অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রয়োজন প্রতিবাদ নাকি সমাধান?

অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রয়োজন প্রতিবাদ নাকি সমাধান?

জিসান তাসফিক

আমরা মানুষ। সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করি। আমাদের রয়েছে সামাজিক বন্ধন ও পারস্পরিক সম্পর্ক। কিন্তু এর মধ্যে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যাকে আমরা ন্যায় সম্মত কাজ অথবা অন্যায় বলে থাকি। আসলে ন্যায় আর অন্যায় কি?

সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, যে সমস্ত কাজ সমাজের মানুষের জন্য কল্যাণকর ও সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা থাকে এবং ঐ সমাজের রীতিনীতি ও আইন অনুযায়ী হয়, কারো অধিকার ক্ষুণ্ন হয় না এই সবই ন্যায়। আর এর বিপরীতের কাজগুলো অন্যায় কাজ।

কোনটা ন্যায় আর কোনটা অন্যায় তা নির্ধারণ করে কোনো রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা। উদাহরণস্বরূপ বিচারের পর বিচারকের আদেশে মৃত্যুদন্ড হলে সেটা ন্যায় আবার অন্য কেউ এমন কাজ করলে এটা অন্যায়। এইভাবেও ন্যায় অন্যায় নির্ধারিত হয়ে থাকে। আমি এরুপ কার্যের বিরোধী নই কেননা এটা প্রচলিত সমস্যা সমাধান আর থেকে ভালো কোনো উপায় পাওয়া যায় নি।

একটা সময় ছিল যখন এই পৃথিবীতে জ্ঞান অর্জনের প্রয়োজনীয় বিষয়বস্তু দুর্লভ ছিল। কালের বিবর্তনে আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ফলে মানুষের কাছে এসেছে। এর ফলে জ্ঞান চর্চা খুবই সহজ হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে সাংবিধানিক আইনে জ্ঞান চর্চাকে বাধ্যতামূলক করা হয়। ফলে সমাজে কোনো অন্যায় হলে তা আমরা বুঝতে পারি এবং প্রতিবাদ, প্রতিকার, প্রতিরোধ অথবা সমাধান করতে পারি।

অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদী কন্ঠস্বর জেগে ওঠে আর ন্যায়ের ক্ষেত্রে সহমর্মিতা। আমরা লেখার মাধ্যমে কিংবা রাস্তায় আন্দোলন, মিছিল মিটিং করে দেশের মানুষের কাছে তথা সরকারের কাছে  প্রকাশ করি। আপনি আমি এভাবে চালালে নিপীড়িতদের কাছে জনপ্রিয়তা পাবে কিন্তু তাতে আমাদের সমাজ থেকে অন্যায় দূর হবে বলে আমি মনে করি না।  আমার প্রশ্ন তাতে কি সমাজে অন্যায় - অবিচার কমে গিয়েছিল? নাকি সে নতুন ভাবে রূপান্তরিত হয়ে নতুন কোথাও আবির্ভাব হয়?

যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আজ প্রতিবাদ করেছে সে কি কখনও অন্যায় করে নি ? নাকি করবে না। কখনও কখনও সমাজে পরিচিতি পাবার জন্য অন্যের অন্যায় কে দূর্বলতা পূজি ব্যবহার করে কেউ কেউ প্রতিবাদ করে।  হয়ত বা রাষ্ট্রীয় আইনের মাধ্যমে অন্যায় কারিকে সাজা প্রদান করেছে বা করে। এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হলে অনেকেই বলবে আমরা কি তাহলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বন্ধ করে দিব ?  আমার মতে অবস্থা ভেদে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। জ্ঞানী ব্যক্তির জ্ঞানই সমাজে আলোকিত করে।

আমি মনে করি প্রতিবাদ করে নয় বরং সমাধান করা উচিত যাতে কখনও অন্যায়ই না হয়। যে অন্যায় করে বা করতেছে কিংবা করবে তার বা তাদের মধ্যে আমাদের প্রদত্ত এমন জ্ঞান প্রদান করা উচিত যাতে তার বা তাদের মনে হয় " এই যে কাজ করে কি করব? এতে সমাজের লাভ কি? অতীতে এরূপ কাজের ফল কি ছিল? আমাদের কি ফল হবে? ভবিষ্যতে কি ফল আসব? কিংবা সমাজের কি হবে?

আমাদের কাছে কি বিকল্প ব্যবস্থা নাই যার জন্য সমাজের জন্য অন্যায় হবে না? এর পাশাপাশি আমাদের এটা দেখা উচিত যে অন্যায় করে প্রাপ্ত ফল আর ন্যায়ের মাধ্যমে প্রাপ্ত ফলের তারতম্যটাকে। কখনও দেখা যায় অন্যায় কে বিত্তবান হয়েও তার ভোগ করতে পারে না কিন্তু সামান্য উপার্জন করে সমাজের প্রিয় মানুষ হয় রয়েছে। সুতরাং  এরূপ ভাবে চিন্তা করে উত্তর খুজে বের করলে অন্যায় অনেক কমে যেত। অন্যায় প্রতিরোধ করে যাতে অন্যা না হয়, অন্যায়ের প্রতিকার করে যাতে আইন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পায়, এবং সমাধান করতে হবে তারে কারও কোনো সমস্যা না হয়।

 অন্যায় এক বড় ধরনের সামাজিক কিংবা রাষ্ট্রীয় সমস্যা,  সমাজের নির্মাতারা চাইলে এরূপ কাজের করতে পারে স্থায়ী সমাধান করতে পারে।। ধর্মগ্রন্থে, সমাজ সংস্কারক এসব জায়গা সমাধান আছে বলে আমি মনে করি। এই ভাবে ন্যায়-অন্যায় ভেদাভেদ করে আদর্শ সমাজ গঠিত হলে আমরা সবাই শান্তিপূর্ণ ভাবে বাস করতে পারব।

হয়তবা আমার এই চিন্তা চেতনা ধারণ করে অনেক সমাজপতি তাদের অন্যা কৃত কর্ম থেকে দূরে থাকবে না কিংবা প্রতিবাদি কন্ঠস্বর থেকে থাকবে না কিন্তু সমাধানে য‍দি য‍দি সাফল্য আসে তবে রক্তাক্তের কোনো প্রয়োজন নেই। এতে করে  পরিপূর্ণ ভাবে শেষ হবে না কিন্তু মাত্রা অনেকাংশে কমে আসবে।

জিসান তাসফিক : শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।