সৈয়দপুর-বিরাটনগর বিমান রুট হলে বাংলাদেশ ও নেপালের যে সুবিধা

সৈয়দপুর-বিরাটনগর বিমান রুট হলে বাংলাদেশ ও নেপালের যে সুবিধা

সৈয়দপুর-বিরাটনগর বিমান রুট হলে বাংলাদেশ ও নেপালের যে সুবিধা

নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারীর ঢাকা সফরে সৈয়দপুর ও বিরাটনগরের মধ্যে বিমান রুট চালুর বিষয়টি নতুন করে উঠে এসেছে আলোচনায়।

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় সৈয়দপুরের আর নেপালের বিরাটনগরের মধ্যে এই বিমান রুটটি চালু হলে বাণিজ্য ও পর্যটন ছাড়াও আঞ্চলিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন গবেষকরা।

কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন যে, গত কয়েক বছর ধরেই নেপাল এ প্রস্তাব দিয়ে আসছে । ২০২০ সালেই বাংলাদেশ ও নেপালের কর্মকর্তারা এ আকাশপথের বিষয়ে নীতিগতভাবে একমতও হয়েছিলেন।

আর সোমবার ঢাকায় এসে নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারী স্বয়ং এই বিমান রুটের প্রস্তাব তুলে ধরেছেন।

গবেষক ডঃ খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলছেন, দু দেশের জন্যই এটি ইতিবাচক হবে বলে মনে করেন তিনি।

"নেপালের সব আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য ভারতীয় বন্দরের ওপর নির্ভর করতে হয়। সেখানে আবার তাদের জন্য সময় বেধে দেয়া থাকে। ফলে তাদের দারুণ সমস্যায় পড়তে হয়। আবার নেপাল সীমান্তেও অনেক সময় লাগে। এসব নানা কারণে দেশটি অনেক দিন ধরেই বিকল্প রুট খুঁজছিল," বলছিলেন তিনি।

তিনি বলেন তৃতীয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে ব্যবহার করে তাদের পণ্য আমদানিতে সুবিধা হবে সৈয়দপুরকে ব্যবহার করতে পারলে।

"নেপালের জন্য তরল জ্বালানী আমদানির ক্ষেত্রে তারা সৈয়দপুরকে ব্যবহার করতে পারবে। এ নিয়ে ভারতের সাথে তাদের সমস্যা হয়। ফলে তারা ভারতে এড়িয়ে আমদানি সচল রাখার উপায় খুঁজছে"।

 

আবার নেপালের বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে যাদের জন্য বিরাটনগর হয়ে বাংলাদেশে আসা যাওয়া সময় ও খরচ বাঁচাবে অনেক।

গোলাম মোয়াজ্জেম বলছেন মূলত জরুরি পণ্য অন্য দেশ থেকে এনে নেপালে নেয়ার জন্য ভারতকে এড়িয়ে অন্য আরেকটি জায়গা দরকার নেপালের এবং তার জন্য সৈয়দপুরই সবচেয়ে ভালো হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

"বাংলাদেশের সাথে নতুন বিমান রুটের পাশাপাশি তারা চীনের সাথে রেল যোগাযোগ তৈরি করছে। এর উদ্দেশ্য আসলে হলো ভারতের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো"।

যদিও ২০১৯ সালের অক্টোবরে ভারত সফরের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, "আমি বহু আগেই ভুটান এবং নেপালকে আমরা প্রস্তাব দিয়েছি যে নেপাল ভুটান যদি চায় তাহলে আমাদের সৈয়দপুর এয়ারপোর্ট ব্যবহার করতে পারে এবং ভারতের ঐ অঞ্চলে সীমান্তে যে প্রদেশগুলো তারাও এই এয়ারপোর্ট ব্যবহার করতে পারে"।

সেসময় এও বলা হয়েছিল, সৈয়দপুরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পরিণত করার কাজ চলছে। বছর চারেকের মধ্যে অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ শেষও হয়ে যাবে।খোঁজ নিয়ে জানা যাচ্ছে সৈয়দপুরে রানওয়েসহ অন্যান্য অবকাঠা উন্নয়নের কাজ এখন চলছে।

বাংলাদেশের কী লাভ

নেপাল এখন বাংলাদেশী পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয় কিন্তু ঢাকা-কাঠমান্ডু রুটে খরচ অনেক বেশি আবার ভারতের ওপর দিয়ে গেলে ট্রানজিট ভিসা নেয়া অনেকের জন্য সহজ হয়ে ওঠেনা।ফলে সৈয়দপুর থেকে বিমানে যেতে পারলে কম খরচে ও স্বল্প সময়ে সরাসরি নেপালে যাওয়ার একটি সুযোগ তৈরি হবে বলে মনে করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষক সায়মা হক বিদিশা।

"তবে সঠিক পরিকল্পনা হলে নেপাল বাংলাদেশের জন্য একটি সম্ভাবনাময় বাণিজ্যিক ক্ষেত্র হয়ে উঠবে এজন্য কানেকটিভি যত বেশি হবে ততই লাভ হবে। একদিকে নেপাল আমদানি নির্ভর দেশ। তাই বাংলাদেশের নৌ বন্দর, বিমানবন্দর, রেলপথ ব্যবহার করে তারা পণ্য আমদানি রপ্তানি করলে এটা অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলবে। আবার নেপালের ক্রমবর্ধমান বাজারের সুবিধা নেয়ার সুযোগ আছে বাংলাদেশের হাতে"।

তিনি বলেন প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আসায় নেপালে সাম্প্রতিক সময়ে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এসেছে এবং চাহিদাতেও পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু সে অনুপাতে শিল্প অবকাঠামো বাংলাদেশের চেয়ে দুর্বল।"ফলে সংযোগ বাড়িয়ে নেপালের বাজার থেকে অনেক কিছু নেয়ার আছে বাংলাদেশের," বলছিলেন তিনি।মূলত বাংলাদেশ এখন পাটজাত পণ্য, ব্যাটারি, তৈরি পোশাক, প্রসাধনী পণ্য, ঔষধসহ বেশ কিছু পণ্য নেপালে রপ্তানি করছে।

গত অর্থবছরে নেপালে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ৪৬ মিলিয়ন ডলার আর আমদানির পরিমাণ ১৫ মিলিয়ন ডলারের মতো।ঢাকা থেকে কাঠমান্ডু আকাশপথে কিংবা স্থলপথে ভারতের ওপর দিয়ে পণ্য আনা নেয়ার পাশাপাশি আরেকটি রুট আকাশপথে চালু হলে সময় ও খরচ বাঁচানোর অনেক সুযোগ তৈরি হবে বলে আশা করছে উভয় দেশের কর্মকর্তারাই।

ঢাকায় কর্মকর্তারা বলছেন, সৈয়দপুর থেকে আকাশপথে যোগাযোগ হলে পর্যটনের সুবিধা যেমন বাড়বে তেমিন নেপাল তার পণ্য আমদানি রফতানিতে বাংলাদেশকে ব্যবহার করতে পারবে -যা বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক হবে বলেই মনে করছেন তারা।এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ সরকারও সাম্প্রতিক সময়ে সৈয়দপুর বিমানবন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে কাজ শুরু করেছে।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলছেন সৈয়দপুরের নামে নেপালের বিমান যোগাযোগ শুরু হলে বাংলাদেশ বিমানের জন্যও এটি বড় সুবিধা এনে দেবে।"পর্যটন ও আঞ্চলিক অর্থনীতির জন্য এটি খুব কাজে লাগবে। এটি চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারেও নেপালকে আরও বেশি উৎসাহিত করবে," বলছিলেন তিনি।

প্রসঙ্গত বাংলাদেশ থেকে এখন কাঠমান্ডু যেতে বিমানে এক ঘণ্টারও বেশি সময় লাবে অন্যদিকে সৈয়দপুর-বিরাটনগর রুটে সময় লাগবে সর্বোচ্চ বিশ মিনিট আর খরচও কম হবে বলে পর্যটন ক্ষেত্রেও এটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সূত্র : বিবিসি