পাবনার চার পৌরসভা নির্বাচন : নির্বাচনী তৎপরতায় আওয়ামীলীগ এগিয়ে, বিএনপিরও কমতি নেই

পাবনার চার পৌরসভা নির্বাচন : নির্বাচনী তৎপরতায় আওয়ামীলীগ এগিয়ে, বিএনপিরও কমতি নেই

ছবি : সংগৃহীত

আগামী ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপে পাবনার ৪টি পৌরসভা নির্বাচন। এ তারিখে পাবনার ৫টি পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও আইনি জটিলতার কারনে এদিন সুজানগর পৌরসভায় ভোট হচ্ছে না। নির্বাচনী হাওয়ায় গোটা নির্বাচনী এলাকা যেন দোল খাচ্ছে। প্রার্থীদের মাইকিং-এর শব্দে ঝালা পালার মধ্যেও ভোটারদের বিভিন্ন ধরণের আবেগ অনুভূতির মধ্যে হিসাব নিকাশ ও ভোটারদের বাগিয়ে নেয়ার তৎপরতার অভাব নেই। তবে মাঠ জরিপে দেখা যাচ্ছে ভোট বাগাতে  তৎপরতায় নির্বাচনী মাঠে চার স্থানেই প্রার্থীদের তৎপরতায় আওয়ামীলীগ প্রার্থী এগিয়ে আছে। তবে বিএনপি’র মেয়র প্রার্থীর তৎপরতারও কমতি নেই। 

পাবনা জেলার সাঁথিয়া, ভাঙ্গুড়া, ঈশ্বরদী ও ফরিদপুর পৌরসভা নির্বাচনে এখন প্রচার-প্রচারণা তুঙ্গে। প্রচারণায় নানা কৌশল প্রয়োগ করে চলেছেন প্রার্থীরা। গণসংযোগ, মাইকিং, পোস্টার ঝুলানোর পাশাপাশি ভার্চুয়াল প্রচারণায়ও মনোযোগী প্রার্থীরা। অন্য প্রার্থীদের ভীড়ে নিজেকে আলাদাভাবে ভোটারদের কাছে পরিচিত করতে চেষ্টার কমতি নেই মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের।

সাঁথিয়া: সাঁথিয় পৌরসভা নির্বাচনে ৪১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে ৩ জন মেয়র প্রার্থী, সংরক্ষিত মহিলা আসনে ৮ জন ও ওয়ার্ড কমিশনার পদে ৩০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মেয়র পদে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম বাচ্চু, বিএনপির প্রার্থী পৌর বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ আক্তার হোসেন।

পৌরসভায় ৩১ হাজার ৯২ জন ভোটারের মধ্যে পুরুষ ১৫ হাজার ৫শ’ ৫৫ ও ১৫ হাজার ৫ শ’ ৩৭ মহিলা ভোটার রয়েছে। ভোট কেন্দ্র ১৪টি।

ঈশ্বরদী: ঈশ্বরদী পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে লড়ছেন ৩ জন, কাউন্সিলর ৩৯ এবং মহিলা কাউন্সিলর ৭ জন। আওয়ামী লীগের ইছাহক আলী মালিথা, বিএনপির রফিকুল ইসলাম নয়ন ও ইসলামী আন্দোলনের হাফেজ মাসুম বিল্লাহ।

ঈশ্বরদী পৌরসভার মোট ভোটার সংখ্যা ৫৫ হাজার ৫শ’ ৬৮। পুরুষ ভোটার ২৭ হাজার ২ শ’ ৪১, মহিলা ভোটার ২৮ হাজার ৩ শ’ ২৭ভোট। মোট ১৯ টি কেন্দ্রে ভোট অনুষ্ঠিত হবে।

ফরিদপুর: ফরিদপুর পৌর নির্বাচনে ৩ জন মেয়র, সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর ২৯ জন এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ১১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে এখানে মূলত আওয়ামীলীগ ও বিএনপি প্রার্থী মাঠে থাকলেও অপর প্রার্থীর কোন তৎপরতা নেই।

