সংক্রমণ এবং মৃত্যুহার অনেক কম। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি এই মহামারি নিয়ন্ত্রণে রাখার। আশার কথা বিভিন্ন দেশে কভিড-১৯-এর টিকা প্রদান শুরু হয়েছে। বাংলাদেশেও আমরা দ্রুত টিকা নিয়ে আসার সব ধরনের চেষ্টা করছি। টিকা আসার পর পরই চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য-সহ সম্মুখসারীর যোদ্ধাদের অগ্রাধিকারভিত্তিতে টিকা প্রদান করা হবে।

তিনি বলেন, কভিড-১৯ মোকাবিলায় চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী এবং মাঠ প্রশাসনের সদস্যসহ সম্মুখসারীর করোনাযোদ্ধাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি এই মহামারি সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ দরিদ্র-অসহায় মানুষের সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন। আমি সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। যাঁদের মৃত্যু হয়েছে আমি তাঁদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করছি।

সরকার প্রধান আরো বলেন, করোনাভাইরাস মহামারি ইতোমধ্যেই বিশ্ব অর্থনীতিতে এক গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করেছে। অনেক দেশের অর্থনীতিতে স্থবিরতা নেমে এসেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিও ক্ষতির মুখে পড়েছে। তবে, বিভিন্ন নীতি-সহায়তা এবং বিভিন্ন উদার-নৈতিক আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ প্রদানের মাধ্যমে আমরা অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এখন পর্যন্ত আমরা ১ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি যা মোট জিডিপি’র ৪.৩ শতাংশ।

দুর্নীতিবাজ যে দলেরই হোক, যত শক্তিশালীই হোক কোনো ছাড় দেওয়া হবে না বলে সর্তক করে বলেন, উন্নয়নের পথে সব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে আমরা বদ্ধপরিকর। কিছু অসাধু মানুষ নানা কৌশলে জনগণের সম্পদ কুক্ষিগত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত থাকে। আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছি। দুর্নীতিবাজ যে দলেরই হোক আর যত শক্তিশালীই হোক, তাদের ছাড় দেওয়া হচ্ছে না এবং হবে না।

দুর্নীতি নির্মূলে দুর্নীতি দমন কমিশন স্বাধীনভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করছে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।

সরকার প্রধান বলেন, আইনের শাসন সমুন্নত রেখে মানুষের নাগরিক এবং গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করতে যা যা করা প্রয়োজন আমরা তা করবো।

১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণ থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বলেছিলেন ‘স্বাধীনতা সংগ্রামের চেয়েও দেশ গড়া বেশ কঠিন। দেশ গড়ার সংগ্রামে আরও বেশি আত্মত্যাগ, আরও বেশি ধৈর্য, আরও বেশি পরিশ্রম দরকার। আমরা যদি একটু কষ্ট করি, একটু বেশি পরিশ্রম করি, সবাই সৎপথে থেকে সাধ্যমতো নিজের দায়িত্ব পালন করি, সবচেয়ে বড় কথা, সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকি- তাহলে আমি বিনা দ্বিধায় বলতে পারি ইনশাআল্লাহ কয়েক বছরের মধ্যে আমাদের স্বপ্নের সোনার বাংলা আবার সোনার বাংলায় পরিণত হবে। ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আজ অনেকদূর এগিয়েছি সত্য। আমাদের আরও বহুদূর যেতে হবে। হতে পারে সে গন্তব্য পথ মসৃণ, হতে পারে বন্ধুর। বাঙালি বীরের জাতি। পথ যত কঠিনই হোক, আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে। আমরা যদি পরিশ্রম করি, সততা-দেশপ্রেম নিয়ে দায়িত্ব পালন করি, তাহলে আমরা সফলকাম হবোই, ইনশাআল্লাহ।

শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী সামনে রেখে আসুন আমরা নতুন করে শপথ নেই- মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শকে ধারণ করে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্য-নিরক্ষরতামুক্ত একটি অসাম্প্রদায়িক কল্যাণকামী বাংলাদেশ গড়ে তুলবো।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পায় আওয়ামী লীগ। এরপর ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশের ইতিহাসে টানা এতদিন ক্ষমতায় থাকার রেকর্ড আর কারও নেই।