মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ৭ বছরের শিশু নিহত

মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ৭ বছরের শিশু নিহত

নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে ফাইল চিত্র- ছবি: সংগৃহীত

মিয়ানমারে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে সাত বছর বয়সী এক কন্যা শিশু নিহত হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, গত মাসের সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে জানা-শোনার মধ্যে এটিই সবচেয়ে কম বয়সী ভুক্তভোগী। নিহত মেয়েটির পরিবার বলছে, সে তার বাড়ি মান্দালয় শহরেই তাকে হত্যা করা হয়েছে।

১ ফেব্রুয়ারি সামরিক বাহিনী ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর থেকেই বিক্ষোভ চলছে মিয়ানমারে। অধিকার রক্ষা সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন বলছে, এ পর্যন্ত যারা প্রাণ হারিয়েছে তাদের মধ্যে অন্তত ২০ জন শিশু।

সামরিক বাহিনী বলছে, বিক্ষোভে এ পর্যন্ত ১৬৪ জন নিহত হয়েছে। তবে অধিকার রক্ষা গ্রুপ অ্যাসিসটেন্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারস-এএপিপি এর দাবি, নিহতের সংখ্যা অন্তত ২৬১ জন।

এর আগে মঙ্গলবার বিক্ষোভাকারীদের মৃত্যুর ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। তবে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য তারা বিক্ষোভকারীদেরকেই দায়ী করেছে।

সামরিক বাহিনীর এক মুখপাত্র বলেন, সহিসংতা এবং অগ্নিকাণ্ডের পেছনে মূলত সেনা অভ্যুত্থান-বিরোধী বিক্ষোভই দায়ী।

মান্দালয়ের শেষকৃত্য সেবা সংস্থার এক কর্মী বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন যে, সাত বছর বয়সী ওই শিশুটি বুলেটের ক্ষতের কারণে মারা গেছে।

স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম মিয়ানমার নাউ তাদের প্রতিবেদনে বলছে যে, সেনারা তার বাবাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়ে। কিন্তু সেটি তার পরিবর্তে ওই শিশুটিকে আঘাত করে। কারণ বাড়ির ভেতরে বাবার কোলে বসে ছিল শিশুটি।

নিহত শিশুটির নাম খিন মিও চিত। ত্রাণকর্মীরা বলছেন, উদ্ধারকারী দল তাকে দ্রুত চিকিৎসা সেবার আওতায় নিয়ে এলেও শেষ পর্যন্ত আর বাঁচাতে পারেননি। পরিবারের সদস্যরা বলছে তার ১৯ বছর বয়সী ভাইকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি সামরিক বাহিনী।

এক বিবৃতিতে সেভ দ্য চিলড্রেন বলেছে, ওই মেয়েটির মৃত্যুতে তারা ‘আতঙ্কিত’। এই ঘটনাটি মান্দালয়ে ১৪ বছর বয়সী আরেক শিশু মারা যাওয়ার পর দিনই ঘটলো।

‘এই দুটি শিশুর মৃত্যুর ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক কারণ নিহত হওয়ার সময় তারা বাড়িতেই ছিল যেখানে তাদের অন্তত সুরক্ষিত থাকার কথা। আসল বিষয়টি হচ্ছে যে, প্রায় প্রতিদিনই এতো শিশু মারা যাচ্ছে যে, বোঝা যাচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনীর আসলে মানুষের জীবনের প্রতি কোন সম্মান নেই,’ গ্রুপটি বলছে।

মিয়ানমার সম্পর্কে কিছু তথ্য
১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা পায় মিয়ানমার। আধুনিক ইতিহাসের বেশিরভাগ সময়ই কেটেছে জান্তা শাসনে।

২০১০ সালের পর থেকে নিধি-নিষেধ কমতে থাকে, যার জের ধরে ২০১৫ সালে একটি মুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং এর পরের বছর বিরোধী নেত্রী অং সান সু চির নেতৃত্ব সরকার গঠিত হয়।

২০১৭ সালে পুলিশের ওপর রোহিঙ্গা জঙ্গিদের হামলার জবাবে অভিযান শুরু করে সামরিক বাহিনী। যার কারণে ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পাশের দেশ বাংলাদেশে গিয়ে আশ্রয় নেয়। এই ঘটনাকে জাতিসঙ্ঘ ‘জাতিগত নির্মূলের পাঠ্যবইয়ের উদাহরণ’ বলে উল্লেখ করে।
সূত্র : বিবিসি