ভাঙ্গুড়া: ভাঙ্গুড়া পৌরসভা নির্বাচনে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২১ জন মহিলা কাউন্সিলর পদে ১০ জন  প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এ পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা ১৬ হাজার ৩শ’ ৩২ জন। তার মধ্যে মহিলা ভোটার ৮ হাজার ৩ শ’ ৩৩ জন ও পুরুষ ভোটার ৭ হাজার ৯ শ’ ৯৯ জন।

প্রসঙ্গত, উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও সহকারি রির্টানিং অফিসার মোঃ রোকাব আলী দেওয়ান জানান, ভাঙ্গুড়া পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থী মোঃ গোলাম হাসনাইন রাসেল এর অন্য কোন প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় তাকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে।

প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে প্রচারণায় মাঠে নামেন এসব প্রার্থী। সবার নাগরিক অধিকার নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের ভোট বাগিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ঝুলানো হচ্ছে পোস্টার। নির্বাচন কমিশনের বেধে দেয়া নিয়ম অনুযায়ী, রঙিন পোস্টার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ফলে সাদা কালো পোস্টারই প্রার্থীদের ভরসা। নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে পোস্টারের আকার।

সব বিধি মেনে কিছুটা কৌশলী হয়েছেন একাধিক প্রার্থী। এসব পৌর এলাকায় লাখ লাখ পোস্টার চোখে পড়ছে। প্রায় একই ঢংয়ের পোস্টারের ভীড়ে নির্দিষ্ট কাউকে খুঁজে পাওয়াটা কিছুটা কষ্টসাধ্য। হাজার হাজার পোস্টারের ভীড়ে নিজের পোস্টার চেনাতে কিছু প্রার্থী পোস্টার ছেপেছেন আড়াআড়ি আকারে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মাইকিং যেন অপরিহার্য একটি বিষয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই মাইকিংয়েও কিছুটা ভিন্নতা এসেছে। সাধারণত গানের মাধ্যমে প্রার্থীদের ভোট চাওয়া হচ্ছে।  

উঠান বৈঠক, গণসংযোগ, প্রচারপত্র বিলিকরণের মাধ্যমে প্রার্থীরা তাদের নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি খবরের কাগজের মাধ্যমে ভোটারদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন তাদের নির্বাচনী প্রচারপত্র।

প্রার্থীর পক্ষে ভোটার এলাকার জনগণকে ফোন করে ভোট চাওয়া হচ্ছে।

নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় পোস্টার সাঁটানোর পাশাপাশি প্রচারণার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে রিকশা। পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় পোস্টার সাঁটানো হয়েছে যাত্রীবাহী রিকশার পেছনে। এক্ষেত্রে কোথাও কোথাও রিকশা চালকদের রিকশা জমা বহন করছেন প্রার্থীরা।

ভোট চাওয়ার অন্যতম মাধ্যম হিসেবে এখন ব্যবহার হচ্ছে ফেসবুক। মেয়র পদে আলোচনায় থাকা আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থীগণ মাঠে সময় দেয়ার পাশাপাশি প্রচারণা চালাচ্ছেন অনলাইনে। বাদ যাচ্ছেন না কাউন্সিলর প্রার্থীরা। পোস্টার ছাপার আগেই খুলেছেন ফেসবুক পেইজ। যেখানে তার প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে। ভিডিও বার্তা, স্থানীয় উন্নয়নের নানা আশ্বাস দেয়া হচ্ছে ফেসবুকের মাধ্যমে। যাতে করে নির্বাচনী এলাকার মানুষের কাছে প্রার্থীর বার্তাটি পৌঁছায়।

আগামী ১৬ জানুয়ারি এ চারটি পৌরসভার নির্বাচন। নির্বাচনের সমস্ত প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই প্রায় সম্পন্ন বলে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন।