আগ্রহ অনাগ্রহের মধ্যে চলছে পাবনা টিকাদান

আগ্রহ অনাগ্রহের মধ্যে চলছে পাবনা টিকাদান

আগ্রহ অনাগ্রহের মধ্যে চলছে পাবনা টিকাদান -

আগ্রহ অনাগ্রহের মধ্যে চলছে পাবনা টিকাদান। বিভিন্ন বয়সের মানুষের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। টিকা নেওয়ার ব্যাপারে দ্বিধা দ্বন্দ্বের মধ্যেই চব্বিশতম দিন বুধবার (৩ মার্চ) পর্যন্ত পাবনা জেলার নয় উপজেলায় করোনার টিকা গ্রহণকারীর সংখ্যা ৪৩ হাজার ৫শ’ ৪৪  ছাড়িয়েছে। তবে শুরুর দিকের চেয়ে টিকা গ্রহণকারীর সংখ্যা কিছুটা কমে আসছে বলে টিকাদান কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে। পাবনায় টিকা গ্রহণকারীর সংখ্যা প্রথম দিকে বৃদ্ধি ফেলেও এখন অনেক কমে গেছে। স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গ্রাম এলাকায় বিশেষ করে, উপজেলা পর্যায়ে টিকা গ্রহণকারীর সংখ্যা কম।

পাবনা আড়াই শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল কাম পাবনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের টিকাদান কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, সকাল ১০ থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত টিকা নিতে কিছুটা লাইন দেখা গেলেও তারপর থেকে দু-চার জন করে আসছেন আর টিকা নিচ্ছেন। কর্তব্যরত একজন স্বাস্থ্যকর্মী জানিয়েছেন, টিকা নেওয়ার ব্যাপারে প্রথমদিকে সাধারণ মানুষের মাঝে আগ্রহ দেখা গিয়েছিল। এখন তা অনেক কমে গেছে।

পাবনা ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাঃ কে এম আবু জাফর টিকা গ্রহণকারীর সংখ্যা ৪৩,৫৪৪ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মধ্যম বয়সের মানুষ টিকা নিচ্ছেন বেশি। বুধবার ( ৩ মার্চ) পর্যন্ত  নয় উপজেলায় টিকা নেওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেণ ৫৬,৯২৩ জন। এ তারিখ পর্যন্ত জেলায় টিকা নেওয়ার হার ৫১ দশমিক ৮৪। 

টিকা সম্পর্কে স্থানীয় দৈনিক বিশ্ববার্তার সম্পাদক শহিদুর রহমান শহিদ (৫৩) বলেন,‘শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রত্যেককে টিকা টিকা নেয়া উচিৎ।’  

টিকাগ্রহণকারী সাংবাদিক সুশান্ত কুমার সরকার জানান,‘টিকা নেওয়ার ব্যাপারে পক্ষে বিপক্ষে যায়ই থাকুক না কেন; টিকা সবাইকে নেয়া উচিৎ বলে আমি মনে করি।’

টিকা গ্রহণকারী পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমান (৫২) বলেন, যেহেতু মানুষের মধ্যে করোনা সম্পর্কে ভয় বা আতঙ্ক রয়েছ; সেহেতু মনবল বৃদ্ধি এবং সুস্থ্য থাকার জন্য টিকার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

টিকা  না নেওয়া সত্তোর্ধ বয়সের মাধ্যমিক স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক মোঃ জাহিদ হাসান বলেন,‘ টিকা নেওয়া দরকার। আমার এজমা রয়েছে তাই টিকা নিতে দেরি হচ্ছে। তিনি প্রশ্ন করেণ টিকায় কী আসলেই কাজ হচ্ছে?

পাবনা সদর উপজেলার টেবুনিয়া বাজারে একটি চায়ের দোকানে অধিকাংশ মধ্যম বয়সী ৭/৮ জন চা পানকারীরা কেউই টিকা নেননি। টিকা কেন নিচ্ছেন না জানতে চাইলে জবাব আসে-আল্লাহ্ দিচ্ছেন করোনা। টিকা ফিকা নিয়ে কী হবি? ৫০/৫২ বয়সের একজন বলেই ওঠলেন, আমাগোর পা ফাটাদের কিছুই হবি না। সাহেবরা নিতে থাক। গ্রামে করোনা নেই। সব মরে শহরে।’

ওই বাজারের সত্তোর্ধ বয়সের একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী  জানান,‘টিকা সম্পর্কে আমাদেরকে ভালোভাবে কেও বোঝাননি। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে এ ব্যাপারে গ্রামা লে সাড়া জাগানো উচিৎ।’

টিকার ব্যাপারে খোঁজ খবর নিতে গেলে দেখা যায়, শহরে যতটা টিকা নিয়ে আলোচনা দেখা যায়; গ্রামা লে তেমনটি মনে হয়নি। 

স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ সদস্য, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, গণমাধ্যমকর্মীসহ বিভিন্ন স্তরের বিপুল সংখ্যক মানুষ টিকা নিচ্ছেন। তবে নারীদের টিকা নেওয়ার আগ্রহ খুবই কমই লক্ষ করা গেছে। টিকা গ্রহণকারী কারও অসুস্থ হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে পাবনা আড়াই শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল কাম পাবনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মোঃ আবুল হোসেন জানান, এই হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে টিকা দান বুথের মাধ্যমে করোনায় টিকা দেওয়া হচ্ছে। টিকা গ্রহণকারীর সংখ্যা কমছে বলে স্বীকার করলেও এটা ঠিক হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, পাবনায় করোনা রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৩৪ হাজার ৭০৩। ফলাফল পাওয়া গেছে ৩৪ হাজার ৬৮৬। এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১,৭১৯। মারা গেছেন ১১ জন। সুস্থ্য হয়েছেন ১,৪৩২।