জাকাত বিধান ও তাৎপর্য

জাকাত বিধান ও তাৎপর্য

রহমতের মাস রমজানে কেউ গুনাহ করে ফেললে জাকাত এর কাফফারাহ বা ক্ষতিপূরণ হিসেবে ভূমিকা পালন করে

 

প্রশ্ন : আপনাদের রোজা হোক বরকতময়। মাহে রমজান শেষ হয়ে আসছে। আমি শুনেছি, কোনো মুসলমানের রোজা কবুল হবে না, যে পর্যন্ত না তিনি জাকাত-আল ফিতর আদায় করেন। জাকাতের বিধিবিধান এবং মাহাত্ম্য ও তাৎপর্যের বিষয়ে আলোকপাত করুন।

উত্তর : ওয়া আলাইকুম আস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। পরম করুণাময় ও দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। সব প্রশংসাই আল্লাহতায়ালার প্রাপ্য। আর তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর শান্তি ও আশীর্বাদ বর্ষিত হোক। প্রিয় ভাই, আপনিও যেন রহমতে ধন্য রমজান লাভ করতে পারেন।
প্রকৃতপক্ষে আমাদের সবাই কামনা কর রহমত ও বরকতের রমজান যদি বছরজুড়ে থাকত (তাহলে কতই না ভালো হতো)। এ মাসের শেষে সত্যিকার মুসলিমরা প্রত্যাশা করেন তাদের স্রষ্টা, সর্বশক্তিমান আল্লাহর উদ্দেশে তাদের ভক্তি ও ত্যাগের মহাপুরস্কার। প্রতিটি মুসলমান তার রোজা কবুল করে নিতে আল্লাহর কাছে আকুল আকুতি জানান।
রাসূল সা. জাকাতের ঘোষণা দিয়েছিলেন রোজা কবুল হওয়ার একটি শর্ত হিসেবে। জাকাত দেয়ার ব্যবস্থা মুসলিম সমাজের সদস্যদের মধ্যে সম্পর্ক মজবুত করে তোলে; দীন-দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দুর্দশা মোচন করে; মুসলমানদের অন্তরে ভ্রাতৃত্ববোধ ও একাত্মতার চেতনাকে করে জাগ্রত।
এক সা’ পরিমাণ (২ দশমিক ১৭৬ কিলোগ্রাম কিংবা ৪ দশমিক ৭৯৭ পাউন্ড) খেজুর অথবা যব যদি কোনো স্বাধীন মুসলমানের কাছে থাকে, যা এক দিন ও রাত্রির মেয়াদে তার নিজের কিংবা তার পরিবারের মৌলিক খাদ্য হিসেবে প্রয়োজনীয় নয়, তা হলে সে মুসলিম ব্যক্তির ওপর জাকাত দেয়া ফরজ। এমন প্রত্যেককে অবশ্যই তার নিজের, স্ত্রীর, সন্তানের এবং দাস-দাসীদের জন্য জাকাত প্রদান করতে হবে।
ইবনে উমর রাদিআল্লাহু আনহু বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সা: নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে প্রত্যেক মুসলমান শিশু ও বৃদ্ধ, পুরুষ ও নারী, মুক্ত ও ক্রীতদাস জাকাত হিসেবে এক সা’ পরিমাণ খেজুর অথবা এক সা’ পরিমাণ যব প্রদান করে। (আল বুখারি ও মুসলিম)
এ বিষয়ে আমাদের ফতোয়া নিম্নরূপ : জাকাত আল ফিতর হলো রমজান মাসের বিশেষ দান। ঈদুল ফিতরের নামাজের আগে মাহে রমজানের যেকোনো সময়ে জাকাত আদায় করা উচিত। ঈদুল ফিতর পর্যন্ত এটা দেয়ার সময় থাকে বলে এটাকে বলা হয় জাকাত আল ফিতর। রাসূল সা: রমজান মাসেই জাকাত দিতে মুসলিম সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
আলেমরা ইসলামের এই বাধ্যতামূলক বিধানের পেছনে বিভিন্ন যুক্তি উপস্থাপন করেছেন। একটা যুক্তি হলো, জাকাত দরিদ্র ও অভাবী মানুষজনকে সাহায্য করে এবং রোজার মাসে তাদের চাহিদা পূরণ করে থাকে। জাকাত পেলে অন্য মুসলমানদের সাথে মিলে ঈদ উদযাপন করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়।
আরেকটি যুক্তি হচ্ছে, রহমতের মাস রমজানে কেউ গুনাহ করে ফেললে জাকাত এর কাফফারাহ বা ক্ষতিপূরণ হিসেবে ভূমিকা পালন করে।
ইবনে আব্বাস রা: বলেছেন : রাসূল সা: নির্দেশ দিয়েছেন জাকাত দিতে, যাতে রোজাদাররা তাদের পাপ কাজ থেকে পবিত্র হতে পারে এবং দীন-দুঃখী মানুষ খাদ্য-বস্ত্রের মতো মৌলিক চাহিদা পূরণে সক্ষম হয়। অতএব, যিনি ঈদের জামাতের আগেই (জাকাতরূপী) এই সাদাকাহ বা দান সম্পন্ন করবেন, তিনিই প্রকৃত জাকাতদাতা। আর কেউ এতে বিলম্ব করলে এবং তা পরে দিলে তিনি সাধারণ দাতায় পরিণত হন (আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ)।
নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রত্যেক মুসলমানের ওপর জাকাত ফরজ। পরিবারের প্রধান নিজের, স্ত্রীর, যেকোনো বয়সী ছেলেমেয়ের এবং এমনকি চাকর-চাকরানীর পক্ষ থেকে নির্ধারিত পরিমাণে জাকাত দিতে হবে।
জাকাতের পরিমাণ রাসূলুল্লাহ সা: নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এটা প্রায় ৫ পাউন্ড গম, ময়দা, যব, খেজুর অথবা কিশমিশ। দরিদ্রদের মধ্যে নগদ অর্থও জাকাত হিসেবে দেয়া যায়।
ইসলামী দাতব্য সংগঠন জাকাত ফান্ড সংগ্রহ করলে এ ধরনের সংগঠনকেও জাকাত দেয়া যায়। তাদের যত শিগগির সম্ভব জাকাত বিলিয়ে দিতে হবে অভাবী মানুষের মধ্যে।


লেখক : সভাপতি, ফিকাহ্ কাউন্সিল অব নর্থ আমেরিকা।