আন্তর্জাতিক নার্সিং দিবস

আন্তর্জাতিক নার্সিং দিবস

ফাইল ছবি

-ডা. মুহাম্মদ আব্দুস সবুর

সারা বিশ্বে মে মাসের ১২ তারিখ আন্তর্জাতিক নার্সিং দিবস হিসাবে পালিত হয়। সমাজে নার্সদের অবদানের স্বীকৃতির প্রতিক এই দিবস উদযাপন। এই দিনটি আধুনিক নার্সিং -এর প্রতিষ্ঠাতা ফ্লোরেন্স নাইটিংগেলের (১৮২০-১৯১০) জন্মদিন। নার্সদের আন্তর্জাতিক কাউন্সিল ১৯৬৫ সাল থেকে আন্তর্জাতিক নার্সিং দিবস পালন করে আসলেও ১৯৭৪ সাল থেকে ১২ মে এই দিবস পালনের শুরু। প্রতিবছর এই দিবসের একটি প্রতিপাদ্য থাকে, যেটি ২০২০ সালের জন্য হচ্ছে ‘পৃথিবীকে স্বাস্থ্যের জন্য শুশ্রতা প্রদান।’

পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নার্সিং স্বাস্থ্য সেবার একটি অপরিহার্য অংশ। এই পেশার সার্বিক দেখাশোনার জন্য রয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাথে সংযুক্ত নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর। পেশার শৃঙ্খলা ও মানোন্নয়নের জন্য আছে বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল।

বাংলাদেশে বর্তমানে কয়েক ধরনের নার্সিং শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর তিন বছর ব্যাপী ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স ও মিডওয়াইফারি কোর্স। উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর চার বছর মেয়াদি বিএসসি ইন নার্সিং কোর্স। ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স ও মিডওয়াইফারি পাসের পর দুই বছর মেয়াদি পোস্ট বেসিক বিএসসি ইন নার্সিং ও বিএসসি ইন পাবলিক হেলথ নার্সিং কোর্স। এছাড়াও আছে দুই বছর মেয়াদি মাস্টার্স অব সায়েন্স ইন নার্সিং কোর্স। আরো রয়েছে বিশেষায়িত নার্সিং কোর্স - এক বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা পেডিয়াট্রিক, কার্ডিয়াক ও রেনাল বিষয়ে।

বর্তমানে ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স এন্ড মিডওয়াইফারির জন্য মোট ২৫০ (সরকারি ৪৬ ও বেসরকারি ২০৪) প্রতিষ্ঠানে আসন আছে ১২,৫১০ (সরকারি ২,৭৩০ ও বেসরকারি ৯,৭৮০)। বিএসসি ইন নার্সিং এর জন্য মোট ৮৬ (সরকারি ২০টি বেসরকারি ৬৬) প্রতিষ্ঠানে আসন আছে ৪,৬৭৫ (সরকারি ১,৬৩৫ ও বেসরকারি ৩,১৪০)। পোস্ট বেসিক বিএসসি ইন নার্সিং/ পাবলিক হেলথ নার্সিং এর জন্য মোট ৫৩ (সরকরি ৬ ও বেসরকারি ৪৭) প্রতিষ্ঠানে আসন রয়েছে ২,৫২৫ (সরকারি ৬৫০ ও বেসরকারি ১,৮৭৫)। মাস্টার্স অব সায়েন্স ইন নাসিং এর জন্য একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠানে আসন আছে ৬০টি। ডিপ্লোমা ইন পেডিয়াট্রিক নার্সিং-এ একটি মাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠানে আছে ২০টি আসন। ডিপ্লোমা ইন কার্ডিয়াক নার্সিং এ ৫টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ১০০ আসন। ডিপ্লোমা ইন রেনাল নার্সিং এ একমাত্র বেসরকরি প্রতিষ্ঠানে ২০টি আসন। 

বাংলাদেশে রেজিস্টার্ড নার্স মিডওয়াইফ আছেন ৫৪,৬০৩; যার মাঝে ডিপ্লোমাধারী ৫০,৫৩৯ গ্রাজুয়েট, ৪,০৬৪জন। রেজিস্টার্ড জুনিয়র নার্স আছেন ১৮১জন। রেজিস্টার্ড সহকারী নার্স আছেন ২,৪২৫জন। বিশেষায়িত রেজিস্টার্ড নার্স আছেন সাইটিয়াট্রিক ৮২, অফথালমেক ৩১, পেডিয়াট্রিক ৭২, কার্ডিয়াক/ ইনটেনসিভ কেয়ার ২৭৫, চেস্ট ডিজিস ৪৩ ও রিহ্যাবিলিটেশন ৩৭। 

বর্তমানে দেশের সকল সরকরি স্বাস্থ্য সেবা ও নার্সিং প্রতিষ্ঠানে ৩২,৫৪৭-র মতো নার্স নিয়োজিত আছেন। সরকারি ২৫০ শয্যার হাসপাতালে নার্সিং সুপারভাইজারের পদ ৪টি, সিনিয়র স্টাফ নার্স ৫৮টি, স্টাফ নার্স ১৬টি ও সহকারি নার্স ৬টি।সরকারি ১০০ শয্যার হাসপাতালে পদ রয়েছে নার্সিং সুপারভাইজারের ২টি, সিনিয়র স্টাফ নার্স ৩০টি, স্টাফ নার্স ১১টি। ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নার্সিং সুপার ভাইজারের পদ ১টি, সিনিয়র স্টাফ নার্স ১৪টি ও সহকারি নার্স ১টি। ৩১ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নার্সিং সুপারভাইজারের পদ রয়েছে ২টি, সিনিয়র স্টাফ নার্সের ১০টি ও সহকারি নার্সের ১টি। ১০ শয্যার সরকারি হাসপাতালে রয়েছে সিনিয়র স্টাফ নার্সের ৪টি ও সহকারি নার্সের ৪টি পদ।

এবার এমন একটি সময়ে আন্তর্জাতিক নার্সিং দিবস পালিত হচ্ছে যখন বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব  করোনার অতিমারির সাথে যুদ্ধে লিপ্ত। এই যুদ্ধে অন্যতম স্বাস্থ্য কর্মী হিসাবে নার্সরা  রয়েছে সম্মুখ সারিতে । স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা সত্বেও তারা প্রাণপনে লড়ে যাচ্ছেন প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের প্রত্যয়ে। অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন, মৃত্যু বরণ করেছেন অনেকেই।  তারপরেও পেশার প্রতি দায়বদ্ধতার কারণে তারা পালণ করে চলেছেন তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব। পরিবার, সন্তান, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনদের প্রতি দায়বদ্ধতাকে পাশে সরিয়ে তারা আবারও পেশার প্রতি তাদের অগ্রাধিকারকে সমুন্নত রাখছেন। আন্তর্জাতিক নার্সিং দিবসে সকল নার্সের প্রতি প্রাণ ঢালা অভিনন্দন, অফুরন্ত কৃতজ্ঞতা । প্রতাশ্যা এ সংকট কেটে যাবার।

লেখক:

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