খাশোগি হত্যায় সৌদি যুবরাজের সম্পৃক্ততা পেয়েছে জাতিসংঘ

খাশোগি হত্যায় সৌদি যুবরাজের সম্পৃক্ততা পেয়েছে জাতিসংঘ

খাশোগি ও মোহাম্মদ বিন সালমান

ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যায় যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানসহ জ্যেষ্ঠ সৌদি কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতার আলামত পেয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক এক তদন্ত কর্মকর্তা। বুধবার (১৯ জুন) সংস্থাটির বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডবিষয়ক বিশেষ দূত অ্যাগনেস ক্যালামার্ড দাবি করেছেন, পর্যাপ্ত বিশ্বাসযোগ্য আলামত বিশ্লেষণের পর তিনি এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। এ ঘটনায় যুবরাজ ও তার ব্যক্তিগত সম্পর্দের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশও করেছেন তিনি। সৌদি আরব এই প্রতিবেদন প্রত্যাখান করেছে। 

দ্বিতীয় বিয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে গত ২ অক্টোবর ইস্তানবুলের সৌদি কনস্যুলেটে গিয়ে হত্যার শিকার হন অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও ওয়াশিংটন পোস্টের কলাম লেখক খাশোগি। তিনি সৌদি সরকারের কঠোর সমালোচক ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছায় নির্বাসিত এই সাংবাদিক সৌদি আরবে ফেরার বিষয়ে রিয়াদের চাপ অগ্রাহ্য করে আসছিলেন। প্রথমে রিয়াদের পক্ষ থেকে খাশোগিকে হত্যার কথা অস্বীকার করা হলেও তুরস্কের সংবাদমাধ্যমগুলো সৌদি আরবের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রমাণ হাজির করতে থাকে। এ ঘটনায় সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও ওঠে। এক পর্যায়ে খাশোগি কনস্যুলেট ভবনে হত্যার শিকার হয়েছেন বলে স্বীকার করে সৌদি কর্তৃপক্ষ। তবে এ হত্যার সঙ্গে যুবরাজের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করা হয়। খাশোগি হত্যার ঘটনায় ১১ জন সন্দেহভাজনকে বিচারের মুখোমুখি করার কথা জানিয়ে আসছে সৌদি সরকার। তবে তাদের বিচার প্রক্রিয়া চলছে অত্যন্ত গোপনে। জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত হাতে গোনা কয়েকটি শুনানি হয়েছে।

গত বছর খাশোগির সঙ্গে কী ঘটেছে তা নিয়ে আলামত পর্যালোচনার পর বুধবার ১০০ পৃষ্ঠার একটি বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের বিশেষ দূত অ্যাগনেস ক্যালামার্ড। সেখানে খাশোগির মৃত্যুকে ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ’ বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। তুর্কি কনস্যুলেট থেকে পাওয়া অডিও রেকর্ডিং বিশ্লেষণ করে ওই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। 

ছয় মাসের তদন্তের পর দেওয়া প্রতিবেদনে ক্যালামার্ড লিখেছেন, ‘বিশেষ দূতের তদন্ত প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী খাশোগি উদ্দেশ্যমূলক, পূর্বপরিকল্পিত ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী এর জন্য সৌদি আরব দায়ী।’ ক্যালামার্ড আরও বলেন, ‘মানবাধিকারবিষয়ক এ তদন্তের মধ্য দিয়ে দেখা গেছে, যুবরাজের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে পর্যাপ্ত বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ প্রমাণগুলো আরও তদন্তের দাবি রাখে।’ এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক তদন্ত নিশ্চিতে জাতিসংঘের মহাসচিবের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারার আগ পর্যন্ত সৌদি যুবরাজ ও তার ব্যক্তিগত সম্পত্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা জোরালো করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ক্যালামার্ড।

এ বছরের শুরুতে একটি ফরেনসিক ও আইনি বিশেষজ্ঞ দলের সঙ্গে তুরস্ক গিয়েছিলেন ক্যালামার্ড। তুর্কি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে খাশোগি হত্যার আলামত সংগ্রহ করেন তিনি।

সৌদি আরবের কাছে আগেই ১০০ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। তবে তাদের কাছ থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। খাশোগি হত্যার  ঘটনায় সৌদি যুবরাজের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে রিয়াদ।