চীন-বিরোধী জোট গড়তে তৎপর ভারত

চীন-বিরোধী জোট গড়তে তৎপর ভারত

ছবি: সংগৃহীত

ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক ও কৌশলগত পরিধি বাড়ানোর জন্য সক্রিয় হচ্ছে সাউথ ব্লক তথা ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি পূর্ব ও পশ্চিম এশিয়া, ইউরোপের বিভিন্ন দেশকে নিয়ে ভারত মহাসাগর বিষয়ক বৈঠকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বিষয়টি জানিয়েছেন। তার কথায়, ‘‘আসিয়ান রাষ্ট্রগোষ্ঠীই শুধু ভারতের প্রশান্ত মহাসাগরীয় নীতির কেন্দ্রে রয়েছে এমনটা ভাবা আর ঠিক নয়। পশ্চিম এশিয়ার উপকূলবর্তী রাষ্ট্রগুলো এবং আফ্রিকাকেও এর মধ্যে সামিল করতে হবে।’’ এ ভাবেই এশিয়ায় শক্তিশালী চীন-বিরোধী জোট তৈরি করতে চাইছে দিল্লি।

সাবেকি রেওয়াজ ভেঙে আসিয়ানকে বাড়তি গুরুত্ব দেয়া এবং ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় নীতিকে আরো বিস্তৃত করে দেখার সক্রিয়তা বেশ কিছুদিন আগেই শুরু হয়ে গেছে নয়াদিল্লির পক্ষ থেকে। গত বছর নয়াদিল্লির প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে আসিয়ানভুক্ত ১০টি রাষ্ট্রের নেতাকেই বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

কূটনৈতিক সূত্রের ব্যাখ্যা, গত কয়েক বছরে দক্ষিণ চীন সাগরের আধিপত্য নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া আসিয়ানের ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে, নতুন শক্তিশালী সমীকরণ তৈরিতে মরিয়া প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ‘অ্যাক্ট-ইস্ট’ নীতি নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে পথ চলছিল মোদি সরকার। কিন্তু এবার কৌশলগত ক্ষেত্রেও সেই ‘পূর্ব’-কে আরো বড় ভাবে পাশে চাওয়া হচ্ছে। দোকলাম পরবর্তী অধ্যায়ের মূল্যায়নে এ কথাই উঠে এসেছে যে সীমান্তে মুখোমুখি সংঘর্ষের রাস্তায় যাওয়াটা শেষপর্যন্ত অর্থহীন। তাতে এশিয়ার অন্যতম শক্তিধর রাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে বড় বিপদ তৈরি হতে পারে। যা ভারতের জাতীয় স্বার্থের পক্ষে ক্ষতিকরও। তাই বাণিজ্য-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক মধুর রাখার পাশাপাশি স্থির করা হয়েছে, এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে একটি চীন-বিরোধী আঞ্চলিক অক্ষ জোরদার করতে হবে। কৌশলগত ভাবে চীনকে চাপে রাখতে পারলে অন্য ক্ষেত্রে দরকষাকষির ক্ষেত্রে সুবিধা হবে, এমনটাই মনে করছে সাউথ ব্লক। উল্টা দিক থেকে এটা এতদিন চীন-ই করে এসেছে, এমনটাই দাবি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রের।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রের মতে, ‘ওয়েস্টার্ন ইন্ডিয়ান ওশান’ অঞ্চল (মরিশাস, সেশেলস, মাদাগাস্কারের মতো দ্বীপরাষ্ট্রগুলো) এবং‌ আফ্রিকার সঙ্গে ভারতের এই সাগর নীতিকে সংযুক্ত করা হবে। জয়শঙ্করের কথায়, ‘‘আমাদের ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় নীতির সঙ্গে যুক্ত করা হবে আফ্রিকায় আমাদের অংশীদার রাষ্ট্রসমূহ, আরব সাগর ও উপসাগরীয় অঞ্চলের দ্বীপরাষ্ট্রগুলিকে। সবচেয়ে বড় কথা হলো এই নৌপথকে মুক্ত করা এবং সবাই যাতে এটি ব্যবহার করতে পারে তা নিশ্চিত করা।’’
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা