ইতিকাফে বসে মোবাইল ব্যবহারের বিধান

ইতিকাফে বসে মোবাইল ব্যবহারের বিধান

ছবিঃ সংগ্রহীত

প্রশ্ন : বর্তমান সময়ে আমাদের জন্য মোবাইল অতিপ্রয়োজনীয় বস্তুতে পরিণত হয়েছে। মোবাইলের মাধ্যমে যেহেতু বাইরে কথা বলা যায় আর ইতিকাফে বসে বাইরে কথা বলা নিষেধ তাই জানতে চাচ্ছি, ইতিকাফে বসে মোবাইল ব্যবহার করা যাবে? মসজিদে মোবাইলে অডিও শোনা বা ভিডিও দেখা যাবে? জানালে উপকৃত হবো।

উত্তর : ইতিকাফে আল্লাহর সঙ্গে বান্দার নীবিড় সম্পর্ক ও ভালোবাসা স্থাপনের এক অনন্য মাধ্যম। পার্থিব সব মোহ এবং ব্যতি-ব্যস্ততা বর্জন করে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের অন্যতম উপায়। নিজেকে আপন রবের সমীপে সমর্পণের সর্বোত্তম মৌসুম। ইতিকাফের গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য স্বয়ং রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন থেকেই উদ্ভাসিত হয়ে উঠে। আম্মাজান হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যু অবধি রমজানের শেষ দশকে এতেকাফে বসেছেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর-২০২৬) তাই রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ মুমিন জীবনে আল্লাহর নৈকট্য ও আখেরাতের পুঁজি সংগ্রহের সুবর্ণ সুযোগ।

পুরুষদের জন্য ইতিকাফ মসজিদে করা জরুরি। পৃথিবীর সব মসজিদ আল্লাহ তায়ালার ঘর। আর আল্লাহর ঘরের পবিত্রতার ব্যাপারে কোরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমার গৃহ তাওয়াফকারী, কেয়ামকারী ও রুকু-সেজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখো।’ (সূরা হজ্জ, আয়াত নম্বর-২৬)। তাই ইতিকাফকারীর জন্য ইতিকাফরত অবস্থায় এমন কোনো কাজ করা যাবে না, যা মসজিদের পবিত্রতা রক্ষা ও তার ইতিকাফ আদায় হওয়ার পথে অন্তরায়। যেমন মসজিদের ভেতরে গল্প-গুজব করা, অপ্রয়োজনে দুনিয়াবী কথাবার্তা বলা, অন্যের গীবত-শেকায়েত করা ইত্যাদি। বরং ইতিকাফকারীর জন্য উচিত হলো, সারাক্ষণ নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আযকার, দ্বীনি কিতাবাদী অধ্যয়ন ইত্যাদি ইবাদাত-বন্দেগীর মধ্যে ব্যস্ত থাকা। প্রয়োজনে কল্যাণকর ও ভালো কথাবার্তা বলতেও কোনো সমস্যা নেই।

আজকাল মোবাইল-ফোন আমাদের জীবনের প্রয়োজনীয় একটি অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই ইতিকাফকারীর জন্য মসজিদে মোবাইল-ফোন সঙ্গে রাখা এবং এর মাধ্যমে পরিবার ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রয়োজনীয় খোঁজ-খবর রাখা জায়েয আছে। কিন্তু মোবাইলের মাধ্যমে অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলা, গেমস খেলা, ভিডিও ওয়াজ বা অন্য কোনো প্রোগ্রাম দেখা জায়েয নেই। আর মোবাইলের মাধ্যমে ক্রিকেট খেলা দেখা বা নাচ গান দেখা তো সম্পূর্ণ নাজায়েয ও হারাম। চাই তা মসজিদের ভেতরে হোক বা বাইরে। তবে অডিওর মাধ্যমে কোরআন তেলাওয়াত বা ওয়াজ শুনতে কোনো অসুবিধা নেই। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া: ১/২৩৩, আল বাহরুর রায়েক: ২/৫৩০-৫৩২, আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল: ৪/৬৩২)।

শেষকথা হলো, আমাদের ইতিকাফ যেন হয় সব অনর্থ ও পাপ-পঙ্কিলতা মুক্ত সেদিকে অবশ্যই সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। অধিক ইবাদাত-বন্দেগীর মাধ্যমে ইতিকাফে প্রাণবন্ত ও আল্লাহর নিকটে গ্রহণযোগ্য করে তোলার পূর্ণ চেষ্টা করতে হবে।