পাবনায় নিহত পুলিশ সদস্যদ্যের স্মরণে মেমোরিয়াল ডে

পাবনায় নিহত পুলিশ সদস্যদ্যের স্মরণে মেমোরিয়াল ডে

ছবি : প্রতিনিধি

পাবনা অঞ্চলের পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত বিভিন্ন সময়ে জননিরাপত্তা এবং আইন শৃংখলা রক্ষায় জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের স্মরণে পুলিশ মেমোরিয়ার ডে পালন করেছে পাবনা জেলা পুলিশ। সোমবার(১ মার্চ) জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয় চত্বরে স্থাপিত শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে প্রয়াত সকল শহীদ পুলিশ সদস্য স্মরণে সম্মান প্রর্দশন করে পুস্পার্ঘ অর্পন করে পুলিশ সুপারসহ শহীদ পরিবারের সদস্যরা।

পরে জেলার সকল কর্মরত পুলিশ সদস্য ও প্রয়াত শহীদ পুলিশ সদস্যদের পরিবারের সকলকে সাথে নিয়ে একটি স্মরণ পদযাত্রা বের করা হয়। স্মরণ পদযাত্রাটি পাবনা পুলিশ সুপার কার্যালয় থেকে বের হয়ে পুলিশ লাইনস অডিটরিয়ামে গিয়ে শেষ হয়। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে পুলিশ লাইনস অডিটরিয়ামে আমন্ত্রিত অতিথিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা ও শহীদ পুলিশ সদস্যদের পরিবারের সদস্যদের সম্বর্ধনা।

পাবনার পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান বিপিএম‘র সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন  পাবনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ রেজাউল রহিম লাল, পিবিআই’র পুলিশ সুপার ফজলে এলাহী, সিআইডির পুলিশ সুপার খান মোহম্মদ রিজওয়ান, পাবনার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট জাহেদ নেওয়াজ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার হাবিবুর রহমান হাবিব, পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমান প্রমুখ। পাবনা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামিমা আক্তার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলমসহ জেলার সকল থানার অফিসারগন এসময় উপস্থিত ছিলেন।

১৯৭১ সালে পাবনায় পাক হানাদার বাহিনীর সাখে সম্মুখ যুদ্ধে ২১ জন বিভিন্ন সময়ে কর্তকব্যরত অবস্থা ও করোনাকালীন সময়ে আরো ২৩ জন পুলিশ সদস্য শহীদ হন। এই ৪৪ জন পুলিশ সদস্যদের প্রতি সম্মান জানিয়ে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে দেয়ালে স্থাপন করা হয়েছে শহীদদের ছবি দিয়ে পুলিশ মেমোরিয়াল ওয়াল। পরে ফিতা কেটে ও মোনাজামের মাধ্যমে পাবনার পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান এর উদ্বোধর করেন।

আলোচনা সভায় পুলিশ সুপার মোঃ মহিবুল ইসলাম খান বলেন, আমরা লড়েছি,আমরা মরেছি সেই ১৯৭১ থেকে। আমরা গড়েছিলাম রাজারবাগে প্রথম প্রতিরোধ, হলি আর্টিজানে জঙ্গির গ্রেনেডে জীবন দিয়েছি আমরা, কখন আগুনে ধলসে গেছি আমরা, কখনও বোমায় ক্ষতবিক্ষত হয়েছি, কখনও ঘাতকের ধারাল চাপাতি নেমে এসেছে আমাদের কাধ বরাবর, অতিমারীতে যখন সবাই হোম কোয়ারেনটাইনে থেকেছে আমরা তখন বরাবরের মতই বাইরে, চেকপোস্ট, হোম কোয়ারেনটাইন, হাসপাতালে রোগী নেয়া, লাশের দাফন করতে গিয়ে আমরা আক্রান্ত হয়েছি হাজার হাজার, মৃত্যুবরন করেছি প্রায় একশত।

