যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলে আগুন লাগানোর চেষ্টা করছে : প্রধানমন্ত্রী

যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলে আগুন লাগানোর চেষ্টা করছে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যকে বাংলাদেশের সাথে অর্ন্তভুক্ত করার মার্কিন কংগ্রেসম্যানের প্রস্তাব প্রত্যাখান করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন এ অঞ্চলে আগুন লাগানোর চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র।

সাম্প্রতিক চীন সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে প্রধানমন্ত্রী সোমবার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এলে একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন তিনি।

মিয়ানমারের রাখাইনে দমন-পীড়ন ও গনহত্যার কারনে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশে রয়েছে। 

এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের একজন কংগ্রেস সদস্য ব্রাডলি শেরমান মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যকে বাংলাদেশের সঙ্গে জুড়ে দেওয়ার একটি প্রস্তাব তোলেন।

তার প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে শেখ হাসিনা বলেন, “একটা দেশের ভেতরে এই ধরনের গোলমাল পাকানো, এটা কোনোমতেই ঠিক না। আর যেখানেই তারা হাত দিয়েছেন, সেখানেই তো আগুন জ্বলছে। কোথাও তো শান্তি আসেনি, বরং জঙ্গিবাদ সৃষ্টি হয়েছে এবং অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে।

“আমাদের এই অঞ্চলটা; আমরা একটু শান্তিপূর্ণভাবে থাকার চেষ্টা করছি, এখানেও তাদের আগুন লাগানোর প্রচেষ্টা, এটা কখনোই গ্রহণযোগ্য না।”

তিনি বলেন, “আমাদের যে সীমানা আছে, আমাদের যে দেশটা আমরা তাতেই খুশি। অন্যের জমি নিয়ে আসা বা অন্যের প্রদেশ আমাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়া এটা আমরা সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করি। এটা আমরা কখনও নেব না।

“কারণ প্রত্যেক দেশ তার সার্বভৌমত্ব নিয়ে থাকবে। মিয়ানমার তার সার্বভৌমত্ব নিয়ে থাকবে। সেখানে বাংলাদেশের সঙ্গে তারা রাখাইন স্টেইট জুড়ে দিতে চায় কেন? এই ধরনের কথা বলা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। অত্যন্ত অন্যায় কাজ বলে আমি মনে করি।”

মার্কিন কংগ্রেসম্যানের প্রস্তাবের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “হতে পারে তারা খুব বড় দেশ। সেই দেশের একজন কংগ্রেসম্যান। কিন্তু তারা তাদের অতীত ভুলে গেছে? যখন গৃহযুদ্ধ লেগেই থাকত। সেই অতীত তো তাদের ভুলে যাওয়া উচিৎ না।

“আর রাখাইন স্টেটে প্রতিনিয়ত সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। আর আমরা জেনেবুঝে ওই ধরনের একটা গোলমেলে জিনিস আমাদের দেশের সঙ্গে যুক্ত করব কেন? এটা আমরা কখনোই করব না। আর তাছাড়া আমরা প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার।”

রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমারের উপর চাপ বাড়াতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমি এটাই চাই, বরং এই কথা না বলে মিয়ানমার যেন তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়, এই কংগ্রেসম্যান শেরমানের সেটাই করা উচিৎ। সেটাই হবে মানবিক দিক। আর যে সমস্ত মানবিকতা লঙ্ঘন হয়েছে, যেটাই হয়েছে, তাদের সেটা দেখা উচিৎ।”

চীন সফরে দেশটির প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আলোচনার কথাও বলেন শেখ হাসিনা। চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়টি গুরুত্ব পায় বলেও জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ বর্তমানে ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিচ্ছে, যা দেশের জন্য পরিবেশ ও নিরাপত্তার দিকে থেকে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। রোহিঙ্গারা যাতে তাদের নিজ ভূমিতে ফিরে যেতে পারে, সেজন্য আমি প্রেসিডেন্টকে চীনের ‘গুড উইল’ কাজে লাগানোর অনুরোধ জানাই।

