করোনায় শ্বাসকষ্ট কমাতে যেভাবে শুবেন

করোনায় শ্বাসকষ্ট কমাতে যেভাবে শুবেন

মেহেরুন নেসা

করোনায় আক্রান্ত রোগীর বিভিন্ন উপসর্গের মধ্যে শ্বাসকষ্ট অন্যতম। সাধারণত বুকের মধ্যে অতিরিক্ত কফ জমে থাকার ফলে শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকে।যখন ফুসফুস সঠিকভাবে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন না পায় তখন রক্তে অক্সিজেনের ঘনত্ব কমে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। একজন সুস্থ মানুষের রক্তে অক্সিজেনের ঘনত্ব থাকে সাধারণত ৯৫% বা তার বেশি। এর নিচে নেমে গেলেই শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তবে এ ঘনত্ব ৯২% এর নিচে নেমে গেলে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। করোনাক্রান্ত রোগীর শ্বাসকষ্ট কমিয়ে সুস্থ হওয়ার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থার পাশাপাশি রোগীর শোয়ার ধরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উপুর হয়ে শোয়া, কাত হয়ে শোয়া, অর্ধশায়িত অবস্থায় ইত্যাদি শোয়ার ধরণ করোনার চিকিৎসায় খুবই কার্যকরী, স্বীকৃত চিকিৎসা পদ্ধতি। উন্নত দেশগুলো এ পদ্ধতি অনুসরণ করে বেশ সুফল পাচ্ছে। বিভিন্ন  গবেষণায় দেখা গেছে, এ ধরনের শোয়ার পদ্ধতি অনুসরণ করে ইনটুবিসন, ম্যাকানিকাল ভেন্টিলেশন কমিয়ে আনাসহ করোনায় মৃত্যুর ঝুঁকিও কমিয়ে আনা সম্ভব। তাই আমাদেরকে এই বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন হতে হবে।

উপুর হয়ে শোয়ার ধরণ কীভাবে শ্বাসকষ্ট কমায়ঃ

ফুসফুস পেছনের দিকে বেশি বিস্তৃত হওয়ায় এভাবে শুয়ে থাকলে ফুসফুসের উপর চাপ কম পড়ে। ফলে ফুসফুসে সহজে অক্সিজেন পৌছাতে পারে। এতে ফুসফেসের সংকোচন প্রসারণ সামর্থ্য বাড়ে, মিউপাস নিঃসৃত হয়, শ্বাসনালী বন্ধ হওয়ার প্রবণতা কমে যায়, ফলে ফুসফুসে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়।

উপুর হয়ে শোয়ার  ধরণ কাদের জন্য প্রযোজ্য নয়ঃ

উপুর হয়ে শোয়ার  ধরণ সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। যারা বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা এই ধরনের পজিশনিং-এর আগে অবশ্যই একজন রেসপিরেটোরি ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।যাদের জন্য উপুর হয়ে শোয়া উচিত নয়ঃ

  • যাদের শ্বাসতন্ত্রে তীব্র সমস্যা রয়েছে এবং জরুরী ভিত্তিতে ইন্টুবিসন প্রয়োজন।
  • যাদের রক্ত সঞ্চালনে ভারসাম্যহীনতা রয়েছে( সিস্টোলিক প্রেসার ৯০ এর নিচে)।
  • মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন ব্যক্তি, যারা নিজে নিজে পজিশন পরিবর্তন করতে পারেনা বা কথায় সারা দিতে পারেনা ।
  • বুকে আঘাত, মুখে আঘাত বা সাম্প্রতিক সময়ে যাদের পেটের কোনো অপারেশন হয়েছে।
  • যাদের ঘন ঘন খিঁচুনি হয়।
  • যাদের উরু বা কোমরের হাড়ে আঘাত রয়েছে ।
  • গর্ভবতী মহিলা।

