সামরিক জান্তার হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও মিয়ানমারে চলছে ধর্মঘট

সামরিক জান্তার হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও মিয়ানমারে চলছে ধর্মঘট

ছবি : সংগৃহীত

মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের প্রতিবাদ ও ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সুচিসহ সকল বন্দীদের মুক্তির দাবিতে টানা তৃতীয় সপ্তাহ বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন সেনাশাসন বিরোধী আন্দোলনকারীরা। সামরিক জান্তার সহিংসতার হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও সোমবার দেশটিতে সর্বাত্মক ধর্মঘট পালন করছেন বিক্ষোভকারীরা।

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ তারিখের এই ধর্মঘট ইতোমধ্যেই ‘পাঁচ দুইয়ের’ বিপ্লব নামে পরিচিতি পেয়েছে। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটিতে তারিখের মধ্যে সংখ্যাগত মিলকে ‘শুভ’ বিবেচনা থেকে বিক্ষোভকারীরা সোমবারের এই ধর্মঘটকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন। দিনটিকে তারা ১৯৮৮ সালের ৮ আগস্টের ‘চার আটের’ তৎকালীন সমাজতান্ত্রিক সরকারবিরোধী বিক্ষোভের সঙ্গে তুলনা করছেন।

চীন সীমান্তে উত্তরের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে থাইল্যান্ড সংলগ্ন দক্ষিণের সংকীর্ণভূমি পর্যন্ত মিয়ানমারজুড়ে সামরিক শাসনবিরোধী ধর্মঘটে অংশ নিচ্ছেন সাধারণ মানুষ। সকাল থেকেই ধর্মঘটের অংশ হিসেবে বিভিন্ন শহরের দোকানপাট বন্ধ রাখা হয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা যায়, রাজধানী নেপিডোতে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের জলকামান ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে ছত্রভঙ্গ বিক্ষোভকারীদের কয়েক জনকে আটক করে পুলিশ।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিও ক্লিপে এক নারী বলেন, ‘তারা আমাদের ধাওয়া করছে এবং গ্রেফতার করছে। আমরা শুধু শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করছিলাম।’এদিকে দেশটির বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নিরাপত্তা বাহিনীর বিপুল সদস্যকে মোতায়েন করা হয়েছে।

এর আগে সোমবার রাষ্ট্রীয় এমআরটিভিতে সতর্ক করে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বিক্ষোভকারীরা এখন এমন এক সংঘাতের পথে জনগণকে উস্কানি দিচ্ছে, বিশেষকরে আবেগপ্রবণ কিশোর ও তরুণদের, যেখানে তারা প্রাণ হারাতে পারে।’

১ ফেব্রুয়ারি তাতমাদাও নামে পরিচিত মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী দেশটিতে সেনা অভ্যুত্থান ঘটায় এবং প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট ও স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চিসহ রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার করে। সাথে সাথে দেশটিতে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। গত বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে বিতর্কের জেরে এই অভ্যুত্থান ঘটায় সামরিক বাহিনী।

সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে মিয়ানমারের বিভিন্ন শহরেই বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা অং সান সু চিসহ বন্দী রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তির পাশাপাশি সামরিক শাসন প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ইরাবতীর তথ্যানুসারে, সেনা অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত দেশটিতে পাঁচজন নিহত ও শত শত বিক্ষোভকারী আহত হয়েছেন।

অভ্যুত্থানের পর থেকে এখন পর্যন্ত পাঁচ শ’র বেশি ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভ্যুত্থানের শুরু থেকে গ্রেফতার থাকা ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সুচির বিরুদ্ধে সামরিক জান্তা সরকার দুইটি অভিযোগ এনেছে, যার মধ্যে একটিতে অনিবন্ধিত ওয়াকিটকি ব্যবহার করায় তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।আগামী ১ মার্চ তার অভিযোগের শুনানি করা হবে।

সূত্র : রয়টার্স ও ইরাবতী