করোনায় দেশীয় অর্থনৈতিক প্রভাব

করোনায় দেশীয় অর্থনৈতিক প্রভাব

ছবিঃ সংগৃহীত

অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১৯ অনুসারে দেশে মোট জনসংখ্যার ২০.৪ শতাংশ মানুষ শিল্পে ও ৩৯ শতাংশ মানুষ সেবা খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট। কিন্তু এসব খাতের উপর জীবিকা নির্ভরশীল অনেকেই বেসরকারি খাতে কর্মরত, এবং তাদের করোনার প্রভাবে কিভাবে তারা চাকুরি হারানোর ঝুঁকিতে আছে কিভাবে বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে সেটা দিনকে দিন স্পষ্ট হচ্ছে।।
বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ৮৪ শতাংশ আসে গার্মেন্টস ও চামড়া জাত পণ্য থেকে। আবার শুধু গার্মেন্টস সেক্টরে ২ কোটি লোকের কর্মসংস্থান হয়। যার মধ্যে ৮০ লাখ ই মহিলা। করোনা শুরু হলে ২৫ শে মার্চ থেকে গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে যায়। ফলে তাদের অধিকাংশ গ্রামে চলে যায়।পরবর্তীতে মে মাসের ১০ তারিখের দিকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে পুনরায় গার্মেন্টস খুলে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হলেও, কর্মী ছাটাই হল প্রায় ৫০%। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ শ্রম আইন- ২০০৬ এ বর্ণিত লে অফ রুলের কথা বলা হলেও সেটা মালিক পক্ষ যথাযথভাবে পালন করেনি বলে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় খবর পাওয়া যায়। আর কর্মী ছাটায়ের যে রুল আছে ২ মাসের বেতন ছাটাইকৃত কর্মীকে দিয়ে দিতে হবে ও নোটিশ দিতে হবে সেটা মানা হয়নি। যদিও কর্মী ছাটাই এর এই নিয়ম অন্য সময় ও মানা হয় না। যাহোক এর ফলে প্রাথমিকভাবে বেকারত্ব বাড়লো নতুন করে ১ কোটি ও তাদের সংশ্লিষ্ট পরিবার। অন্যদিকে পণ্য উৎপাদন, রপ্তানি ও বৈদেশিক আয় ধারাবাহিকভাবে হ্রাস পেতে থাকলো। অবশ্য ধীরে ধীরে এই গার্মেন্টস খুলে দেওয়াতে অনেকেই কাজে যোগদান করেছে।
বাংলাদেশের মোট চাকুরীজীবীর ৫% সরকারি চাকুরীজীবী, বাদ বাকি গুলা বেসরকারি অফিসে, কোম্পানিতে চাকুরি করে। এই বেসরকারি চাকুরিজীবীদের অধিকাংশ চাকুরি হারিয়েছে, হারাতে যাচ্ছে। এদের মধ্যে অনেকেরই চাকরি আছে কিন্তু বেতন পাচ্ছে না। আবার অনেকেরই বেতন কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে তারাও মারাত্মকভাবে বিপদগ্রস্ত হয়েছে কিন্তু সেটা তারা প্রকাশ করতে পারছে না।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি ধরনের ব্যাবসায়ীরা ও খুব বেশি সুবিধাজনক অবস্থানে নেই, তারা মুলত অর্থের প্রবাহ ধরে রেখে নিজেদের জীবীকা নির্বাহ করে থাকে। অর্থের প্রবাহ বলতে এই সকল শ্রেনীর জন্য টা জিনিসের ফ্লোকে বুঝায় যথাঃ ১) তারা যাদের কাছ থেকে পন্য পাইকারি হিসাবে কেনে,২) তাদের কাস্টমার, ৩) তারা মালিক পক্ষ। ৪) তাদের ব্যাংক ঋণ। এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে তাদের পন্য ক্র‍য়- বিক্রয় নাই ঠিকই, কিন্তু ব্যাংক ঋণের মুনাফা বহন করতে হচ্ছে। অন্যদিকে তাদের পরিচালন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। কারন তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ভাড়া, অধীনস্থ কর্মচারীদের বেতন,সাংসারিক খরচ ইত্যাদি চলমান রাখতে হচ্ছে । এসবের ফলে তাদের ব্যবসা বন্ধ করার উপক্রম দেখা দিচ্ছে।
আর এই করোনার ফলে পুজিবাদী সমাজ ব্যবস্থা আরো পাকাপোক্ত হচ্ছে। কারন ধনী দরিদ্রের ব্যবধান তৈরি হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে ঠিকই কিন্তু কেউ কিনতে পারছে আবার কারো কাছে কেনার মতো অর্থ নাই। শুধু একটা দৃষ্টান্ত দিলে বিষয়টা আরো পরিষ্কার হয়। যেমন পোশাক শিল্পে সরকার ৫০০০ কোটি টাকা প্রনোদনা দেওয়ার পরও তারা তাদের শ্রমিকদের বেতন ঠিকমতো দিতে পারছে না। এমনকি গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার হুমকি দিচ্ছে। অথচ মুদ্রা পাচারে বাংলাদেশ বিশ্বে প্রথম সারির দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম।
আবার, এরই মধ্যে মে মাসের ১৩ তারিখ ও ২০ তারিখ দিবাগত রাতের স্মরনকালের সেরা ঘুর্ণিঝড় আম্ফানে দেশের দক্ষিনাঞ্চলীয় জেলা গুলোতে বসতভিটা, মাছ, গাছ ও ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। যার প্রাথমিক ক্ষতির মুল্য ১১০০ কোটি টাকা। যা পুষিয়ে উঠতে অনেকখানি সময় লাগবে।
তবে হ্যাঁ সরকার গৃহীত নানা পদক্ষেপের যথাযথ বাস্তবায়ন ও আমাদের আত্মসচেতনতা এই সমস্যা সমুহ থেকে উৎরে উঠতে সহায়তা করবে।যা পরবর্তীতে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

মোঃ শামসুল আলম শামস
সিনিয়র অফিসার আইটি
সোনালী ব্যাংক লিমিটেড