পরীক্ষায় পাঠিয়ে প্রতীক্ষায় স্বজন

পরীক্ষায় পাঠিয়ে প্রতীক্ষায় স্বজন

ইবির ভর্তি পরীক্ষায় আগত অভিভাবক

মুনজুরুল ইসলাম নাহিদ,ইবি
বার্ধ্যক্যে ঝুকে যাওয়া আম বৃক্ষটিতে ঠেস দিয়ে বসে আছেন মধ্যবয়সী শামসুর রহমান। পেশায় একজন সরকারী চাকুরিজীবী। গম্ভীর মুখে কপালে চিন্তার ভাজ। অজানা উৎকন্ঠায় ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছেন বারবার। দীর্ঘ যাত্রার ক্লান্তিতে শরীরে অবসাদ। তবুও চোখে কোনো এক আকাক্সিক্ষত মুহূর্তের অপেক্ষা। সেকেন্ড, মিনিট হিসেব করে এভাবে সময় গণনার স্মৃতি মনে পড়েনা তার। একমাত্র সন্তানটিকে স্বপ্ন পুরণের পরীক্ষায় পাঠিয়ে এ প্রতীক্ষা।
দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ থেকে মেয়ে মিলিকে নিয়ে এসেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রিয় সন্তানটি স্বপ্ন পূরণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় পার করছে। আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন নিয়ে ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্রে মিলি। দীর্ঘ যাত্রার পর সামান্য বিশ্রাম নিয়েই পরীক্ষার উদ্দেশ্যে ছেড়েছে বাবাকে। এজন্যই তার চিন্তাটা একটু বেশী।
শামসুর রহমান সাহেবের চোখে মিলিকে দেখা শেষ মুখচ্ছবি। সময় যেন আজ আর যেতে চায় না। প্রতিবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চিন্তার রেখা বাড়ছে। চিন্তিত মনে সন্তানের মঙ্গল কামনা করছেন তিনি। চিত্রটি বিশ^বিদ্যালয়ের অনুষদ ভবনের পাশের আমবাগানের। শামসুর রহমান জানালেন, ব্যবসায় অনুষদভুক্ত ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা দিচ্ছেন মিলি।
চট্টগ্রাম থেকে এসেছেন বিকাশ চন্দন। তিনিও অপেক্ষা করছেন তার মেয়ের জন্য। একই কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছে তার মেয়ে। পাশেই দেখা মিলল মধ্যবয়সী এক নারী বসে আছেন। স্বামীহারা এ মায়েরও অপেক্ষা কখন মেয়ের পরীক্ষা শেষ হবে। 
ফুটবল মাঠে সামনে গিয়ে চোখে পড়ল বাবা মার সাথে বসে খেলা করছে ছোট্ট এক শিশু। কথা বলতেই বলল, ‘আমার ভাইয়া পরীক্ষা দিচ্ছে । এক ঘন্টা পর বের হবে। ভাইয়া আসলে আমরা চলে যাব।’ বাড়ি কোথায় তোমাদের? প্রশ্নের জবাবে বলল, নাটোর। বড় হয়ে কি হতে চাও? জিজ্ঞেস করতেই বলল, ‘আমিও ভাইয়ের মতো বড় বিশ^বিদ্যালয়ে পড়তে চাই।’ বাচ্চাটি ধরেই নিয়েছে তার ভাই এখানে ভর্তি হবে। আর বড় ভাইয়ের এ যে স্বপ্ন কচি প্রাণটিকেও আলোড়িত করেছে তা তার কথা শুনেই বোঝা যায়।
বিশ^বিদ্যালয়ের থানা গেটর পাশে অভিবাবক কর্নারে গিয়ে কথা হলো ঝিনাইদহের এক পরিবারের সাথে। ক্যাম্পাস নিকটবর্তী হওয়ায় ভর্তিচ্ছু বিপ্লবের সাথে এসেছে তার পুরো পরিবারই। তাদের পাশেই ছিলেন বগুড়া থেকে আসা সুমন। ছোট বোন মুক্তিকে পরীক্ষায় পাঠিয়ে অপেক্ষা করছেন তিনি।
তাদের মতো হাজারো স্বজনেরা বসে অপেক্ষা করছে। কেউ গল্পে, কেউবা পার্থনায় সময় কাটাচ্ছেন। কতৃপক্ষের নির্দিষ্ট করে দেওয়া সীমার বাহিরে তাকালে চোখে পড়ে অব¯্র স্বজনের অপেক্ষার চাহনী। গল্প কথার মাঝেও মনে চিন্তার খেলা। কেমন হচ্ছে পরীক্ষা? 
দেশের সব পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় একই চিত্র। ভর্তিচ্ছুর সাথে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে চলেন এসব প্রিয়জনেরা। যারা যেতে পারেননা তারাও বাড়িতে বসে প্রার্থনা করেন প্রিয় মানুষটির স্বপ্ন পুরণের জন্য। 
শত দূর্ভোগ আর ক্লান্তি ভুলে অবসন্ন শরীরে শ্রান্ত চোখে স্বপ্ন দেখেন, ছেলে তার বড় হবে, মানুষের মত মানুষ হবে।