খুলে দেওয়া হয়েছে টুইটার: সমর্থকদের প্রশংসা করলেন ট্রাম্প

খুলে দেওয়া হয়েছে টুইটার: সমর্থকদের প্রশংসা করলেন ট্রাম্প

ছবি: এএফপি

কংগ্রেসে ট্রাম্প সমর্থকদের হামলার পর তার টুইট করার পর টুইটার এবং ফেসবুক কর্তৃপক্ষ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দয়ে। প্রায় ১২ ঘণ্টা পর টুইটার অ্যাকাউন্ট ফিরে দেওয়া হলেও ফেসবুক এখনো ফিরে পাননি। এর পরই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একদিকে যেমন তার সমর্থকদের প্রশংসা করেছেন, আবার ২০শে জানুয়ারি সুশৃঙ্খলভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

এসময় রিপাবলিকান এই প্রেসিডেন্ট দাঙ্গাকারীদের এই হামলাকে ‘বর্বরোচিত হামলা’ বলে মন্তব্য করেছেন। মার্কিন কংগ্রেসে ব্যাপক ভাংচুর এবং বিশ্বনেতাদের নিন্দার একদিন পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এমন অঙ্গীকার করলেন।

তিনি এমন এক সময়ে এই কথা বলছেন যখন শীর্ষ ডেমোক্রেটিক নেতারা তাকে প্রেসিডেন্ট অফিস থেকে সরে যেতে বলেছেন। যদিও ১৩ দিন পর তার এমনিতেই পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা রয়েছে।

এই বক্তব্যের মাধ্যমে গত বছরের নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিজের পরাজয় এই প্রথম প্রকাশ্যে স্বীকার করলেন বলে মনে করা হচ্ছে। এর আগে কোন ধরনের প্রমাণ ছাড়াই নির্বাচনের কারচুপির অভিযোগ করে ফলাফল প্রত্যাখান করেছিলেন ট্রাম্প।

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম টুইটার ১২ ঘণ্টা তার অ্যাকাউন্ট ব্লক করে রাখে কারণ টুইটার মনে করে ট্রাম্পের টুইট সহিংসতাকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। আর নতুন এক ভিডিও বার্তায় ট্রাম্প বলেছেন, ‘এখন কংগ্রেস ওই ফলাফল অনুমোদন করেছে। ২০শে জানুয়ারি একটা নতুন প্রশাসনের উদ্বোধন হবে।’

‘এখন আমার লক্ষ্য হবে সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও নির্বিঘ্নভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। এই মুহূর্তে দরকার হল নিরাময় ও মিটমাট করে ফেলা।’

এদিকে তিনি তার ‘দুর্দান্ত সমর্থকদের’ ও প্রশংসা করে বলেছেন, ‘আমাদের অসাধারণ যাত্রা মাত্র শুরু হল।’

অথচ ভোটে কারচুপির যে অসমর্থিত অভিযোগ তিনি এর আগে এনেছিলেন এবং যার প্রেক্ষিতে বুধবার তার কট্টর সমর্থকরা ক্যাপিটল ভবনে হামলা চালিয়েছিল সেই অভিযোগ সম্পর্কে নতুন এই ক্লিপে তিনি তেমন কিছু বলেননি।

ওই দিনের নজিরবিহীন হামলার ফলে প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট জো বাইডেনের জয়কে অনুমোদন দেয়ার জন্য শুরু হওয়া কংগ্রেস অধিবেশন কয়েক ঘণ্টার জন্য স্থগিত রাখতে বাধ্য হয়েছিলেন ভাইস-প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স এবং অন্যান্য আইন-প্রণেতারা।

সহিংসতার পর হোয়াইট হাউসের বেশ কিছু কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন। সবশেষ খবরে বলা হয়, ডেপুটি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মিক মালভেনি পদত্যাগ করেছেন। তিনি ছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদের একজন।

এর আগে পদত্যাগ করেন ডেপুটি প্রেস সচিব সারা ম্যাথুজ, ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের চিফ অব স্টাফ স্টেফানি গ্রিশাম, হোয়াইট হাউসের সোশ্যাল সেক্রেটারি রিকি নিচেটা, ও ডেপুটি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ম্যাট পটিঙ্গার।

মার্কিন সিনেটে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতা চাক শুমার আক্রমণের পর সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী প্রয়োগ করে অবিলম্বে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে অপসারণের আহ্বান জানিয়েছেন। একই আহ্বান জানিয়েছেন স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি।

মেয়াদের বাকি দিনগুলো ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামে নিষিদ্ধ ট্রাম্প
টুইটার তার অ্যাকাউন্ট খুলে দিলেও ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ ঘোষণা করেছেন যে ডোনাল্ড ট্রাম্প আর যে কয়েকটি দিন প্রেসিডেন্ট আছেন - সেই পুরো সময়টার জন্য তার ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম এ্যাকাউন্ট সাসপেণ্ড করে রাখা হবে।

এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ‘আমরা মনে করছি প্রেসিডেন্টকে এ সময়টায় আমাদের সেবা ব্যবহার করতে দেয়াটা খুব বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হব ‘।

কী ঘটেছিল?
আমেরিকার আইন-প্রণেতারা যখন নভেম্বরের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জো বাইডেনের জয় আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করার জন্য অধিবেশনে বসেছিলেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শত শত সমর্থক তখন আমেরিকার আইনসভা কংগ্রেসের ভবন ক্যাপিটল-এ ঢুকে পড়ে।

কয়েক ঘণ্টা ভবন কার্যত দখল করে রাখার পর বিক্ষোভকারীরা ধীরে ধীরে ক্যাপিটল প্রাঙ্গণ ছেড়ে বাইরে চলে যেতে থাকে।

রাজধানী ওয়াশিংটনে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১২ ঘণ্টার কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছে, কিন্তু সান্ধ্য আইন শুরু হবার পরও শত শত বিক্ষোভকারীকে রাজপথে জটলা পাকাতে দেখা গেছে।

দুপুরের পরই যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানীতে নাটকীয় দৃশ্যে দেখা যায় - শত শত বিক্ষোভকারী ভবনটিতে ঢুকে পড়ছে আর পুলিশ কংগ্রেস সদস্যদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিচ্ছে। কয়েক ঘণ্টা ভবন কার্যত দখল করে রাখার পর বিক্ষোভকারীরা ধীরে ধীরে ক্যাপিটল প্রাঙ্গণ ছেড়ে বাইরে চলে যেতে থাকে।

ওই দিনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে।

সূত্র : বিবিসি