শোয়ার  ধরন পদ্ধতিঃ

উপুর হয়ে শোয়ার  ধরণ পদ্ধতি কয়েক ধরনের পজিশনের ধারাবাহিকতায় করা হয়। প্রতি ১-২ ঘন্টা পরপর পজিশন পরিবর্তন করতে হয়। এর মূল উদ্দেশ্য যাতে ফুসফুসের সব এলাকায় পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছাতে পারে। প্রতিটি পজিশনে শোয়ার  ১৫ মিনিট পর পালস অক্সিমিটারের সাহায্যে অক্সিজেনের ঘনত্ব পরিমাপ করতে হবে। যে পজিশনে অক্সিজেনের ঘনত্ব বাড়বেনা, সেই পজিশন বাদ দিয়ে পরবর্তী পজিশনে যেতে হবে। প্রতিটি পজিশনে ৩০ মিনিট থেকে ২ ঘন্টা পর্যন্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে। তবে তা সম্পূর্ণই নির্ভর করবে রোগীর সহ্য ক্ষমতা, আরামের উপর। যে পজিশনে রোগী আরাম বোধ করবে না সে পজিশন বাদ দিতে হবে। যারা বাড়িতে মৃদু শ্বাসকষ্ট নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন, তারা চেষ্টা করবেন যাতে দিনে কমপক্ষে ২ বার এ পজিশনগুলো ধারাবাহিকভাবে করা। যারা হাসপাতালে ভর্তি আছেন মাঝারি থেকে তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে তারা দিনে ১৬ ঘণ্টা মাল্টি ডিসিপ্লিনারি টিমের তত্ত্বাবধানে অক্সিজেন থেরাপির পাশাপাশি এ ধরনের পজিশনে থাকার চেষ্টা করবেন এতে অক্সিজেনের ঘনত্ব দ্রুত বৃদ্ধি পাবে এবং ভালো সুফল পাবেন। টানা দীর্ঘ সময় না করা গেলে এটি ৪ ঘন্টা পরপর ৪টি সেশনে ভাগ করে নিতে হবে। খাওয়ার পরপরই এ ধরনের পজিশন করা উচিত নয়। পজিশনগুলোর ধারাবাহিকতা নিচে দেওয়া হলঃ

১। উপুর হয়ে শোয়াঃ 

সোজা বিছানায় পেটের ও বুকের নিচে বালিশ দিয়ে ৩০ মিনিট-২ ঘন্টা পর্যন্ত উপুর হইয়ে শুয়ে থাকার চেষ্টা করুন। যারা অক্সিজেন থেরাপি নিচ্ছেন তারা খেয়াল রাখবেন যাতে অক্সিজেনের নলটি খুলে না যায়।

২। ডান কাত হয়ে শোয়া:

সোজা বিছানায় দুই হাটুর মাঝে ও মাথার নিচে বালিশ দিয়ে শুয়ে থকার চেষ্টা করবেন ৩০ মিনিট- ২ঘণ্টা পর্যন্ত।

৩। অর্ধশায়িত অবস্থায় শোয়াঃ

সোজা বিছানায় কোমর ও পিঠের দিকে বালিশ রেখে ৩০-৬০ ডিগ্রী পজিশনে আধা শোয়া অবস্থায় থাকতে হবে ৩০ মিনিট-২ ঘণ্টা পর্যন্ত ।

৪। বাম কাত হয়ে শোয়াঃ

সোজা বিছানায় দুই হাটুর মাঝে ও মাথার নিচে বালিশ নিয়ে শুয়ে থাকার চেষ্টা করবেন ৩০ মিনিট-২ ঘণ্টা পর্যন্ত। তারপর আবার উপুর হয়ে শুতে হবে। এভাবে শোয়ার  ধরনের প্রক্রিয়াটি চক্রাকারে চালিয়ে যেতে হবে।
মেহেরুন-নেসা
ফিজিওথেরাপি ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