ইউএনও’র সার্বক্ষণিক তদারকিতে গৃহহীনদের ঘর নির্মাণের কাজ চলছে দ্রুতগতিতে

ইউএনও’র সার্বক্ষণিক তদারকিতে গৃহহীনদের ঘর নির্মাণের কাজ চলছে দ্রুতগতিতে

ইউএনও তাহমিনা আক্তার রেইনা আবাসন প্রকল্পে ব্যবহৃত ইট পরীক্ষা করে দেখছেন। ছবি: পাবনা প্রতিনিধি

পাবনা জেলায় ১ হাজার ৮৬টি গৃহহীনদের ঘর তৈরি করা হচ্ছে। এর মধ্যে পাবনা সদর উপজেলায় ৪৪৯ টি ঘর নির্মাণের কাজ চলছে। প্রথম ধাপে আগামী ২০ তারিখ উদ্ধোধনের আওতায় ১৭৬টি ঘর রয়েছে। পাবনা সদর উপজেলায় গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারের জন্য সেমি-পাকা ঘর নির্মাণকাজ দ্রুতগতিতে চালিয়ে যাচ্ছে উপজেলা প্রশাসন।

পাবনা সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ আবদুল করিম জানান, পাবনা সদর উপজেলার ৩ ইউনিয়নে আবাসনে ৪৪৯টি ঘর গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারের জন্য  নির্মাণের কাজ চলছে।  এর মধ্যে দৌগাছি ইউনিয়নের চর সদিরাজপুরে ২৫৩টি, হেমায়েতপর ইউনিয়নের ভবানীপুরে ১০৫টি,প্রতাপপুরের ১০টি ও নাজিরপুরে ৬টি এবং  ভাঁড়ারা ইউনিয়নে ৭৫টি ঘর রয়েছে।

প্রতিটি পরিবারের জন্য ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা ব্যয়ে বাথরুম ও কিচেন সুবিধাসহ দু’কক্ষের এসব সেমি-পাকা ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। চলতি মাসের ২০ তারিখে উদ্বোধনের আওতায় ১৭৬টি ঘর নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায় বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ আবদুল করিম। তিনি বলেন,‘মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভূমি ও আশ্রয়হীন পরিবারকে ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছে সরকার। চলতি মাসের ২০ তারিখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে আশ্রয়হীন এসব পরিবারের কাছে ঘর হস্তান্তর করবেন।’

বৃহস্পতিবার(১৪ জানুয়ারি) চর সদিরাজপুরে সরেজমিন পরিদর্শণকালে এ প্রতিনিধি দেখতে পান সেখানে প্রথম পর্যায়ে ২০ জানুয়ারি উদ্বোধনের জন্য নির্মাণাধিন ১৬০ টি ঘরের কাজ চলছে দ্রুতগতিতে। দিন রাত বিরামহীন কাজ করছেন শ্রমিকরা। দাপ্তরিক কাজের শত ব্যস্ততার মাঝেও অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রমী ইউএনও তাহমিনা আক্তার রেইনা এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ আবদুল করিম প্রতিদিন ঘর নির্মাণের স্পট দেখাশুনাসহ তদারকি করছেন। কাজের মান কোয়ালিটি সম্পন্ন করতে যা যা করা দরকার তার সবটায় করা হচ্ছে। 

পরিদর্শণকালে সেখানে দেখা যায়, ইউএনও তাহমিনা আক্তার রেইনা পুরো আবাসন এলাকা ঘুরে ঘুরে দেখেন এবং ঘর নির্মাণের সাথে জড়িতদের সাথে কথা বলেন এবং খোঁজ খবর নেন। অত্যন্ত বিচক্ষণ ও দক্ষতায় পারদর্শী ইউএনও নিজ হাতে ইট ও বালি নিয়ে পর্যবেক্ষণ করে দেখেন যে, ঘর নির্মাণে ব্যবহৃত ইট ও বালি কোয়ালিটি সম্পন্ন কীনা? তিনি শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে বলেন,‘নিজের ঘর মনে করে কাজ করবেন। নির্মাণ সামগ্রী  যেমন  কোয়ালিটি সম্পন্ন; তেমনি ঘরগুলো যেন মানসম্মত হয়। আমার দায়িত্ব গৃহহীনদের ভালো ঘর উপহার দেয়া।’  তিনি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করার তাগিদসহ বিভিন্ন ধরণের পরামর্শ দেন সংশ্লিটদের। 

এসময় তার সাথে ছিলেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ আবদুল করিম। ইউএনও এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এ দু’জন নিবেদিত প্রাণ দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন গৃহহীনদের সুন্দর ঘর উপহার দেয়ার জন্য। 

ইউএনও রেইনা বলেন,“আগামী ২০ জানুয়ারি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তার কার্যালয় থেকে গৃহ ও ভূমিহীন পরিবারের মাঝে ঘর হস্তান্তর উদ্বোধনের কথা রয়েছে। আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই এসব ঘরের নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারবো বলে আশা করছি। কাজের সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে। এ উপজেলায় গৃহ ও ভূমিহীন পরিবার সঠিক যাচাই-বাছাই করে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৪৪৯ টি পরিবারের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তার প্রথম ধাপের কাজ চলছে।”

যে সব গৃহহীনরা ঘর পেয়েছেন; সেসব ঘরে তাদের নামের তালিকা ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। পরিদর্শণকালে আবাসনের ১৮ নং ঘর পাওয়া স্বামীহারা তিন সন্তানের জননী লাভলীর কাছে তার অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি আবেগাব্লুত হয়ে বলেন,‘এর চেয়ে বড় কিছু হবের পারে না। বড় কষ্টের সাথে ৩ গ্যাদা নিয়ে বাপের বাড়িত ছিলেম।’  ইউএনও স্যার আমার যে ঘর দিছে-আমি ছাওয়াল পাল নিয়ে তার জন্যি সারা জীবন দোয়া করবো।’ 
উল্লেখ্য, পাবনা জেলায় ১ হাজার ৮৬টি গৃহহীনদের ঘর তৈরির কাজ চলছে বলে জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ জানিয়েছেন।