মার্চে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা পূর্বাচলে

মার্চে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা পূর্বাচলে

ফাইল ফটো

ঢাকার জনপ্রিয় একটি বার্ষিক আয়োজন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা এবছর জানুয়ারি মাসে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে স্থগিত করবার পর রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো বলছে, আগামী মার্চ তারা চলতি বছরের মেলাটি করবেন এবং সেটি হবে সম্পূর্ণ নতুন একটি স্থায়ী ভেন্যুতে।

অর্থাৎ শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে এবং প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের মধ্যিখানের খোলা জায়গাটিতে আর কখনোই বসবে না আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার বার্ষিক আসর।

বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের আন্তর্জাতিক প্রচার ও প্রসার এবং বিদেশি আমদানি-রপ্তানিকারকদের সাথে বাংলাদেশি আমদানি-রপ্তানিকারকদের মেলবন্ধনের জন্য একসময় যে 'ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা' চালু হয়েছিল, কালের বিবর্তণে সেটি পরিণত হয়েছে ঢাকার লাখ লাখ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বার্ষিক কেনাকাটা ও বিনোদনের একটি মাধ্যমে।

এমনিতে প্রতি বছর পয়লা জানুয়ারি মাসব্যাপি এই বাণিজ্য মেলা শুরু করবার একটি রেওয়াজে পরিণত হয়েছিল। ১৯৯৫ সাল থেকেই এমনটি হয়ে আসছে।

বেশ কিছু বছর ধরেই আলাপ চলছিল, ঢাকার উত্তরপূর্ব প্রান্তে নির্মানাধীন পূর্বাচল নামে সরকারি আবাসন প্রকল্পের একটি স্থায়ী ভেন্যুতে এটিকে সরিয়ে নেয়া হবে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো বা ইপিবি এখন বলছে, পূর্বাচলে চীনের সহায়তায় বাংলাদেশ-চীন ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারের নির্মানকাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। এ বছরই সেখানে প্রথমবারের মতো বাণিজ্য মেলা আয়োজন করা হবে তিন মাস সময়সূচি পিছিয়ে।

নতুন সূচি অনুযায়ী ২০২১ সালের বাণিজ্য মেলা এবং নতুন ভেন্যুর উদ্বোধন হবে ১৭ই মার্চ।

ইপিবি সচিব মোঃ ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ''মুজিব বর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনের দিনে আমরা মেলাটির উদ্বোধন করতে চাই। এই সংক্রান্ত প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সেখানে মেলাটি আরও বৃহৎ পরিসরে হবে বলে আমরা আশা করছি।''

যেখানে হবে নতুন মেলা

পূর্বাচলে ২০ একর জমির ওপর বাংলাদেশ-চীন ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারটি নির্মিত হয়েছে।

২০১৭ সালের অক্টোবরে এই কেন্দ্রটি নির্মাণ শুরু করে সম্প্রতি কাজ শেষ হয়েছে। এই মাসেই ইপিবির কেন্দ্রটির দায়িত্ব বুঝে নেয়ার কথা রয়েছে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ৬২৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা অনুদান হিসাবে দিয়েছে চীন। আর জমি বাবদ বাংলাদেশ সরকার দিয়েছে ১৭০ কোটি ১৩ লাখ টাকা।

প্রদর্শনী কেন্দ্রে ৭ হাজার ১৭৩ স্কয়ার মিটারের দুইটি পৃথক প্রদর্শনী হল রয়েছে।

সম্মেলন স্থলে পাঁচশো গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে।

সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এই কেন্দ্রে সম্মেলন কক্ষ, সার্ভিস রুম, প্রেস কক্ষ, খাবারের জন্য বিশাল কক্ষ আর বাচ্চাদের খেলার জায়গা রয়েছে।

মেলায় কমবে স্টলের সংখ্যা

২০২০ সালে শেরেবাংলা নগরে যে বাণিজ্য মেলা হয়েছে, সেখানে মোট ৫১৬টি স্টল বসেছিল। কিন্তু এখানে সব মিলিয়ে স্টল করার ক্যাপাসিটি রয়েছে তিনশোর কিছু বেশি। ফলে এবারের মেলায় তুলনামূলকভাবে অংশ নেয়া স্টলের সংখ্যা কম হবে।

