সু চি, প্রেসিডেন্টকে আটকের ঘটনায় জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের নিন্দা

সু চি, প্রেসিডেন্টকে আটকের ঘটনায় জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের নিন্দা

জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস

মিয়ানমারের নতুন সংসদের উদ্বোধনী অধিবেশন শুরুর প্রাক্কালে দেশটির স্টেট কাউন্সেলর অং সান সুচি, প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট এবং অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের আটকের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস।

তিনি সেনাবাহিনীর হাতে আইনসভা, নির্বাহী ও বিচারিক ক্ষমতা স্থানান্তরের ঘোষণার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এই ঘটনাগুলো মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক সংস্কারের পথে কঠিন বাধা হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করে।

মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেছেন, ‘গণতন্ত্র, শান্তি, মানবাধিকার এবং আইনের শাসনের ক্ষেত্রে মিয়ানমারের জনগণের প্রতি জাতিসঙ্ঘের সমর্থনকে পুনর্ব্যক্ত করেছেন মহাসচিব।’

২০২০ সালের ৮ নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসিকে (এনএলডি) একটি শক্তিশালী ম্যান্ডেট প্রদান করেছে, এই নির্বাচনের ফলাফলে গণতান্ত্রিক সংস্কারের কঠিন বিজয়ের পথে মিয়ানমারের জনগণের সুস্পষ্ট ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে।

মহাসচিব সামরিক নেতৃত্বকে মিয়ানমারের জনগণের ইচ্ছার প্রতি সম্মান জানাতে এবং গণতান্ত্রিক রীতিনীতি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে যেকোনো মতপার্থক্য সমাধান করা উচিত।

‘সব নেতাকে অবশ্যই মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক সংস্কারের বৃহত্তর স্বার্থে কাজ করতে হবে, অর্থবহ সংলাপে লিপ্ত হওয়া, সহিংসতা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতাকে পুরোপুরি সম্মান করতে হবে,’ বলেছেন জাতিসঙ্ঘের মুখপাত্র।

মিয়ানমারের সামরিক টেলিভিশন বলেছে, সেনাবাহিনী এক বছরের জন্য দেশটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে। সোমবার সকালে সামরিক মালিকানাধীন মায়াওয়াদ্দি টিভিতে এক ঘোষক এই ঘোষণা দেন। সামরিক অভ্যুত্থানের হুমকির বিষয়ে উদ্বেগের পরেই এবং দেশটির নতুন সংসদ অধিবেশন শুরু হওয়ার আগে এই ঘোষণা এসেছে।

প্রতিষ্ঠিত অনলাইন নিউজ সার্ভিস, ইরাওয়াদ্দি জানিয়েছে যে দেশের শীর্ষস্থানীয় নেতা স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি এবং দেশটির রাষ্ট্রপতি উইন মিন্টকে সোমবার ভোরে আটক করা হয়েছে। নিউজ সার্ভিসটি সু চির ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) মুখপাত্র মায়ো নিন্টের বরাত দিয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, আইন প্রণেতা এবং আঞ্চলিক মন্ত্রিসভার সদস্যদেরও হেফাজতে নেয়া হয়েছে।

খবরে বলা হয়েছে, সোমবার ভোরে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান হচ্ছে এবং স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চিকে গৃহবন্দী করে আটক করা হয়েছে, রাজধানীর সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

নেপিডোতে ফোন এবং ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে এবং সু চির ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি পার্টিতে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

গত বছরের নির্বাচনের পর সোমবার মিয়ানমারের আইন প্রণেতাদের সংসদের প্রথম অধিবেশনে যোগ দেয়ার জন্য রাজধানী নেপিডোতে জড়ো হওয়ার কথা ছিল।

মিয়ানমার ভিজ্যুয়াল টেলিভিশন এবং মিয়ানমার ভয়েস রেডিও সকাল সাড়ে ৬টার দিকে ফেসবুকে পোস্ট করে জানায় যে তারা তাদের প্রোগ্রাম সম্প্রচার করতে পারছে না।

৭৫ বছর বয়সী সু চি এখন পর্যন্ত দেশটির সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ এবং সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে কয়েক দশক ধরে অহিংস লড়াইয়ের নেতৃত্ব দেয়ার পরে তিনি দেশের শীর্ষস্থানীয় নেতা হয়েছেন।

গত বছর নভেম্বরের নির্বাচনে অং সান সুচির এনএলডি সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু সেনাবাহিনী নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ তোলে। তবে অভিযোগের পক্ষে প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয় এবং নির্বাচন কমিশন সেনাবাহিনীল অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে। নির্বাচনে ৪৭৬ আসনের মধ্যে সু চির দল সংসদের নিম্ন ও উচ্চ কক্ষে মোট ৩৯৬টি আসনে জয়লাভ করে।

তবে ২০০৮ সালের সামরিক খসড়া সংবিধানের অধীনে মোট আসনের ২৫ শতাংশ সেনাবাহিনীর হাতে রয়েছে এবং বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর পদও সেনাবাহিনীর নিয়োগের জন্য সংরক্ষিত রয়েছে।

সূত্র : ইউএনবি