আমার অনূভবে রমাদান- ১৬

আমার অনূভবে রমাদান- ১৬

ছবিঃ সংগৃহীত

সত্যের উপস্থিতি যেমন মিথ্যাকে তাড়িয়ে দেয়, একটি সূর্যের উপস্থিতি যেমন অন্ধকারের মৃত্যু ঘটায়, তেমনি মুসলিম জীবনে আলোকময় কুরআন ও হৃদয়ের অন্ধত্ব একত্রে বসবাস করতে পারে না। সেখানে টিকে থাকে যেকোনো একটি। তাই, একই জীবনে সত্য-মিথ্যার শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বিস্ময়কর বৈকি! আমি কী আজো ভেবে দেখবো না (!) যে, আমার মনের গহীনে কার নিত্য বসবাস, আমার পছন্দ-অপছন্দের তালিকায় কার দৌরাত্ম চলছে, আমার হৃদয় বীণায় কার ‍সূর বেজে উঠে বার বার, আমি জেগে উঠি অথবা ঘুমিয়ে পড়ি কোন স্বপ্নসুখের রাজ্যে? আর যা-ই হোক, নিজের এ প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থান জানতে খুব একটা কষ্ট হওয়ার কথা নয়।  যদিও মুসলিম উম্মাহ একটা সুদীর্ঘ সময় ধরে কুরআনকে সাথে (!) নিয়ে-ই বিস্ময়কর অন্ধকারে বসবাস করছে; সত্য-মিথ্যা-জুলুম-দাম্ভিকতা কোনোকিছুই যেন তাদের কাছে মালুম হওয়ার অবস্থানে নেই।

অথচ আমরা কি দেখছি না যে, সৃষ্টিজগতের অন্ধকার দূর করতে তাদের মহান রব আকাশমন্ডলে সেঁটে দিয়েছেন সূর্যসহ অসংখ্য আলোকমালা- সে কাজে ছোট্ট জোনাকীও যেন পিছিয়ে থাকতে নারাজ; তেমনিভাবে মানব হৃদয়ের অন্ধকার দূর করতে দেয়া হয়েছে এ কুরআনকে নূর হিসেবে।

প্রশ্ন হলো- আলোকময় কুরআনের উত্তরাধিকার হয়েও আমরা কেন অন্ধকারমুক্ত হতে পারছি না? তাহলে আমরাও কী পূর্ববর্তীদের ন্যায় গাধার বোঝা বহনের মতই চোখ বন্ধ করে আলোর মশাল নিয়ে চলেছি- যুগের পর যুগ, শতাব্দী থেকে শতাব্দী, দুনিয়ার এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে?
 
পৃথিবী অবাক বিস্ময়ে দেখছে আর প্রশ্ন করছে, বিশ্বময় ১৭০ কোটি বনি আদমের ভাষাহীন এ মহামিছিলে কোনো নেতৃত্ব নেই, নেই কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য বা পরিকল্পনা। একান্ত হঠকারিতার বশবর্তী হয়ে, এরা যেন মহাসমুদ্রে একটি হালের আনুগত্যকে অস্বীকার করে উদ্দেশ্যহীনভাবে দাঁড় বেয়ে চলছে- এটি উম্মাহর জীবনে কী ভয়ঙ্কর, কী অপরিণামদর্শিতা ! তারা এও দেখছে- স্বপ্নহীন জীবনের ভেলা নিয়ে অগ্রসরমান শোষিত-বঞ্চিত মানুষগুলোর দু‘টো চোখই কেন বন্ধ? তারা কী আলোক বিদ্বেষী, না দৃষ্টিহীন? ভাবছি- আমি, আমার উত্তরাধিকার এ সমাজকে নিয়ে সেই মিছিলেই তো শামিল হয়েছি ! কিন্তু সূরা ত্বহার দ্বিতীয় আয়াতে দৃঢ়তার সাথেই বলা হয়েছে- সে তার অনুসারীদেরকে কপালপোড়া বানাতে আসেনি। বরং অন্যত্র এসেছে- আলোকময় কুরআনকে উপেক্ষাকারিরা মহাদিবসে তার মহাপালকের সামনে অন্ধত্ব নিয়ে হাজির হবে আর অবাক হয়ে প্রশ্ন করবে, দুনিয়ায় আমি তো অন্ধ ছিলাম না !  ই‘তিকাফ ও ক্বদরের দশকে তাওবা-ইস্তিগফার হোক ব্যক্তি ও উম্মাহর জীবনের অন্ধত্ব ‍দূরের জন্যও!!! (চলবে)

লেখক: ড. মীর মনজুর মাহমুদ