এমপিওভুক্তির চাপে শিক্ষা মন্ত্রণালয়

এমপিওভুক্তির চাপে শিক্ষা মন্ত্রণালয়

ফাইল ছবি

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন করে এমপিওভুক্তির কাজ করতে গিয়ে বহুমুখী চাপে পড়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। চার মানদণ্ডের ভিত্তিতে যোগ্য স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় এমপিও দিতে অনড় খোদ মন্ত্রী-উপমন্ত্রীসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

কিন্তু নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করছেন কিছু সংসদ সদস্যসহ প্রভাবশালীরা। তাদের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের কয়েক শীর্ষ কর্মকর্তাও যোগ দিয়েছেন। এসব কারণে তালিকা তৈরির কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

তবে চলতি মাসেই এমপিও পাওয়া নতুন প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করতে চায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে ছুটির দিনসহ তালিকা চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। সর্বশেষ শুক্র ও শনিবার বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোতে (ব্যানবেইস) মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগ তালিকা তৈরির কাজ করেছে। ওই তালিকা নিয়ে আজ বিকাল ৫টায় বৈঠকে বসছেন কর্মকর্তারা। এতে শিক্ষামন্ত্রী সভাপতিত্ব করবেন বলে জানা গেছে।

কয়েকদিন আগে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, আমরা আশা করছি জুলাইর মধ্যে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির কাজ শেষ করা সম্ভব হবে। চার মানদণ্ড অনুযায়ী উপযুক্ত ও যোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকেই এমপিও দেয়া হবে। পাশাপাশি যেসব উপজেলায় যোগ্য প্রতিষ্ঠান পাওয়া যায়নি সেসব উপজেলায় অপেক্ষাকৃত যোগ্য প্রতিষ্ঠানকে এমপিও দেয়া হবে।

এছাড়া নিয়মের মধ্যে থেকে বিশেষ বিবেচনায় হাওর-বাঁওড়, চর ও দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলের কিছু প্রতিষ্ঠানকে এমপিও দেয়া হবে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা না হলে শিক্ষক-কর্মচারীরা নিরুৎসাহিত হয়ে যাবেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এবার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগ আলাদাভাবে এমপিওর জন্য যোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা করেছে। প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক স্বীকৃতি, শিক্ষার্থীর সংখ্যা, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এবং পরীক্ষায় পাসের হার- এ চার শর্ত বিবেচনায় নিয়ে প্রতিটি মানদণ্ডের জন্য ২৫ নম্বর করে দেয়া হয়। ১০০ নম্বরের মধ্যে যেসব প্রতিষ্ঠান বেশি নম্বর পেয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানকে যোগ্য হিসেবে বাছাই করা হয়।

জানা গেছে, প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে যোগ্যতা নির্ধারণ করতে গিয়ে দেখা যায়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ ১১১টি থানায় একটি প্রতিষ্ঠানও যোগ্য হিসেবে পায়নি। আর কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগ পায়নি ৭৭ থানায়। দুই বিভাগের তালিকা সমন্বয় করে দেখা গেছে, শতাধিক থানায় এমপিও পাওয়ার মতো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই।

এখন ওইসব উপজেলায় কোন মানদণ্ডের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠান বাছাই করা হবে সেটি নির্ধারণেই আজ বৈঠকে বসছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ইতিমধ্যে ৩ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা দিয়েছেন সংসদে। ইতিমধ্যে ২ হাজার ৭৬২টি প্রতিষ্ঠান যোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করেছে মন্ত্রণালয়। সে হিসাবে বিশেষ বিবেচনায় আড়াইশ’ প্রতিষ্ঠান এমপিও পেতে পারে, যা উল্লিখিত থানা এবং দুর্গম ও অনগ্রসর এলাকা থেকে বাছাই করা হতে পারে।

সূত্র জানায়, এ ব্যাপারে ইতিমধ্যে দুই বিভাগ আলাদা প্রস্তাব তৈরি করেছে। এর মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এমপিও নীতিমালার ২২ ধারার আলোকে অনগ্রসর ও দুর্গম এলাকার প্রতিষ্ঠানকে এমপিও দিতে চায়। এছাড়া ১১১ থানায় সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিও দেয়ার প্রস্তাব তৈরি করেছে। অপরদিকে কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগ এমপিও নীতিমালার ৩৫ ও ৩৬ ধারার আলোকে এমপিও দিতে চায়।

কিন্তু ওই বিভাগের এক শীর্ষ কর্মকর্তা এ ক্ষেত্রে ৭৭ উপজেলা থেকে ইচ্ছামতো এমপিও দিতে চান। কিন্তু এতে জটিলতার উদ্ভব ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে উভয় বিভাগই বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) দরিদ্র ম্যাপ অনুযায়ী থানা নির্বাচনের পক্ষে। এমন পরিস্থিতিতে আজ মন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর কাছে দিক নির্দেশনা চাওয়া হবে বলে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত সচিব জাকির হোসেন ভূঁইয়া কোনো মন্তব্য করেননি। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব জাভেদ আহমেদ বলেন, এমপিওভুক্তির লক্ষ্যে তালিকা তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে।

এদিকে মন্ত্রণালয়ের উভয় বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে এমপিও দিতে প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো সংসদ সদস্যের ডিও (আধা সরকারি পত্র) জমা পড়ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। এ ব্যাপারে ডা. দীপু মনি বলেন, নিয়মের মধ্যে থেকে যতটুকু সম্ভব সুবিচার করা হবে।

আগস্টে বিজ্ঞপ্তি দিলে ৯ হাজার ৬১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির আবেদন করে। এসব প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করতে লাগবে ৪ হাজার ৩৯০ কোটি ১২ লাখ ৫ হাজার টাকা। তবে যদি যোগ্য বিবেচিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিও দেয়া হয় তাহলে লাগবে ১ হাজার ২০৭ কোটি ৬৬ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। সবমিলে ২ হাজার ৭৬২টি প্রতিষ্ঠান যোগ্য বিবেচিত হয়েছে।