অসহায় ও দুঃস্হদের পাশে 'পোনসাই কমপ্লেক্স'

অসহায় ও দুঃস্হদের পাশে 'পোনসাই কমপ্লেক্স'

ছবি: কুবি প্রতিনিধি

এমদাদুল হক সরকার,

করোনা ভাইরাস মহামারিতে দেশজুড়ে চলছে লকডাউন। এর মধ্যে সবচেয়ে দুঃসহ দিন পার করছে অসহায় ও খেটে খাওয়া মানুষগুলো। দু'বেলা দু'মুঠো খাবারের সন্ধানে কাজে যেতে পারছেন না তারা । ফলশ্রুতিতে অনাহারে দিনাতিপাত করছেন অনেকে। এমন পরিস্থিতিতে অনেক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।

এমন দূরাবস্থায় দুঃস্থদের পাশে এগিয়ে এসেছে "পোনসাই কমপ্লেক্স"। চান্দিনা উপজেলার কর্মহীন হয়ে পড়া নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে নগদ সহায়তা ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করছে সংগঠনটি।

মানবিক সমাজ তৈরির লক্ষ্য নিয়ে "পোনসাই বদলাবেই" এই স্লোগান সামনে রেখে ২০১৭ সালে কুমিল্লা জেলার চান্দিনা উপজেলার পোনসাই গ্রামে প্রকৌশলী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম "পোনসাই কমপ্লেক্স" প্রতিষ্ঠা করেন। পোনসাই কমপ্লেক্সে সেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া চান্দিনার শিক্ষার্থীরা। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সেবামূলক কর্ম করে যাচ্ছে এ অরাজনৈতিক সংগঠনটি ।

সামাজিক দূরত্বের বাধ্যবাধকতার কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তহবিলের ঘোষণা দেওয়ার পর পোনসাই কমপ্লেক্সের "করোনা রিলিফ প্রকল্প" নামের তহবিলে অর্থের জোগান দিতে দলমত নির্বিশেষে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ অসহায়, দুঃস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এগিয়ে আসেন ।

২৩ এপ্রিল পোনসাই গ্রামের ৪৪টি পরিবারের মাঝে নগদ সহায়তা ও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের মাধ্যমে করোনা রিলিফ প্রকল্পের ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়। এই সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকরা ত্রাণপ্রাপ্তদের পরিচয় গোপণ রেখে ধারবাহিকভাবে চান্দিনার ৩৬ টি গ্রামের নিম্ন আয়ের ৫০০টি পরিবারের ঘরে ঘরে খাদ্য সামগ্রী ও নগদ সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছেন। প্রতিটি পরিবারে বিতরণ করা হচ্ছে নগদ ৫ শত টাকা এবং সাথে একটি ফুড প্যাকে সাড়ে ১০ কেজি পণ্য- (চাউল-৫ কেজি, আটা -২ কেজি , ছোলা-১ কেজি, বুটের ডাল-১.৫ কেজি, মুড়ি-১ কেজি) । চান্দিনা উপজেলার ৭০-৮০ টি গ্রামের অন্তত ১ হাজার পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে পোনসাই কমপ্লেক্স ।

পোনসাই কমপ্লেক্সের প্রতিষ্ঠাতা প্রকৌশলী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম জানান "আমাদের এ সহযোগীতার হাত অদূর ভবিষ্যতে আরো বেশি প্রশস্ত করার করার চেষ্টা করবো। সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য কাজ মানে কাউকে করুণা করা নয়, সুন্দর মানবিক সমাজ তৈরির জন্য এটা আমাদের দায়িত্ব।"

প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৪ শতাধিক দেশি-বিদেশি দাতাদের সহযোগীতায় পোনসাই কমপ্লেক্স এর আওতাধীন মনের আলো পাঠাগার নির্মাণ, আধুনিক সুবিধাসহ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র স্থাপন, মসজিদ নির্মাণ, সেলাই মেশিন প্রশিক্ষণ, দরিদ্রদের সুপেয় পানির জন্য নলকূপ স্থাপন, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান, শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, স্কুল নির্মান, স্বর্ণালী ষাট প্রকল্পের আওতায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের মাসিক ভাতা প্রদান, স্বনির্ভর প্রকল্পের আওতায় রিকশা- ভ্যান কিনে দেয়া, গরু- ছাগল কিনে দেয়া, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের আর্থিক সহযোগীতা, প্রতিবন্ধীদের হুইল চেয়ার প্রদান, চিকিৎসাব্যয় সহায়তা, সেলাই মেশিন বিতরণ, শীতে কম্বল বিতরণ, বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ত্রাণ বিতরণ, রমজানে ইফতার বিতরণ, ঈদে দুঃস্হদের মাঝে পোশাক বিতরণ সহ নানাবিধ সচেতনতামূলক কাজ অব্যাহত রেখেছে।

এছাড়া প্রতি বছর সংগ্রামী মা বৃত্তির (বাবাহীন সন্তানদের যেসব মা কষ্ট করে পড়াচ্ছেন) আওতায় ৩ জন মাকে ১০ হাজার টাকা করে এককালীন সহায়তা প্রদান করে তিনজন দাতার মায়েদের নামে যথাক্রমে লায়লা রহমান সংগ্রামী মা বৃত্তি, ফাতেমা বেগম সংগ্রামী মা বৃত্তি, কাজী দিলারা হামিদ সংগ্রামী মা বৃত্তি হিসেবে । পিএসসি পরীক্ষায় চান্দিনা উপজেলার টেলেন্টপুলে বৃত্তি প্রাপ্তদের আমেরিকা প্রবাসী এক দাতার অর্থায়নে শ্রাবন্তী হক মেমোরিয়াল বৃত্তির আওতায় শিক্ষাবৃত্তি প্রদান, জেএসসি তে টেলেন্টপুলে বৃত্তিপ্রাপ্তদের ম্যাটাডোর-পোনসাই কমপ্লেক্স বৃত্তি ছাড়াও দেশ-বিদেশের ব্যক্তি পর্যায়ের বিভিন্ন দাতাদের এবং মানুষ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন এর মত অর্গানাইজেশন এর সহায়তায় সুনামধন্য কলেজে চান্স পাওয়া ২০ জনেরও বেশি এবং বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি মেডিকেল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া চান্দিনা উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার অতি দরিদ্র পরিবার যাদের সন্তানদের পড়ালেখার খরচ চালাতে পারে না এমন প্রায় ৫০ জন শিক্ষার্থীর বিভিন্ন মেয়াদে শিক্ষাবৃত্তির ব্যবস্থা করছে পোনসাই কমপ্লেক্স।

পোনসাই গ্রামকে আদর্শ গ্রাম হিসেবে প্রতিষ্ঠা ও চান্দিনা উপজেলার উন্নয়নসহ অদূর ভবিষ্যতে এ ধারা অব্যহত রেখে মানবিক সমাজ ও দেশ বিনির্মাণে আরো বেশি অবদান রাখবে এমনটাই পোনসাই কমপ্লেক্সের প্রত্যাশা।