মশা মারতে ঢাকায় ব্যাঙ ছাড়ছেন কর্মকর্তারা

মশা মারতে ঢাকায় ব্যাঙ ছাড়ছেন কর্মকর্তারা

মশা মারতে ঢাকায় ব্যাঙ ছাড়ছেন কর্মকর্তারা

মশার যন্ত্রণায় ঢাকাসহ পুরো দেশবাসী অতিষ্ঠ। মশা দমনে একের পর এক কৌশল বা পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলছে না। এমন পেক্ষাপটে এক নয়া কৌশল কাজে লাগাতে চাচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। যদিও এর আগে একাধিক নয়া কৌশল প্রয়োগ করে খুব একটা সুফল মেলেনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সিটি করপোরেশন এলাকার মশা মারতে এবার জলাশয়গুলোতে ব্যাঙের চাষ করা হবে। এরই মধ্যে পরীক্ষামূলক প্রকল্প হিসেবে ডিএসসিসির অন্তত ১০টি জলাশয়ে কয়েক হাজার ব্যাঙাচি বা ব্যাঙের পোনা ছাড়া হয়েছে। তবে এতে কতটা সুফল মিলবে তা এখনই বলা সম্ভব নয় বলে অনেকে মনে করেন। তাছাড়া রাজধানীর নোংরা ও বিষাক্ত পানির জলাশয়গুলোতে ব্যাঙের পোনা বেঁচে থাকতে পারবে কি-না এ নিয়েও কেউ কেউ সংশয় প্রকাশ করেছেন।

ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী বিবিসিকে বলেছেন, ‘ব্যাঙের পোনাগুলোকে জলাশয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এই পোনা পূর্ণাঙ্গ ব্যাঙে পরিণত হবে। তখন তারা মশার লার্ভা খেয়ে ফেলতে শুরু করবে।

তিনি আরো বলেন, ‘মূল পরিকল্পনা হচ্ছে, এই ব্যাঙাচি পূর্ণাঙ্গ ব্যাঙ হবে। এরা বংশবিস্তার করবে। মশার লার্ভা খেয়ে ক্রমে তারা মশার বিস্তার ঠেকিয়ে দেবে।’

এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যাঙের পোনা সংগ্রহ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

মশার আক্রমণে অতিষ্ঠ নগরবাসীকে স্বস্তি দিতে এর আগেও গাপ্পি মাছসহ বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিতে দেখা গেছে সিটি করপোরেশনগুলোকে। মেয়র সাঈদ খোকনের সময় ঢাকা দক্ষিণ সিটির জলাশয়ে গাপ্পি মাছ, হাঁস, তেলাপিয়া মাছ ইত্যাদি ছেড়ে মশা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করতে দেখা গেছে। যদিও এসবের কোনো উদ্যোগ সফল হয়েছে বলে শোনা যায়নি।

কীভাবে মশা দমন করবে ব্যাঙ
এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী বলেছেন, সিটি করপোরেশন মূলত চারভাবে মশা নিধন করে। মশার জন্মের উৎস ধ্বংস করে, জৈবিক পদ্ধতিতে মানে অন্য কোনো প্রাণীকে দিয়ে লার্ভা নির্মূলের ব্যবস্থা করে, ওষুধ ছিটিয়ে ও ফগার মেশিন দিয়ে ধোঁয়া ছিটিয়ে।

ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, জৈবিক পদ্ধতি হচ্ছে, খাল, জলাশয়, নালাসহ বিভিন্ন বদ্ধ জলাশয়ে অন্য প্রাণী বিচরণের ব্যবস্থা করা। যাতে ওই সব প্রাণী যারা ছোটখাট পোকামাকড় খেয়ে জীবনধারণ করে, এদের খাবারের তালিকায় মশা ও তাদের লার্ভা যুক্ত হলে মশা বংশবিস্তার করতে পারবে না। ফলে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতেই মশা নিধন হবে।

বদ্ধ জলাশয়ে পানিপ্রবাহ খুব বেশি না থাকায় দ্রুত মশার বংশবিস্তার হয় উল্লেখ করে আমিন উল্লাহ নূরী বলেন, ঢাকা দক্ষিণে সরকারি জলাশয়ের সংখ্যা ১০টি। এর সবগুলোতেই ব্যাঙ ছাড়া হয়েছে। এ কার্যক্রমে সফল হলে পরবর্তীকালে বেসরকারি জলাশয়েও ব্যাঙ ছাড়া হবে।

ব্যাঙ বাঁচবে তো?
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক কবিরুল বাশার বিবিসিকে বলেছেন, ‘পরীক্ষামূলকভাবে যেকোনো কিছুই করা যেতে পারে। তবে গবেষক হিসেবে আমি মনে করি, ঢাকা শহরের পানি প্রচণ্ড দূষিত। এতে ব্যাঙের পোনা বেঁচে না থাকারই কথা। যদি বেঁচেও থাকে এগুলো মশা মারার জন্য কতটা সক্ষম থাকবে তা নিয়ে সংশয় আছে।’

তিনি বলেন, কার্যকরভাবে মশক নিধনের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করে ব্যবস্থা নিলে তা ফলপ্রসূ হতে পারে।

মশা মারতে যত অভিনব উদ্যোগ
মশা মারতে কামান লাগার প্রবাদ অনেক পুরানা। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মশার উপদ্রব এমনই বেড়েছে যে এ থেকে রেহাই পেতে অনেক ধরনের চেষ্টাই করছেন নগরবাসী। বেসরকারি একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা নাসরিন মুন্না বলেছেন, ‘বাসায় তো সব জানালায়, ভেন্টিলেটরে, মূল দরজা ও বারান্দার দিকের দরজাগুলোতে নেট লাগিয়েছি। কিন্তু অফিসে কী করা যাবে? এখানে তো এয়ারকন্ডিশনার চলে। মানে হচ্ছে দরজা জানালা বন্ধ থাকে। তবুও মশা আছে, কামড়াচ্ছেও।’

মুন্না ধানমন্ডি এলাকাতে কাজ করেন। অনলাইন বুটিক ব্যবসার সাথে জড়িত ইশরাত জাহান থাকেন ঢাকার শঙ্করে। তিনি বলেছেন, ‘বাড়ি ও কারখানা দুই জায়গাতেই মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে গেছি। সারাক্ষণ ধূপ জ্বালিয়ে রাখছি। হাতে মশা মারার ব্যাট থাকছে। কিন্তু নিস্তার পাচ্ছি না।’

মশার বংশ বিস্তার গত কয়েক বছর ধরেই বাড়ছে। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বিগত বছরের তুলনায় এবার ঢাকায় মশার ঘনত্ব চারগুণ বেড়েছে।

গত কয়েক বছর ধরে ঢাকার দু’সিটি করপোরেশন মশা মারার জন্য বিভিন্ন অভিনব পদক্ষেপ নিতে দেখা গেছে। ২০১৭ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ঢাকার নর্দমাগুলোতে গাপ্পি মাছের পোনা ছাড়া হয়েছিল। গাপ্পি মাছগুলো এখনো বেঁচে আছে কি-না এ বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য নেই দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের হাতে।

২০২০ সালে ঢাকার তিনটি জলাশয়ে ছাড়া হয়েছিল তেলাপিয়া মাছ ও হাঁস। হাঁসগুলোর মধ্যে কয়েকটি মারা গেছে। তবে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আমিন উল্লাহ নূরী বলেছেন, ‘যে তিনটি জলাশয়ে হাঁস ও তেলাপিয়া মাছ ছাড়া হয়েছে, তার একটি হচ্ছে ধানমন্ডি লেক। ওখানে প্রোগ্রেস ভালো। পানিতে লার্ভা এখন অনেক কম। মশার উপদ্রবও কমেছে।’ তার দাবি, মশা নিধনের জন্য সব ধরনের চেষ্টাই করা হচ্ছে।

সূত্র : বিবিসি