বিকাশ-রকেটে ব্যালেন্স জানার খরচ কে দেবে?

বিকাশ-রকেটে ব্যালেন্স জানার খরচ কে দেবে?

বিকাশে টাকা পাঠাচ্ছেন এক ব্যক্তি

বাংলাদেশের মোবাইলে আর্থিক লেনদেন করতে আগে থেকেই টাকা দিতে হলেও, এখন ব্যালেন্স জানতে হলেও টাকা দিতে দিতে হবে। স্টেটমেন্ট জানা, পিন পরিবর্তন ইত্যাদি কাজেও অর্থ গুনতে হবে।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ রেগুলেটরি কমিশন, বিটিআরসি, সোমবার একটি নির্দেশনা জারি করেছে বলেছে, এখন থেকে মোবাইলে ৯০ সেকেন্ডের প্রতিটি আর্থিক লেনদেনের জন্য মোবাইল অপারেটরকে ৮৫ পয়সা দিতে হবে আর ব্যালেন্স দেখা বা স্টেটমেন্ট নেয়ার মতো একেকটি সেশনে দিতে হবে ৪০ পয়সা।

কিন্তু এই অর্থ কি আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান মোবাইল অপারেটরকে দেবে নাকি গ্রাহকের কাছ থেকে কেটে রাখা হবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়।

বর্তমানে বিকাশ, রকেট, এম ক্যাশ, শিওর ক্যাশ, ইউক্যাশ, মোবাইল মানি, নগদ ইত্যাদি সেবা চালু রয়েছে।

বিটিআরসির সিনিয়র সহকারী পরিচালক জাকির হোসেন খান বিবিসি বাংলাকে বলছেন, গত বছরের এপ্রিলে বিটিআরসি, বাংলাদেশ ব্যাংক, মোবাইল অপারেটর ও আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর (এমএফএস) সঙ্গে একটি বৈঠকে এই বিষয়ে আলোচনার পর এরকম সেশন ভিত্তিক চার্জ কার্যকরের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সেটার নিদের্শনা জারি করা হয়েছে।

বিটিআরসি তার নির্দেশনায় বলেছে, যারা এসএমএস বা আনস্টাকচারড সাপ্লিমেন্টারি সার্ভিস ডেটা (ইউএসএসডি) ব্যবহার করে লেনদেন করবেন, তাদেরই এই পয়সা দিতে হবে। মোবাইলে অ্যাপ ব্যবহার করে যারা ব্যালেন্স দেখবেন, তাদের এই অর্থ দিতে হবে না।

এতদিন পর্যন্ত মোবাইলে আর্থিক সেবা একাউন্টের ব্যালেন্স দেখা, স্টেটমেন্ট নেয়া ইত্যাদি কাজের জন্য আলাদাভাবে অর্থ খরচ করতে হতো না।

তবে টাকা লেনদেন জন্য নির্দিষ্ট ফি দিতে হয়। যেমন বাংলাদেশে মোবাইলে সবচেয়ে বড় আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশে প্রতি একশো টাকার তুলতে ১ টাকা ৮৫ পয়সা খরচ করতে হবে। তবে কাউকে টাকা পাঠাতে খরচ হয় পাঁচ টাকা।

বিকাশের হেড অব কর্পোরেট কমিউনিকেশনস শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বিবিসি বাংলাকে জানান, এ নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে বৈঠক হলেও এই রেভেনিউ কিভাবে ভাগাভাগি করা হবে, ফেইলড সেশনের কি হবে, অপারেটরের বর্তমান লভ্যাংশ হার ঠিক থাকবে কিনা, এরকম আরো অনেক খুঁটিনাটি আলোচনার বাকি আছে। অপারেটর, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিটিআরসির সঙ্গে বসে আলোচনা করে আমাদের আবার একটি চুক্তি করতে হবে।''

''সেগুলো চূড়ান্ত হওয়ার পর বোঝা যাবে, গ্রাহক বাড়তি কোন অর্থ দিতে হবে কিনা,'' বলছেন মি. হায়দার।

বর্তমানে বিকাশের ৩ কোটি ১০ লাখ গ্রাহক রয়েছে। আর সব মিলিয়ে মোবাইলে আর্থিক সেবা গ্রহীতার সংখ্যা সাড়ে চার কোটির বেশি।

বিকাশের কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে আর্থিক লেনদেনে যে কমিশন আসে, তার ৭৭% এজেন্টরা পান। সাত শতাংশ যায় মোবাইল অপারেটরের ঘরে আর ১৬% পায় মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো।

বিটিআরসির এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে মোবাইল ফোন অপারেটর প্রতিষ্ঠানগুলো।

রবি আজিয়াটা লিমিটেডের ম্যানেজার আশরাফুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ''গত চার বছর ধরে বাংলাদেশ ব্যাংক, বিটিআরসি, মোবাইল অপারেটর, এবং এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর সেশন ভিত্তিক চার্জ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে। যেহেতু মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করেই মোবাইল ব্যাংকিং হচ্ছে, ফলে এটা আমাদের প্রাপ্য, যা থেকে এতদিন মোবাইল অপারেটররা বঞ্চিত হচ্ছিল।''

তিনি বলছেন, ''আর্থিক টাকা লেনদেনে প্রতিষ্ঠানগুলো যে অর্থ নিচ্ছে, তার মধ্যেই আসলে এসব খরচ ধরা রয়েছে। ফলে এসব চার্জ গ্রাহকদের ওপর পরার কোন কারণ নেই।''

তবে কবে নাগাদ এসব চার্জ চালু হবে, তার কোন সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়নি।

মঙ্গলবার বিটিআরসি আরেকটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই নির্দেশনার মাধ্যমে গ্রাহক কোনভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। কারণ এটি বর্তমানে চলমান রয়েছে, ফলে গ্রাহকগণের ওপর নতুন করে চার্জ আরোপের সুযোগ নেই।

মোবাইল অপারেটররা আশা করছেন, বিটিআরসির নির্দেশনা জারির কারণে যত দ্রুত সম্ভব মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো এই অর্থ দেয়া শুরু করবে।

তবে মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, কিভাবে এই অর্থ দেয়া হবে, সেশন বা ব্যর্থ সেশনের কি হবে, ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আরো আলোচনার পরেই নতুন এই সিদ্ধান্ত পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।