মে দিবসের ইতিহাস

মে দিবসের ইতিহাস

মে দিবস

বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বহু দেশে বর্তমানে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে পালিত হয়, যার পরিচয় ‘মে দিবস’ হিসেবে। ১৮৮৬ সালের মে মাসে শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের এক ঐতিহাসিক আন্দোলন ও সংগ্রামের পুণ্যস্মৃতির সম্মানে এই দিনটি পালিত হয়। শ্রমিকেরা তখন দিনে ১২-১৪ ঘণ্টা কাজ করলেও তার বিনিময়ে সামান্য মজুরিও পেতেন না। উপরন্তু ছিল মালিকপক্ষের অনবরত অকথ্য নির্যাতন। ১৮৬০ সালে শ্রমিকেরা তাদের মজুরি না কমিয়ে সারা দিনে আট ঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারণের জন্য দাবি জানান।

এ জন্য তারা একটি সংগঠনও তৈরি করেন পরবর্তীকালে, যার নাম হয় আমেরিকান ফেডারেশন অব লেবার। এই সংগঠন শ্রমিকদের প্রাপ্য মজুরি ও অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে অবিরত আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকে। ১৮৮৪ সালে সংগঠনটি দিনে কাজের সময় ‘আট ঘণ্টা’ নির্ধারণের জন্য মালিকপক্ষের কাছে সময় বেঁধে দেয়। সময় দেয়া হয় ১৮৮৬ সালের ১ মে পর্যন্ত। বারবার মালিকপক্ষের কাছে দাবি জানানো হলেও একটুও সাড়া মেলে না তাদের কাছে। এরপর বিদ্রোহ ওঠে চরমে। আর শিকাগো হয়ে ওঠে প্রতিবাদ-বিদ্রোহের মূলমঞ্চ। 
পয়লা মে যতই এগিয়ে আসছিল, দুই পক্ষের সংঘর্ষ অবধারিত হয়ে উঠছিল। মালিক-বণিক শ্রেণী ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল। এরই মধ্যে পুলিশ আগে তাদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালিয়েছিল। শ্রমিকদের ওপর গুলি চালাতে পুলিশদের বিশেষ অস্ত্র কিনে দেন ব্যবসায়ীরা।

পয়লা মেতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় তিন লাখ শ্রমিক কাজ ফেলে নেমে আসেন রাস্তায়। আন্দোলন চরমে ওঠে। ৩ মে, ১৮৮৬ সালে সন্ধ্যাবেলা শিকাগোর হে মার্কেট বাণিজ্যিক এলাকায় জড়ো হওয়া শ্রমিকদের দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন কিছু পুলিশ সদস্য। এমন সময় হঠাৎ বোমা বিস্ফোরণে কিছু পুলিশ আহত হন, পরে মারা যান ছয়জন। পরে পুলিশও শ্রমিকদের ওপর আক্রমণ চালালে নিহত হন ১১ জন শ্রমিক। পুলিশের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের হত্যা মামলায় অভিযুক্ত করে ছয়জনকে প্রহসনমূলক দোষী সাব্যস্ত করে প্রকাশ্যে ফাঁসি দেয়া হয়। কিন্তু এই মিথ্যা বিচারের অপরাধ শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ে। ২৬ জুন ১৮৯৩ ইলিনয় সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মিথ্যে ছিল ওই বিচার। পুলিশের কমান্ডারকে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত করা হয়। শেষ পর্যন্ত শ্রমিকদের ‘দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ’-এর দাবি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পায়। সেই থেকে পহেলা মে পালিত হয় শ্রমিকদের আত্মদান আর দাবি আদায়ের দিন হিসেবে।