সাক্ষাতে সালাম : মুসলিম সংস্কৃতি

সাক্ষাতে সালাম : মুসলিম সংস্কৃতি

ফাইল ছবি

নিদর্শন। ইসলামী সংস্কৃতি। মুসলমান পরিচয়ের প্রথম পর্ব। কথার প্রথম সম্বোধন। পরস্পরের প্রতি শান্তি কামনায় সহজ শুদ্ধতম উপায়। মহাব্বত বৃদ্ধির পাথেয়। ভালোবাসা প্রকাশের প্রথম পাঠ। পৃথিবীর নানান ধর্মে দেখা-সাক্ষাতে, কথা-বার্তায় সম্বোধন হিসাবে বিভিন্ন কথা উক্তি রয়েছে। সে সবে প্রাণ নেই। সজীবতা নেই। আবেদন নেই। মহব্বত সৃষ্টির গন্ধ নেই। কিন্তু ইসলামে সাক্ষাতের সম্ভাষণে যে কথা বা সালাম রয়েছে তা অতুলনীয়। ভাবে ভঙ্গিতে প্রকাশে মাধুর্যতায় উৎকর্ষের চূড়ায় এবং অনন্য। সালাম দাতাগ্রহীতার প্রাণে শরীরে ছুয়ে যায় সালামের শিহরণ।

আল্লাহ পাক মুসলিম জাতিকে সালামের শিক্ষা দিয়েছেন। সাক্ষাতে সালাম করতে বলেছেন। কারো অনুমতি নিতে সালামের সম্বোধন করতে বলেছেন। সালামকে ইসলাম ধর্মের সাক্ষাতের প্রথম সোপান বলে ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ বলেন- “হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজেদের ঘর ব্যতিত অন্যের ঘরে প্রবেশ করো না, যতক্ষণ না তার বাসিন্দাদের থেকে অনুমতি নাও এবং তাদের সালাম করো”। (সূরা নূর  ২৮)।

মুসলমান পরস্পর সালামের মাধ্যমে কথা বার্তা, আচার ব্যবহার সর্বোপরি সব কিছু আরম্ভ করবে এটাই প্রাণের ধর্ম ইসলামের শিক্ষা। মহান প্রতিপালকের চাহিদা। আল্লাহ মানব জাতিকে সালাম দিতে বলেছেন এবং উত্তর দেবার পদ্ধতি বলে দিয়েছেন। ব্যক্তি যে কথায় সালাম দিবে উত্তরদাতা উত্তম কথায় সালামের জবাব দিবে। অথবা সালামকারীর কথা রেপিট করবে। আল্লাহ বলেন- “যখন কেউ তোমাদের শরীয়ত মোতাবেক সালাম করে তোমরাও ভাল কথায় তাদের সালাম করো অথবা সেই কথাগুলোই বলে দাও”। (সূরা নিসা ৮৬)। 

সালাম  দেয়ার শিক্ষা আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম হজরত আদম আঃ কে দিয়েছেন। তাঁকে কথা বলার প্রথম সম্ভাষণ শিখালেন সালাম দিয়ে। সালামের শব্দ শিখিয়ে ফেরেস্তাদেরকে সালাম করার হুকুম করলেন। এবং বলে দিলেন ফেরেস্তাদের দেয়া প্রদত্ত জবাব হবে তোমার সন্তানদের সালামের জবাব। বুঝিয়ে দিলেন তোমার সন্তানদের কথার প্রথম সূচনা হবে সালামের দারা। পৃথিবী সৃষ্টির সূচনাতে ইসলামে সালামের বিধান ধার্য করা হয়েছে। সালামকে নির্ধারণ করেছেন জগৎবাসীর মহান সম্ভাষণ রুপে। হজরত আবূ হুরায়রা রা: নবি সাঃ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন- “আল্লাহ আদম আ: কে সৃষ্টি করে বললেন, “‘যাও, ফেরেস্তাদের যে দলটি বসে আছে তাদের সালাম করো। আর তারা তোমাকে কি জবাব দেয় শোনো। তারা যা জবাব দিবে তাই হচ্ছে তোমার ও তোমার সন্তানদের জবাব”’। আদম আ: বলেন, ‘আসসালামু আলাইকুম। ফেরেস্তাগণ জবাবে বলেন ‘ওয়ালাইকুম সালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহ’। তারা ওয়ারাহমাতুল্লা বাক্যাটি বৃদ্ধি করেছেন”। (সহীহ বোখারি, সহীহ মুসলিমের সূত্রে রিয়াযুস সালেহীন ৮৪৬)।

