ডাকসু ভিপি নূরের ওপর ছাত্রলীগের হামলা

ডাকসু ভিপি নূরের ওপর ছাত্রলীগের হামলা

আহত ভিপি নূরুল হক নূর

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহসভাপতি (ভিপি) নূরুল হক নূরের ওপর আবার হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের নেতাকর্মীরা। রোববার দুপুরে ডাকসু ভবনের ভেতরে ও বাইরে ভিপি নূর ও তার সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর দফায় দফায় হামলা করা হয়।

এতে নূরসহ ২৬ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে তুহিন ফারাবি নামে একজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে আছেন। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।

হামলার সময় সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুনসহ দু’জনকে ডাকসু ভবনের ছাদ থেকে ফেলে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। হামলার পৌনে এক ঘণ্টা পর প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। আহতদের উদ্ধার করে তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান।

হামলার প্রমাণ মুছে ফেলতে ডাকসু ভবনে থাকা সিসিটিভি ফুটেজ ছিনতাই করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এদিকে হামলার প্রতিবাদ ও জড়িতদের শাস্তির দাবিতে ক্যাম্পাসে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে দুপুর ১২টার দিকে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে ডাকসু ভবনের দিকে যায়। একই সময় সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ২০-২৫ জনকে নিয়ে ভিপি নূর ডাকসু ভবনের দিকে যান।

একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয় এবং ডাকসু ভবনে নিজের কক্ষে ভিপি নূর চলে যান। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীরা মধুর ক্যান্টিনের গোলঘরে জড়ো হন। কিছুক্ষণ পর নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ডাকসু ভবনের সামনে যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজীত চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেন।

দুটি সংগঠনের কর্মীরা তখন ডাকসু ভবনের দিকে ইটের টুকরা নিক্ষেপ করতে শুরু করে। এ সময় ভিপির নির্দেশে ডাকসু ভবনের কর্মীরা ভবনের মূল গেটে তালা লাগিয়ে দেন। তখন পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম গিয়ে ডাকসুর গেট খুলে ভেতরে প্রবেশ করেন।

এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন সনজিত। ভিপির কক্ষে প্রবেশ করে সাদ্দাম জানতে চান, কেন বহিরাগতদের নিয়ে তিনি (ভিপি নূর) ডাকসুতে এসেছেন। তখন নূর বলেন, তিনি সব সময় হামলার আশঙ্কার মধ্যে থাকেন। এ কারণে নিজের নিরাপত্তার জন্য অনেককে সঙ্গে রাখেন।

একপর্যায়ে সনজিতকে উদ্দেশ করে নূর বলেন, ‘আপনি তো ডাকসুর কেউ নন। আপনি কেন এখানে এসেছেন।’ তখন সনজিত বলেন, ‘আমি কে, তা কিছুক্ষণ পরই বুঝবি।’ ছাত্রলীগের দুই নেতা যখন কথা বলছিলেন, তখন তাদের অনুসারীরা নূরের সঙ্গে থাকা কয়েকজনকে মারতে শুরু করে।

সনজিত ও সাদ্দাম বের হওয়ার পর সেখানে দফায় দফায় হামলা করা হয়। ভিপির কক্ষে কয়েকজনকে আটকে রেখে ও লাইট বন্ধ করে মারধর করা হয়। হামলায় মারাত্মক আহত হন ভিপি নূর। তিনি কয়েকবার বমিও করেন। সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতাকর্মীদের ডাকসু ভবনের বাইরে এনেও হামলা করা হয়।

ঘটনার প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করেন। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। ভিপি নূর ছাড়া আহত অন্যদের মধ্যে রয়েছেন- সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন, যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রাশেদ খান, কবি নজরুল কলেজের ছাত্র রুকমিয়া হোসেন রাজ, গোলাম কিবরিয়া, জাহিদুল ইসলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আরিফুল ইসলাম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহেল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মশিউর রহমান, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তুহিন ফারাবি। এছাড়া আমিনুর নামে আরেকজন আহত হন। তিনি নিজেকে নূরের ছোট ভাই বলে দাবি করেন।

এ ঘটনার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রাব্বানী বলেন, খবর পেয়ে আমরা সেখানে গিয়েছি। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। পুরো ঘটনা জেনে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন বলেন, আহত ১৫ থেকে ২০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ভোঁতা কিছু দিয়ে তাদের আঘাত করা হয়েছে। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তাদের চিকিৎসা করা হচ্ছে।