স্বাস্থ্যখাতে নতুন আতঙ্ক: করোনাভাইরাস

স্বাস্থ্যখাতে নতুন আতঙ্ক: করোনাভাইরাস

ফাইল ছবি

বর্তমানে বিশ্বে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ স্বাস্থ্যখাতের জন্য নতুন আতঙ্ক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসের আক্রমনকে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ঝুঁকি বলে ঘোষণা করেছে। গত ডিসেম্বরে প্রথমে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে দেখা দেওয়া এই রোগটিতে ইতোমধ্যে চীনে আক্রান্ত হয়েছেন ১০ হাজারের বেশি ব্যক্তি। মারা গেছেন ২০০ এর অধিক। বিশ্বের ২৩টি দেশে ১৩২টি সংক্রমনের খবর পাওয়া গেছে। এই সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

চীনে এই অসুখটি ভয়াবহ সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হলেও বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকি এখনও অনেক কম। আমাদের সকলের লক্ষ্য এই ঝুঁকি কম মাত্রায় রাখা। আর তার জন্য প্রয়োজন সম্মিলিত প্রয়াস। যে কোন সংক্রামক রোগ মোকাবিলার মতো এই ক্ষেত্রেও প্রয়োজন দ্রুত অসুস্থ সনাক্ত করণ, সনাক্তকৃত রোগী পৃথকীকরণ  ও সনাক্তকৃত রোগীদের সংস্পর্শে আগমনকারীদের খুজে বের করা। অসুস্থ সনাক্তকরণের জন্য ইতোমধ্যে দেশে আগতদের জন্য জ্বর সনাক্তকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে সকল বিমান, স্থল  ও নৌ বন্দরে। সনাক্তকৃত রোগীদের পৃথকীকরণ করে চিকিৎসা প্রদানের জন্য কুর্মিটোলা হাসপাতাল ও উত্তরা কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

জনসচেতনার জন্য রোগের লক্ষণ ও করণীয় ব্যপকভাবে প্রচার করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য সচেতনতা ও সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অন্যতম প্রধান উপায় এ রোগ থেকে মুক্ত থাকা। যেহেতু রোগটি ছোঁয়াচে এবং ছড়ায় সংস্পর্শের মাধ্যমে তাই যত ঘন ঘন হাত ধোয়া যাবে তত সুরক্ষা পাওয়া যাবে। হাত ধোয়ার বিকল্প হিসেবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার সহজ এবং অভ্যাসের অন্তর্ভূক্ত করতে পারলে আরও অনেক সংক্রমন থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। মাস্কের ব্যবহার ফলাফল দেবে, সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্রে ও সঠিক মাস্ক ব্যবহার করলে। সাধারণত: একবার ব্যবহার করে পরিত্যক্ত (ডিসপোজেবল) মাস্ক ব্যবহার করা উচিত। কাপড়ের মাস্ক যেহেতু বার বার ব্যবহার করা হয় তাই উপকারের চেয়ে ক্ষতির কারণ হতে পারে। কাপড়ে জমে যাওয়া জীবানু, ঘাম ও দেহের অন্যান্য রস ঝুঁকিপূর্ন হতে পারে। ঢালাওভাবে মাস্ক ব্যবহার না করে সংক্রমিতদের সংস্পর্শ যারা আসছেন - সেবা প্রদানকারীদের ক্ষেত্রে এটি বেশি কার্যকরী।

যেহেতু এই অসুখটি একেবারেই নতুন, তাই এর সম্পর্কে জানাশুনা কম। ফলে কার্যকরী ব্যবস্থা কিছুটা দুরূহ। যেমন আগে জানা না থাকলেও এখন জানা যাচ্ছে যে করোনভাইরাসে আক্রান্তদের সবাই লক্ষণযুক্ত নন। আর যারা লক্ষণ প্রদর্শণ করেন না, তারাও অন্যকে সংক্রমিত করতে পারেন। তাই দেশে আগমনকারীদের সনাক্তকরণের যে ব্যবস্থা করা হয়েছে, সেটি সম্পূর্ণ পর্যাপ্ত নয় । যদি কারো সনাক্তকরণের জন্য লক্ষণ না থাকে, তিনি সনাক্ত না হলেও তার মাধ্যমে অসুখটি ছড়ানোর ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। তাই  আমাদের দেশে উহান থেকে ফিরে আসা ব্যক্তিদের মাঝে লক্ষণ না থাকলেও তাদেরকে ১৪দিন পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে হাজী ক্যাম্পে। আমেরিকাতেও এই সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। সেখানেও আগমনকারী হুবেই প্রদেশ কিংবা উহানে ১৪ দিনের মাঝে অবস্থান করলে তাদেরকে ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে। চীনের অন্যত্র থেকে আগতদের লক্ষণ থাকলে বাধ্যতামূলক পর্যবেক্ষণে, আর লক্ষণ না থাকলেও ১৪ দিন নিজ দায়িত্বে পর্যবেক্ষণে থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

এই দুর্যোগকালীন সময়ে চীনে বিশেষত: হুবেই প্রদেশ কিংবা উহানে যাওয়া একেবারেই উচিত নয়। তেমনি বহুদেশ চীন বিশেষত: হুবেই প্রদেশ বা উহান হতে আগমনকারীদের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

আতঙ্কিত না হয়ে সতর্কতা অবলম্বন জরুরী। সকল জ্বর নয়, তবে জ্বরের সাথে যদি শ্বাসতন্ত্রের উপরিভাগে কোন সমস্যা থাকে যেমন কাশি তাহলে ডাক্তারের স্বরণাপন্ন হওয়া বাঞ্চনীয়। বিদেশ, চীন ছাড়াও হতে পারে প্রত্যাগত কেউ যদি ১৪ দিনের মাঝে জ্বর ও কাশিতে ভোগেন তারও উচিত হবে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া। অন্যদের উচিত হবে এমন রোগীর সংস্পর্শে ১৪ দিনের মাঝে না যাওয়া।

ডা. মুহাম্মদ আব্দুস সবুর 

সম্পাদক

নিউজজোনবিডি ডট কম