এর আগে বাণিজ্য মেলা নিয়ে অনেক সময় সমালোচনা উঠেছিল যে, মেলায় আন্তর্জাতিক পরিবেশ থাকে না।

২৫তম বাণিজ্য মেলার উদ্বোধনকালে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছিলেন, ''এই মেলা কোনভাবেই আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে নেই। তবে আগামীবার থেকে পূর্বাচলে অনুষ্ঠিত হলে আন্তর্জাতিক মানের করার চেষ্টা করা হবে।''

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এবারের মেলায় মূলত রপ্তানিযোগ্য প্রতিষ্ঠানই যাতে অংশ নেয়, সেই চেষ্টা করা হবে।

মাস্ক ছাড়া মেলায় প্রবেশ করা যাবে না

ইফতেখার আহমেদ বলেন, ''কোভিড পরিস্থিতির কারণে মেলায় মাস্ক ছাড়া কেউ প্রবেশ করতে পারবেন না। এছাড়া বিদেশি ব্যবসা ও গ্রাহকদের আকর্ষণ করার জন্য পূর্বাচলের মেলায় আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার চেষ্টা করা হবে।''

ভেন্যু দূরে হওয়ায় কি সমস্যা হবে?

পূর্বাচলের যে স্থানে এই বছর বাণিজ্য মেলা করার কথা ভাবা হচ্ছে, সেটি কুড়িল বিশ্বরোড থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে।

তবে সেটি মেলার জন্য কোন সমস্যা তৈরি করবে না বলেই মনে করেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সহ-সভাপতি হাসিনা নেওয়াজ।

তিনি বিবিসি বাংলাকে বলছেন, দূরত্ব কোন অসুবিধা তৈরি করবে না। কারণ বাণিজ্য মেলায় সবাই বেড়াতে যায় না, মানুষ প্রয়োজনেই যায়। সুতরাং এটা মেলার জন্য, ক্রেতা বা ব্যবসায়ীদের জন্য কোন সমস্যা তৈরি করবে বলে আমি মনে করিনা।

মেলাটি আয়োজন খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি মনে করেন।

''দেশ-বিদেশ থেকে যাই আসুক না কেন, এখানে সবার সঙ্গে সবার দেখা হচ্ছে, তথ্য আদান প্রদান হচ্ছে, পণ্যের যাচাই বাছাই হচ্ছে। সব ব্যবসায়ীদের জন্যই এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।'' বলছেন হাসিনা নেওয়াজ।

প্রতিবছর বাণিজ্য মেলা থেকে সাংসারিক নানা জিনিসপত্র কেনাকাটা করেন সোহানা ইয়াসমিন। তিনি অবশ্য আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, ''আগে ঢাকার ভেতরে ছিল, সিএনজিতে করে মেলায় যেতে পারতাম। কিন্তু এখন এতো দূরে মেলা হলে আর যাওয়া হবে কিনা, সন্দেহ আছে।''

সমস্যা হতে পারে সড়কের নির্মাণ কাজ

যেখানে বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে, তার সামনেই পূর্বাচলের তিনশো ফিট সড়কের সংস্কার কার্যক্রম চলছে। এটি শেষ হতে আরও সময় লাগবে।

ফলে এটি মেলার আয়োজনে খানিকটা বিঘ্ন ঘটাতে পারে বলে কর্মকর্তাদের অনেকে আশঙ্কা করছেন।

তবে সচিব মোঃ ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলছেন, ''রাস্তার কাজে খানিকটা সমস্যা হলেও আশেপাশে আরও অনেক সড়ক আছে। মানুষজন ভেতরের সড়কগুলো দিয়ে, বিকল্প পথগুলো দিয়ে যাতায়াত করতে পারবে। যারা মেলায় যেতে চাইবেন, এই টুকু সমস্যা ততো বেশি সমস্যা হবে বলে মনে হয় না।''

সুত্র: বিবিসি