আবরারকে চাপা দেয়া বাসটি ‘কন্ডাক্টর’ ছিল চালকের আসনে

আবরারকে চাপা দেয়া বাসটি  ‘কন্ডাক্টর’ ছিল চালকের আসনে

সড়ক দুর্ঘটনায় আটক চালক

রাজধানীর প্রগতি সরণিতে সুপ্রভাত পরিবহনের যে বাসের চাপায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরী নিহত হন, সেটি চালাচ্ছিলেন ওই বাসের ‘কন্ডাক্টর’।

ঘাতক বাসের কন্ডাক্টর ইয়াসিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পাশাপাশি সেই বাসচালকের সহকারী ইব্রাহিমকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।

তাদের মঙ্গলবার রাত ও বুধবার সকালে চাঁদপুরের শাহরাস্তি ও ঢাকার মধ্য বাড্ডায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করেন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সদস্যরা।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মো. আবদুল বাতেন বুধবার দুপুরে ঢাকার মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তাদের গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, মঙ্গলবার সকালের ওই দুর্ঘটনার সময় সুপ্রভাত পরিবহনের ওই বাসটি চালাচ্ছিলেন কন্ডাক্টর ইয়াসিন। তার কোনো লাইসেন্স ছিল না।

দুর্ঘটনার বিবরণ দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাসচালক সিরাজুল ইসলাম সেদিন ভোর পৌনে ৬টার দিকে সদরঘাট থেকে গাড়ি নিয়ে রওনা হন। সহকারী ইব্রাহিম ও কন্ডাক্টর ইয়াসিনও সে সময় বাসে ছিলেন।

শাহজাদপুরের বাঁশতলা এলাকায় ওই বাসের চাপায় গুরুতর আহত হন মিরপুর আইডিয়াল গার্লস ল্যাবরেটরি কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সিনথিয়া সুলতানা মুক্তা। বাসের যাত্রীরা তখন চালক সিরাজুল ইসলামকে ধরে পুলিশে দেয়।

তিনি জানান, বাসটি তখন রাস্তার পাশে দাঁড় করানো ছিল। উত্তেজিত জনতা বাসে আগুন ধরিয়ে দিতে পারে এমন আশঙ্কায় মালিক ননী গোপালকে ফোন করে কন্ডাক্টর ইয়াসিন। মালিক তখন ইয়াসিনকে বাসটি দ্রুত নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিতে বলেন।

তখন চালকের আসনে বসে পড়েন ইয়াসিন। নর্দায় প্রগতি সরণিতে বাসটি আবরারকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। সঙ্গে সঙ্গে পালিয়ে যান ইয়াসিন।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার বাতেন বলেন, চালক সিরাজুলকে ধরা হয়েছিল শাহজাদপুরের দুর্ঘটনার পর। নর্দায় আবরারের দুর্ঘটনার কথা সে জানত না। ফলে তার বক্তব্য মিলছিল না। ইয়াসিন ও ইব্রাহিমকে গ্রেফতারের পর বিষয়টি স্পষ্ট হয়।

জবানবন্দি দেয়ার জন্য ইয়াসিন ও ইব্রাহিমকে বুধবার আদালতে পাঠানো হবে বলে এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান।

এ মামলার অপর আসামি বাসের মালিক ননী গোপালকে গ্রেফতার করা হবে কিনা জানতে চাইলে বাতেন বলেন, গ্রেফতার কন্ডাক্টর ও চালকের সহকারীর জবানবন্দি নেয়ার পর পুলিশ পরবর্তী পদক্ষেপে যাবে।

মঙ্গলবার সকালে প্রগতি সরণি এলাকায় সুপ্রভাত বাসের চাপায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরী নিহত হন। পরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। টানা দুদিন চলে এ বিক্ষোভ। এ সময় তারা ৮ দফা দাবিতে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাদের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রভাত ও জাবালে নূর পরিবহনের রুট পারমিট বাতিল করে চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। বুধবার দ্বিতীয় দিন সন্ধ্যায় আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি ২৮ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত করেন।