মেস ভাড়া; বিপাকে কুবি শিক্ষার্থীরা

মেস ভাড়া; বিপাকে কুবি শিক্ষার্থীরা

ফাইল ছবি

কুবি প্রতিনিধি

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করা হয়েছে বাংলাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অনুসারে পরিস্থিতি প্রতিকূলে থাকলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ থাকতে পারে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই। এমতাবস্থায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই বিচলিত। সংকটের এই মুহুর্তে শিক্ষার্থীদের মেস ও বাসা ভাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য গলার কাটা হিসেবে দাঁড়িয়েছে।

খোজ নিয়ে জানা যায়, আবাসিক হলে সিট না থাকারর কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে, শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী টিউশন করিয়ে বাসা ভাড়া ও নিজের খরচ বহন করে থাকে। লকডাউনের এই পরিস্থিতিতে মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার ও টিউশন করিয়ে চলা শিক্ষার্থীদের বাসা ভাড়া দেওয়া অনেকটা কষ্টসাধ্য। এই মুহূর্তে বাসা ভাড়া শিথিল করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা লিখালিখি করে যাচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, জ্যোতি সাহা বলেন, আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে।আমার বাবা প্রাইভেট ফার্ম এ সামান্য বেতনে চাকরি করে। কিন্তু লকডাউনের কারণে ২ মাস যাবত বেতন পাচ্ছেন না যে কারণে উনার পক্ষে সংসারের খরচ চালানোর পাশাপাশি বাসা ভাড়া দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বাসা ভাড়ার বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সমন্বিত জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী হেলাল উদ্দিন বলেন,বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের তিন-চতুর্থাংশই মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য। যাদের অধিকাংশেরই টিউশন, কোচিং বা কোন খন্ডলীন চাকরিই মেস ভাড়া, খাবার বিল ও পড়ালেখার ব্যয় নির্বাহের একমাত্র উৎস। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল ভয়াবহ করোনার প্রভাবে সম্পূর্ণ রুপে বন্ধ হয়েছে তাদের এই একমাত্র পথ। সেই সাথে বন্ধ হয়েছে লক ডাউনে তাদের পরিবারের আয়ও। এমতাবস্থায় শিক্ষার্থীদের পক্ষে মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টানা ৭ মাসের বাসা ভাড়া প্রদান করা দুরূহ হয়ে পড়বে। যা বাসা ভাড়া মওকুফ করা সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত বলে ইংগিত বহন করে। অতএব মানবিক বিবেচনায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল কে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।

আরেক শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা অনুযায়ী, করোনা ভাইরাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বন্ধ থাকতে পারে। আমরা শিক্ষার্থীগণ বিগত ২০ মার্চ থেকে নিজ নিজ এলাকায় বাসায় অবস্থান করছি।এ অবস্থায় ভাড়া বাসায় থাকা শিক্ষার্থীদের আরো প্রায় পাঁচ মাসের মতো নিজ নিজ এলাকায় থাকতে হতে পারে। কিন্তু বাসার মালিকগণ ভাড়া পরিশোধ করতে চাপ দিচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ শিক্ষার্থী শিক্ষার্থী গ্রামের দরিদ্র পরিবার থেকে ওঠে আসা, এবং মফস্বল এলাকা থেকে আসা। শিক্ষার্থীদের মাঝে কিছু শিক্ষার্থী শহরে এসে টিউশনি করে, দোকানে পার্ট টাইম জব করে, কিছু টা নিজের খরচ বহন করে,অনেকে নিজ পরিবারকে ও সাহায্য করা লাগে। দেশের এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের ইনকাম করার কোন উৎস নেই । শিক্ষার্থীদের দুই মুঠো খাবার খাওয়া যেখানে অনেক কষ্টসাধ্য সেখানে ভাড়া প্রদান অসম্ভব হয়ে উঠে। এমত অবস্থায় উক্ত সমস্যা নিরসনে জেলা প্রশাসক গনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

মাহমুদুল হাসান বলেন, "কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক সুবিধার স্বল্পতার কারনে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীদেরকে থাকতে হয় ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী সালমানপুর, কোটবাড়ি অঞ্চলে এবং কুমিল্লা শহরে ভাড়া বাসা বা মেসগুলোতে। লকডাউনের এই পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা নিজ বাসায় অবস্থান করলেও তাদেকে ভাড়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন অনেক মেস মালিক। শিক্ষার্থীদের অনেকে টিউশনি ও পার্ট টাইম জব হারিয়ে এবং পরিবারের উপার্জনক্ষম সদস্য কর্মহীন থাকায় আর্থিক সমস্যার মাঝে মেস ভাড়ার জন্য চাপ আরোও অধিক দুর্ভোগে ফেলেছে। বর্তমানে টিউশন বা অন্য যে সকল উপার্জনের মাধ্যম রয়েছে তা বন্ধ থাকায় তারা নিজেরাই পরিবার নিয়ে চলতে পারছে না। এই শিক্ষার্থীদের পক্ষে লকডাউন কালীন বাসা মেস ভাড়া দেয়া সম্ভব নয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান রাখছি কুমিল্লা জেলা প্রশাসনকে সাথে নিয়ে মেস মালিকদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে লকডাউন কালীন বাসা/ মেস ভাড়া মওকুফে উদ্যোগ নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে।"

শরিফুল ইসলাম বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ।তাই এখন আমাকে গ্রামের বাড়িতে থাকতে হচ্ছে।আমার পরিবার নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবার।আমি টিউশনি করে আমার নিজের খরচ বহন করি।তাই এখন লকডাউনে থাকার কারনে আমি টিউশনি করতে পারছি নাহ। এই অবস্থায় পরিবারের পক্ষেও মেস ভাড়া দেওয়া সম্ভব নয়। আমার মতো আরও অনেকে আছে যাদের ও একই অবস্থা। অতএব আমাদের মেস ভাড়ার বিষয়টা বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কাজী কামাল বলেন,মেসের ভাড়ার বিষয়ে খুব শীঘ্রই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটা সিদ্ধান্ত নিবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাড়িওয়ালাদের প্রতি অনুরোধ করেছেন যাতে এখন কোনো শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বাসা ভাড়া নেওয়া না হয়। দেশের অবস্থা স্বাভাবিক হওয়ার পরে সবাই বসে একটা সিদ্ধান্ত নিবে। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে প্রক্টর বলেন এখন ভাড়ার টাকা না দিয়ে সবকিছু ঠিক হওয়ার পরে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী টাকা দিতে। আর বাড়িওয়ালাদের বিষয়টি বুঝিয়ে বলতে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এবং কুমিল্লা জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন থেকে নোটিশ দেওয়ার বিষয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কুমিল্লা জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলবে। এবং একটা সুরাহা হওয়ার আশ্বাস দেন।