খেলাপি ঋণে মূলধন সংকটে ১১ ব্যাংক

খেলাপি ঋণে মূলধন সংকটে ১১ ব্যাংক

ছবি সংগৃহিত।

চরম অব্যবস্থাপনা আর অনিয়ম-দুর্নীতিতে চলছে ব্যাংক খাত। ঋণের নামে লুট হচ্ছে টাকা। ফলে লাগামহীন বাড়ছে খেলাপি ঋণ। এতে করে সরকারি-বেসরকারি খাতের ১১টি ব্যাংকের আর্থিক ভিত্তির দুর্বলতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। এসব ব্যাংক ঋণের মান অনুযায়ী সঞ্চিতি রাখতে গিয়ে নিজেদের মূলধনে হাত দিয়েছে। সব হারিয়ে এখন ১৬ হাজার কোটি টাকার ঘাটতিতে পড়েছে ব্যাংকগুলো।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের জুন শেষে মূলধন সংকটে পড়েছে ১১টি ব্যাংক। এগুলো হলো রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক; বেসরকারি খাতের এবি ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, বিদেশি ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান। এছাড়া বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংক এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক।

সংশ্লিষ্টরা জানান, খেলাপি ঋণসহ নানা কারণে ব্যাংক খাত ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এটিকে নেতিবাচক হিসেবে দেখছেন। এতে করে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত যত দ্রুত সম্ভব এ সংকট উত্তরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

বর্তমানে ব্যাংকগুলোকে ৪০০ কোটি টাকা অথবা ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশের মধ্যে যা বেশি সেই পরিমাণ অর্থ মূলধন হিসেবে সংরক্ষণ করতে হয়। এদিকে ঝুঁকি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ব্যাসেল-৩ নীতিমালা অনুযায়ী ব্যাংকগুলোকে ১০ শতাংশ ন্যূনতম মূলধনের পাশাপাশি দশমিক ৬২ শতাংশ হারে অতিরিক্ত মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়। চলতি বছরের জুন শেষে ন্যূনতম মূলধন সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হয়েছে ১১টি ব্যাংক। এছাড়া ব্যাংক খাতে মূলধন সংরক্ষণের হার দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৭৪ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুন শেষে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় এক লাখ ১২ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। আগের বছরের জুন শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ৯০ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা। এ হিসা‌বে গত এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। আগের প্রান্তিক জানুয়ারি থেকে মার্চ এই তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছিল প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা।

বেসরকারি খাতের চার ব্যাংকের মোট মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৭৩০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মূলধন ঘাটতি রয়েছে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের। ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি এক হাজার ৫৭৮ কোটি পাঁচ লাখ টাকা। ঘাটতিতে থাকা অন্য তিন ব্যাংকের মধ্যে এবি ব্যাংকের ৪২২ কোটি ৫২ লাখ টাকা, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ৬৯২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা এবং বিদেশি ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান ৩৭ কোটি ২৮ লাখ টকা মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে।

জানা গেছে, সরকারি ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি তৈরি হলে বাজেট থেকে তার জোগান দিতে হয়। জনগণের করের টাকায় বিভিন্ন সময় মূলধন ঘাটতিতে পড়া ব্যাংকগুলোতে অর্থ জোগান দেয় সরকার। তবে করের টাকায় মূলধন জোগানের বরাবরই বিরোধিতা করে থাকেন অর্থনীতিবিদরা।

অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, সরকারি কয়েকটি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে ধুঁকতে থাকলেও প্রায় ১০ বছর পর গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট থেকে কোনো অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়নি তাদের। বরং অর্থবছরের শেষদিন অর্থাৎ গত ৩০ জুন দুটি ব্যাংকের জন্য মাত্র ১৫১ কোটি ১২ লাখ টাকা ছাড় করা হয়। তবে এই অর্থ মূলধন ঘাটতি পূরণে দেয়া হয়নি। দেয়া হয়েছে ভর্তুকি হিসেবে এবং একটি ব্যাংকের সরকারি অংশের শেয়ার টিকিয়ে রাখার জন্য। যদিও সরকারি ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে মূলধন ঘাটতি পূরণে প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা চাওয়া হয়েছিল।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রতিবছরই জনগণের করের টাকায় ব্যাংকগুলোকে মূলধন ঘাটতি মেটানোর অর্থ দিয়েছে সরকার। কিন্তু অর্থ দেয়ার পরও ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোকে আদৌ অর্থ দেয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। এ কারণেই তাদের কোনো অর্থ দেয়া হয়নি।