সরকারি চাকুরেদের প্রণোদনায় ১৩৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ

সরকারি চাকুরেদের প্রণোদনায় ১৩৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ

ছবিঃ সংগ্রহীত

করোনাকালীন সরকারি চাকুরেদের প্রণোদনা এবং আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ সংশ্লিষ্ট ক্ষতিপূরণ খাতে এক হাজার ৩৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ অর্থ সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে সেবাদানরত অবস্থায় কেউ করোনা আক্রান্ত হলে বা মৃত্যুবরণ করলে ক্ষতিপূরণ খাতে বরাদ্দ রাখা রয়েছে। আর বাকি অর্থ যাবে করোনায় সেবাদানরত ডাক্তার-নার্সসহ সরকারি চাকরিজীবীদের প্রণোদনা খাতে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ ব্যাপারে অর্থ বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে গতকাল মঙ্গলবার বলেছেন, করোনাকালীন যারা প্রত্যক্ষভাবে কাজ করে যাচ্ছেন সেসব সরকারি চাকরিজীবীর প্রণোদনা এবং ক্ষতিপূরণ দুটোই দিবে সরকার। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। তাই অর্থ মন্ত্রণালয় এ দুই খাতে অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে। খুব শিগগিরই এ অর্থ ছাড় করা হবে।

সূত্র মতে, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করে চলেছেন। এসব চাকুরের মধ্যে রয়েছেন ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, মাঠপ্রশাসনের কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, সশস্ত্রবাহিনীর সদস্য। তাদেরকে প্রণোদনা দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে ১৪ লাখ সরকারি চাকরিজীবীর সবাই এ প্রণোদনার আওতায় আসবে কি না তা এখনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। এ ক্ষেত্রে যারা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছেন তাদেরকেই অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। এ জন্য একটি তালিকা করা হচ্ছে। তালিকায় প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের রাখা হচ্ছে। তবে সরকারি অন্য কর্মকর্তা এবং ব্যাংকাররা এ তালিকায় স্থান পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা কাজ করছে। বিশেষ করে ব্যাংকারদের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা বেশি। কারণ তারা বর্তমানে দশ দিন অফিসে গেলে এক মাসের মূল বেতন প্রণোদনা হিসেবে পাচ্ছেন। অন্য দিকে তালিকায় যাদের নাম থাকবে তারা দুই মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ প্রণোদনা হিসেবে পাবেন। ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ প্রণোদনা হিসেবে দেয়া হতে পারে। আর এ জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। শিগগিরই এ অর্থ ছাড় করা হবে। এ জন্য একটি প্রজ্ঞাপনও জারি করবে অর্থ মন্ত্রণালয়।

এর আগে গত মাসে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে একটি পরিপত্র জারি করে করোনারোগীদের সেবাদানকারী কোনো সরকারি চাকুরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলে সর্Ÿোচ্চ ৫০ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। একইভাবে সেবাদান অবস্থায় করোনা পজিটিভ হলে তিনি পাবেন সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা। এ পরিপত্র চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর বলে বিবেচিত হবে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, নোভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সেবা প্রদানে সরাসরি কমর্রত ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ এ সংক্রান্ত সরকারঘোষিত নির্দেশনা বাস্তবায়নে মাঠপ্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্রবাহিনী এবং প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য কর্মচারী দায়িত্ব পালনকালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে সরকার ক্ষতিপূরণ প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

এ ক্ষেত্রে, ১-৯ গ্রেডের কেউ করোনারোগে আক্রান্ত হলে তিনি পাবেন ১০ লাখ টাকা। আর মারা গেলে পাবেন ৫০ লাখ টাকা। একইভাবে ১০-১৪ গ্রেডের চাকুরেরা আক্রান্ত হলে পাবেন সাড়ে ৭ লাখ টাকা। মারা গেলে পাবেন সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা। আর ১৫-২০ গ্রেডের সরকারি চাকুরেরা আক্রান্ত হলে পাবেন ৫ লাখ টাকা এবং মৃত্যুবরণ করলে ২৫ লাখ টাকা।

প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়, ক্ষতিপূরণের আওতায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সেবা প্রদানে সরাসরি কর্মরত ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যসেবাকর্মী, ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে লকডাউন ও সরকারঘোষিত নির্দেশনা বাস্তবায়নে নিয়োজিত মাঠপ্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্রবাহিনী এবং প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের জনকর্মকর্তা ও কর্মচারী এ সুবিধা পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।

ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তির জন্য কয়েকটি পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে বলে পরিপত্রে বলা হয়েছে। পদ্ধতিগুলোর মধ্যে রয়েছে, করোনাভাইরাস পজিটিভের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যসেবাকর্মীসহ মাঠপ্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সশস্ত্রবাহিনী এবং প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীর করোনাভাইরাসে পজিটিভের প্রমাণক/ মেডিক্যাল রিপোর্টসহ নিজ নিজ নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের কাছে একটি নির্দিষ্ট ফরমে ক্ষতিপূরণের দাবিনামা পেশ করতে হবে।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণের ক্ষেত্রে অন্য একটি নির্দিষ্ট ফরমে মৃত্যুবরণকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্ত্রী/স্বামী/ সন্তান এবং অবিবাহিতদের ক্ষেত্রে বাবা/মা ক্ষতিপূরণের দাবিসংবলিত আবেদন নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করবেন। এরপর আবেদন নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ এ ফরমগুলো যাচাই-বাছাইপূর্বক সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগের মাধ্যমে অর্থ বিভাগে প্রস্তাব প্রেরণ করতে হবে। শুধুমাত্র প্রজাতন্ত্রের যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী উপরোক্ত কাজে নিয়োজিত রয়েছে তারা এ ক্ষতিপূরণ পাওয়ার যোগ্য হবে।