স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত এমন কোন বছর নেই যে বছর পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জীবনদান করেননি। রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে সারা বছর যারা কাজ করেন তাদের বড় একটা অংশ হারিয়ে যান অকাল মৃত্যুতে, যার বেশীরভাগই সড়ক দুর্ঘটনা। কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত  পুলিশ সদস্যদের স্মরণ করার জন্য এই দেশে কোন নির্দিষ্ট দিন ছিলনা ২০১৭ এর আগে, অথচ সারা বিশ্বেই নিহত পুলিশ সদস্যদের আনুষ্ঠানিকভাবে স্মরন করা হয় প্রতিবছরের নির্দিষ্ট দিনে, প্রায় সকল পুলিশ অফিসেই তাদের স্মরণে তৈরী করা হয় মেমোরিয়াল ওয়াল।

২০১৭ সন থেকে প্রতিবছর ১ লা মার্চ পুলিশ মেমোরিয়াল ডে পালন হয়ে আসছে; যদিও সঠিক প্রচারের অভাবে দিনটি সম্পর্কে এখনও অনেকেই জানেন না; তবে যাদের মনে রাখার কথা তারা ঠিকই জানেন, যারা হারিয়েছেন তাদের স্বজনদের তাদের কাছে যেমন তেমনি দেশের তিন লক্ষাধিক পুলিশ সদস্যর কাছে আজকের দিনটি শোকের, সহকর্মীদের মনে করার, তাদের স্বীকৃতি দেয়ার।

 আজ আনুষ্ঠানিক পুস্পস্তবক অর্পন শেষে পাবনা জেলা পুলিশ লাইনের আলোচনা সভায় নিহতের আত্মীয়রা তাদের বক্তব্যর সময় আমাদের মাঝেই খুঁজেছেন তাদের হারানো স্বজনদের, এক কন্যা গর্ব করে বললেন তার পিতা তাকে সারা জীবন সৎ থাকতে শিখিয়েছেন, ছুটির অভাবে একনাগাড়ে ১৫ দিনের বেশী তাদের পিতা তাদের সাথে থাকতে পারেননি, আজ যারা এসেছিলেন তাদের অধিকাংশই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে অসহায় ও দিশেহারা; তাদের নানা আকুতি শুনে বুকের গহীন থকে উঠে আসছিল দীর্ঘশ্বাস মান্যবর আইজিপি মহোদয় গত বছরে নিহত পুলিশ সদস্যদের জন্য উপহার ও নগদ টাকা পাঠিয়েছেন, তাঁর এই বদান্যতায় আপ্লুত পরিবারের সদস্যরা।

আমি নিজে পুলিশে এসেছি পুলিশকে মনেপ্রানে ধারন করেই, তাই সহকর্মীদের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য কুড়িগ্রামের মত পাবনাতেও পুলিশ মেমারিয়াল ওয়াল তৈরী করলাম, অনেকটা তাড়াহুড়া করেই; পুরো দেয়ালটা ভরে গেছে কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত ৪৪ জন পুলিশ সদস্যর ছবিতে যারা পাবনা জেলার স্থায়ী বাসিন্দা; আমি কখনওই চাইনা এই দেয়ালে আর একটা ও ছবি যুক্ত হোক; নিদের পরিবার নিয়ে চাকরী শেষে স্বাভাবিক মৃত্যু হোক সকল পুলিশ সদস্যর, ভাল থাকুক আমাদের স্বজনেরা। ১৯৭১ এ রাজারবাগে যারা থ্রি নট থ্রি থেকে গুলি ছুড়ছিল আমরা তাদের যোগ্য উত্তরসূরী, মৃত্যুর পর কফিনে জাতীয় পতাকা না পেলেও পুলিশ পতাকা প্রাপ্তির সম্মানটুকু হোক সকল পুলিশ সদস্যর জন্য বড় পাওয়া।