মানব সভ্যতা ও সংস্কৃতির শুদ্ধতম পাঠ দিয়েছে ইসলাম। ইসলাম ধর্মের প্রত্যেক কাজ আমলযোগ্য। ইসলাম ধর্মে সালামের অবস্থান শীর্ষে। সালামকে সর্বউত্তম ভালো কর্ম বলে ঘোষণা দিয়েছে বিশ্বনবি মোহাম্মদ সা: । আমর ইবনে আস রা: থেকে বর্ণিত ‘“এক ব্যক্তি রাসুল সাঃ কে প্রশ্ন করল, ইসলামের সবচে’ ভালো কাজ কি? জবাব দিলেন “অভুক্তদের আহার করানো ও চেনা-অচেনা সবাইকে নির্বিশেষে সালাম করা”’। (সহীহ বোখারি ১১)। 

রাসুল সাঃ মানুষকে সালামের ব্যাপক প্রচার প্রসারের কথা বলেছেন। সালামের মাধ্যমে সওয়াব হাসিল হয়। প্রতিটি অক্ষরে নেকী পাওয়া যায়। আগে আগে সালাম দানকারীর সওয়াব অনেক বেশি। মহানবি সাঃ সাহাবী কেরাম রা: কে সালামের প্রচলন ঘটানোর ব্যাপারে জোর তাগিদ করেন। বারা ইবনে আ’যিব রা: থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল সাঃ আমাকে সাতটি বিষয়ের হুকুম দিয়েছেন সে গুলো হচ্ছে, ১. রোগীর শুশ্রুষা করা। ২. জানাযার পেছনে যাওয়া। ৩. হাঁচি দানকারীর আল  হামদুলিল্লাহ বলার জবাবে ইয়ার হামু কাল্লা বলা। ৪. দুর্বল ও বৃদ্ধকে সাহায্য করা। ৫. মযলুমকে সহায়তা দান করা। ৬. সালামের প্রচলন করা।৭. কসম পূর্ণ করা। (সহীহ বোখারি৫১৭৫)। 

সালামের প্রচার প্রসার জান্নাতে যাবার মাধ্যম। জান্নাত লাভের সহজ উপায়। চিন্তা ভাবনাহীনভাবে সালামের প্রচারকারী জান্নাত লাভ করবে। রাসুল সাঃ বলেন, “হে লোকেরা- সালামের ব্যাপক প্রচলন করো, অভুক্তদের আহার করাও। আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো। এবং যখন সবাই ঘুমিয়ে থাকে তেমন সময় গভীর রাতে নামাজ পড়ো। তাহলে তোমরা নির্বিঘ্নে জান্নাতে পবেশ করতে  পারবে”। (সুনানে তিরমিযী ২৪৮৫)।

সালাম ঈমানে পূর্ণতা আনে। ঈমানে মজবুতি পয়দা করে। ঈমান বৃদ্ধির সহায়ক হিসেবে কাজ করে। পরস্পর ভালবাসা সৃষ্টি ও বৃদ্ধি করে। অন্তরে অন্তরে টান তৈরী করে। রাসুল সাঃ বলেন, পরস্পরকে না ভালবাসা পর্যন্ত তোমাদের ঈমান পূর্ণতা  লাভ করবে না। আমি কি তোমাদের এমন কাজের কথা বলব না! যা করলে তোমাদের মধ্যে ভালবাসা বৃদ্ধি পাবে, সে কাজটি হচ্ছে তোমরা নিজেদের মধ্যে ব্যাপক সালামের প্রচলন করো । (সহীহ মুসলিম ৫৪)। 

পৃথিবীর সব ধর্মে দেখা সাক্ষাতে সম্বোধনে সেই ধর্মানুযায়ী বাণী রয়েছে। শান্তি কামনা, সুখ প্রার্থনা এবং ভালো থাকার আশির্বাদ করা হয় ধর্মীয় রীতিনীতিতে। প্রার্থনা করা হয় প্রকৃতির কাছে। ব্যক্তির কাছে। কিন্তু প্রাণের ধর্ম ইসলামে শান্তি বা ভালো থাকার প্রার্থনা করা হয় আপন প্রতিপালকের কাছে। সৃষ্টিকর্তার কাছে সপে দেওয়া হয় বান্দাকে। সম্বোধনে নাম নেওয়া হয় মালিকের। ইসলাম ধর্মের মতো প্রাণময় আবেগময় সম্ভাষণ অন্য কোনো ধর্মে নেই। 

লেখক : প্রাবন্ধিক