শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলার রায় ১৭ ফেব্রুয়ারি

শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলার রায় ১৭ ফেব্রুয়ারি

ছবি : প্রতীকী

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় (৭৬ কেজি ওজনের বোমা মামলা হিসেবে পরিচিত) আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি রায় দেবেন হাইকোর্ট। এ মামলায় ফাঁসির রায় অনুমোদনের জন্য নিম্ন আদালত থেকে পাঠানো ডেথ রেফারেন্স ও আসামিপেক্ষের করা আপিল আবেদনের ওপর সোমবার শুনানি সম্পন্ন হওয়ায় আদালত রায়ের দিন নির্ধারণ করেন।

বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার রায়ের দিন নির্ধারণ করে আদেশ দেন। শুনানি সম্পন্ন শেষে আদালত বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ভাষার মাসের সম্মানে বাংলায় রায় দিব।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিত দেবনাথ ও ড. মো. বশির উল্লাহ, সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল মিজানুর রহমান খান শাহীন ও মো. শাহীন আহমেদ মৃধা। আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান, মোহাম্মদ আহসান, মো. নাসির উদ্দিন ও অমূল্য কুমার সরকার (স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী)।

এদিকে শুনানির শেষ দিনে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন আসামিদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার আরজি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।

তবে একজন আসামিরপক্ষে আইনজীবী এস এম শাহজাহান বলেন, অন্য মামলায় মুফতি আব্দুল হান্নানের দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীর ভিত্তিতে এই মামলায় সাজা দেয়ার সুযোগ নেই। তাই আলোচিত আসামি শেখ ফরিদ ওরফে মাওলানা শওকত ওসমান খালাসযোগ্য।

এর আগে ২০১৮ সালের ২ এপ্রিল বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের বেঞ্চে একইবছরের শুনানি শুরু হয়। কিন্তু প্রধান বিচারপতি বেঞ্চটি পুনর্গঠন করায় মামলার শুনানি বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে গতবছর ১৭ জানুয়ারি বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন খানের হাইকোর্ট বেঞ্চে নতুন করে শুনানি শুরু হয়। এই আদালতে মামলাটি বিচারাধীন থাকাবস্থায় রাষ্ট্রপক্ষ কয়েকদফা সময় নেয়। পরবর্তীতে এই বেঞ্চও পুনর্গঠন করা হলে শুনানি থমকে যায়। এ অবস্থায় আবারো বেঞ্চ পুনর্গঠন করা হয়। সর্বশেষ গঠিত বেঞ্চে গতবছর ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন করে শুনানি শুরু হয়।

কোটালীপাড়ায় শেখ লুৎফর রহমান মহাবিদ্যালয়ের উত্তর পাশের একটি চায়ের দোকানের পেছন (তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশ স্থলের পাশে) থেকে ২০০০ সালের ২০ জুলাই ৭৬ কেজি ও পরদিন ৮০ কেজি ওজনের বোমা উদ্ধার করা হয়। এই বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ২০০১ সালের ৮ এপ্রিল ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। পরবর্তীতে আরো নয়জনকে আসামি করে ২০০৯ সালের ২৯ জুন সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয়া হয়।

এরপর ২০১০ সালে মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে পাঠানো হয়। বিচার শেষে ২০১৭ সালের ২০ আগষ্ট রায় দেয় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২। রায়ে ১০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও চার জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এরপর মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য মামলার রায়সহ সকল নথি(ডেথ রেফারেন্স) ওইবছরের ২৪ আগষ্ট হাইকোর্টে পাঠানো হয়। নথি হাইকোর্টে পৌছার পর প্রধান বিচারপতির নির্দেশে জরুরী ভিত্তিতে পেপারবুক তৈরি করা হয় এবং তা বিচারের জন্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিমের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠানো হয়।

নিম্ন আদালতের রায়ে ওয়াসিম আখতার ওরফে তারেক হোসেন ওরফে মারফত আলী, মো. রাশেদ ড্রাইভার ওরফে আবুল কালাম ওরফে শিমন খান, মো. ইউসুফ ওরফে আবু মুসা হারুন ওরফে মোসাহাব মোড়ল, শেখ ফরিদ ওরফে মাওলানা শওকত ওসমান, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বক্কর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই এবং মাওলানা আবদুর রউফ ওরফে আব্দুর রাজ্জাক ওরফে আবু ওমরকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। গুলি করে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দেয়া হয়।

এছাড়া মেহেদি হাসান ওরফে গাজী খান ওরফে আবদুল ওয়াদুদকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং আনিসুল ওরফে আনিস, মো. মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ও সরোয়ার হোসেন মিয়াকে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়।