“চীনের প্রেসিডেন্ট মনে করেন, রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুরা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সমস্যা এবং কীভাবে এর সমাধান করা যায়, এনিয়ে চীন কাজ করবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।”

শেখ হাসিনা বলেন, “চীনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমরা এ সঙ্কট সমাধানে যতটা সম্ভব চেষ্টা করব। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার দু’দেশেই আমাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আমাদের কাছে দু’দেশই সমান, কেউ কম বা বেশি নয়’।”

প্রধানমন্ত্রী জানান, চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াং বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকারকে সম্মত করতে চেষ্টা করবেন বলেও তাকে আশ্বাস দিয়েছেন।

“চীনের প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সমস্যা। তিনি উল্লেখ করেন, চীন তার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে দু’বার মিয়ানমারে পাঠিয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধানে প্রয়োজনে তারা আবারও মন্ত্রীকে মিয়ানমারে পাঠাবে।”

মিয়ানমারের রাখাইনের বাসিন্দা ১১ লাখ রোহিঙ্গা এখন রয়েছে বাংলাদেশে

এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, রোহিঙ্গাদের ফেরাতে চীনের প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রীর এমন কোনো তথ্য আছে কি না যা বাংলাদেশের জন্য সুখবর হতে পারে?

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তারা বলেছেন, তারা বিষয়টা বিবেচনা করবেন, দেখবেন। এটা কি সুখবর মনে হচ্ছে না? না দুঃখের খবর মনে হচ্ছে?

“হ্যাঁ, এটা ঠিক যে, চীন সবসময় মিয়ানমারের সঙ্গে আছে। রোহিঙ্গারা যে বাংলাদেশে আছে, এটা বাংলাদেশের জন্য বিরাট সমস্যা। এটা তো তারা সবসময় উপলব্ধি করতে পারছে। এজন্য তারা মনে করছেন যে, এই বিষয়টা দ্রুত সমাধান হওয়া উচিৎ। এজন্য তাদের যতটুকু যা করা প্রয়োজন, ততটুকু তারা করবেন, এটা আশ্বাস দিয়েছেন।”

চীনের সঙ্গে সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে কি না- এ প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, পররাষ্ট্রনীতি খুব পরিষ্কার। সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়।

“আমরা ক্ষমতায় আসার পর থেকে সেটা মেনে চলছি। এখন কার সাথে কার কী যুদ্ধ। কার সাথে কার কী ঠোকাঠুকি, ওটা আমার দেখার দায়িত্ব না। আমার দেশের উন্নয়নে কে আমাকে সহযোগিতা করছে, কে ভূমিকা রাখছে, সেটা আমার দেখার দায়িত্ব। আমরা সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেই চলতে চাই।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এক সময় চীনের সবচেয়ে বড় বন্ধু ছিল আমেরিকা। এখন আবার দুই দেশে শুরু হল বাণিজ্য যুদ্ধ।”

বাংলাদেশ ঋণের ফাঁদে পড়বে কি না- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ডেব্ট ট্রাপ বলে একটা কথা আছে। ওই ব্যাপারে আমি যথেষ্ট সতর্ক। আমাদের বৈদেশিক ঋণের বোঝা খুব বেশি নয়। জিডিপির মাত্র ১৪ ভাগ হলো ঋণ। সেটাও আমরা সময় মতো পরিশোধ করে যাই। আজ পর্যন্ত কোনোদিন ব্যর্থ হয়নি। কাজেই আমরা যেটা নিই হিসাব করে নিই।

“আমাদের দেশে কিছু লোক আছে তাদের কোনো কিছুই ভালো লাগে না। তারা ভালো না লাগার ব্যারামে ভুগছে। ওটার কি বিহিত আছে, আমি জানি না। তাদের কোনোটাই ভালো লাগে না।”