করোনা চিন্তা

করোনা চিন্তা

ফাইল ছবি

ডঃ মোঃ নুরুদ্দীন

করোনার প্রথম ৩টা ধাপ আমরা খুব সফলভাবে সম্পন্ন করে খুব গর্বের সাথে ৪র্থ ধাপে উন্নিত হয়েছি।

Lockdown, Social Diatance এই টার্ম গুলোকে নিয়ে হাসি তামাসা করে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়েছি। এখন ৪র্থ ধাপে এসে সরকারকে বাধ্য হয়ে যেতে হয়েছে বিকল্প পন্থায়, যার নাম HERD IMMUNITY (সরকারের সাম্প্রতিক কিছু সিদ্ধান্তে আমার সেরকমই মনে হয়েছে)। বস্তুত এ ছাড়া আমাদের সামনে আর কোন রাস্তাও দেখছি না।

তো এখন HERD IMMUNITY নিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তোলার আগে আমরা এর পরিনতি সম্পর্কে কিছুটা জেনে নিই।

Herd Immunity কি?

এটা হল জনগণের বৃহৎ অংশের সমন্নিত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিশেষ কোন সংক্রমণের বিরুদ্ধে। এতে সেই সমাজের কমপক্ষে ৭০-৮০ শতাংশ মানুষের মাঝে সেই সংক্রমণের বিরুদ্ধে এন্টিবডি থাকতে হবে, যার উৎস vaccination অথবা infection.

কোভিড-১৯ এর কোন vaccine এই মুহুর্তে সারা বিশ্বে নেই। আবিষ্কার হলেও সেই টিকা আমাদের দেশে কবে আসবে সেটাও বলা যাচ্ছে না। তাই এখন একটাই নিষ্ঠুর উপায় আমাদের সামনে আছে, তা হলো প্রাকৃতিক সংক্রমণ। এই প্রাকৃতিক সংক্রমণ হয়ে herd immunity তৈরি হতে কত প্রাণ যাবে, সেটা ভাবলে হয়ত শিউরে উঠবেন। সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যপারটা হচ্ছে এ ভাইরাস যেহেতু বার বার mutations করে তার চরিত্র পাল্টাচ্ছে তাই এর বিরুদ্ধে আদো Herd immunity তৈরি হবে কিনা সেটাও এখনও বৈজ্ঞানিকরা নিশ্চিত না।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী Boris Johnson প্রথমে তার শিক্ষিত সচেতন নাগরিক সমাজ আর শক্তিশালী অর্থনীতি নিয়ে herd immunity এর রাস্তায় হাটতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পরে lockdown এর পথে দিয়েছিলেন।

আমরা লকডাউনে হোচট খেয়ে herd immunity তে যাচ্ছি।

চলেন হিসাব করে দেখি, কেন বরিস জনসন ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়েছিলেন।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ চিন্তা করলে দেখা যায়, আমাদের herd immunity তৈরী হতে ১৭ কোটি মানুষের ৭০% হিসেব করলে কমপক্ষে ১১ কোটি মানুষের ইনফেকশান হতে হবে। ধরলাম ১০ কোটি। WHO (বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থা) বলেছিল, বাংলাদেশে ৮ কোটি মানুষের ইনফেকশান হবে। এদের মাঝে ৮০% রোগীর asymptomatic অথবা mild symptomatic infection হবে। তাদের হাসপাতালে চিকিৎসা লাগবে না। বাকি থাকলো ২০% তথা ২ কোটি, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন পড়বে। ৫% মানুষের আইসিইউ এর প্রয়োজন হতে পারে, সেই ৫% ও কিন্তু ৫০ লাখ। মৃত্যুহার ২%, অর্থাৎ ২০ লাখ।

২ কোটি মানুষের চিকিৎসা বা ৫০ লাখ মানুষের আইসিইউ ব্যবস্থা করার মত স্বাস্থ্য অবকাঠামো কি আমাদের আছে? পরিষ্কার ভাষায় বললে, নাই।

২০ লাখ লাশ বইবার মত কাধ কি আমাদের আছে? জানি না।

চিকিৎসক হওয়ায় অনেক নিষ্ঠুর জিনিস দেখেছি। মৃতপ্রায় সন্তানের দেহ কোলে নিয়ে হাঁচড় পাঁচড় করতে দেখেছি মাকে, কিছু করতে পারে নি। মানুষ সচেতন না হলে সরকার সে রকম হাঁচড় পাঁচড় করে যাবে, স্বাস্থ্যকর্মীরা খাবি খাবে... কিন্তু কাজের কাজ কিছু হবে না। কিন্তু এ ছাড়া আমাদের কিছু করার ও নেই।

এই ২০ লাখ লাশের ভীড়ে নিজেকে বা নিজের প্রিয়জনকে দেখতে চান কিনা, সেটা একান্তই আপনার সিদ্ধান্ত। যত বিত্ত বৈভবই থাক না কেন, এখন বিদেশে চিকিৎসা পাবেন না। দেশের হাসপাতালগুলো কোভিড-১৯ রোগীতে ভরে যাচ্ছে খুব দ্রুত। সেখানে ভর্তির দৌড়ে বা অক্সিজেনের সিলেন্ডার দখলের দৌড়ে কতটুকু এগিয়ে থাকতে পারবেন, জানি না। তবে এতটুকু বলতে পারি, আমজনতার জন্য বাতাসের অক্সিজেনই হয়ত ভরসা হবে।

আপনার সামনে যে চিত্রই আসুক না কেন, এ বড় ভয়ানক অসুখ, আমাদের স্বাস্থ্য অবকাঠামোর দূর্বলতার কারনে তা দিনে দিনে আরও মারাত্বক হয়ে উঠছে।

আমাদের সামনে HERD IMMUNITY ছাড়া কোন পথ নেই। তাই, করোনা ভাইরাসের কাছে ধরা না দিয়ে ভ্যাক্সিন আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন। ধন্যবাদ

চিকিৎসা কর্মকর্তা

চট্রগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল

 সংগৃহীত)