নারীদের জীবন

নারীদের জীবন

প্রতীকি ছবি

অধ্যাপক ডা. শামছুন নাহার

আদ্-দ্বীন উইমেন্স মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা

নারী তুমি আর দশজন মানুষের মতই স্বতন্ত্র। তুমি নারী এটাই তোমার গর্ব করার ব্যাপার। তোমার অনেক যোগ্যতা আছে। সংসার, বাচ্চা জন্ম ও লালন পালন অনেক কাজের মধ্যে একটি কাজ মাত্র। হয়তো পুরুষের মত হাত-পা ছুড়ে বল প্রয়োগের ক্ষমতা কম; কিন্তু অন্য কোন কিছুতেই তোমার ঘাটতি নেই। অনেক বাবা-মা নারীদের তাড়াহুড়ো করে বিয়ে দিয়ে ভাবে আমার দায়িত্ব শেষ। আরো ভাবে বড় ঘরে বিয়ে দিয়েছি সুখ কেনা হয়ে গেছে। মেয়ে আজীবন সুখে থাকবে। আসলে কি তাই? মেয়ে কি সুখে থাকে? মেয়ে সারাজীবন পরের উপর গলগ্রহ হয়ে থাকে। কথার বানের ফুলছুড়ি,  দু'চারটে লাঠির বাড়িও খেতে থাকে। তাছাড়া স্বামীর যদি অকাল মৃত্যু হয়, তখন আর শ্বশুর বাড়ি ঠাঁই হয়না। ভাইয়ের বাড়ি এসে উঠতে বসতে ভাবির মুখের ঝাঁকি, অম্ল মধুর বাক্য শুনে চোখের পানি, নাকের পানি একাকার করে থাকতে হয়। তাহলে বাবা মায়ের কি করা দরকার ছিল? ঐ মেয়েকে উপযুক্ত লেখা পড়া করিয়ে তারপর বিয়ে দেয়া দরকার ছিল। তাতে মেয়ে আত্মসম্মান বোধ ও নিজের মত করে জীবন চালাতে পারতো। দেখা যায়, একই বাড়িতে ছেলেটাকে অনেক উচ্চ শিক্ষা দিচ্ছে অথচ মেয়েটাকে কোনমতে হাইস্কুলে পড়িয়ে অথবা গ্রামের স্কুল শেষ করে বিয়ে দিয়েছে। এই মানসিকতা থেকে প্রথমে বাবা মাদের বেরিয়ে আসতে হবে। ছেলে ও মেয়ে দুজনকে সমান শিক্ষা ও সমান সুযোগের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। তবেই নারীর স্বাধীনতা, তবেই মুক্তি। শিক্ষিত মেয়েরা মাথা উঁচু করে কথা বলতে পারে। কারণ তারা আত্মসম্মানে বলিয়ান। তাদের কথার তখন মূল্য পায়। তোমাকে হাতে-পায়ে শিকল পরিয়ে রেখেছে পুরুষ শাসিত সমাজ ও দেশ, তুমি সকলের সাথে মিশলে কথা বললে, জ্ঞানের আদান প্রদান করলে তোমার সম্মান যায়, তোমার পর্দা ভঙ্গ হয়, তোমার পাপ হয়। তুমি কি তোমার পাপ পূর্ণের সীমারেখা জানো না? তুমি বিপদে পড়লে কেউ সাহায্য না করলে তোমার ভেঙে ‌পড়ার বা ভয় পাবার কিছুই নাই। তুমি একাই পারবে সব সামাল দিতে। স্বামী ভাত দিচ্ছে না? নিজের খাবার নিজে জোগাড় করতে পারবে। এ শহরে অনেক নারী আছে, স্বামী ৪/৫টা বাচ্চা রেখে অন্য একটা বিয়ে করে চলে গেছে, টাকা পয়সা তো দূরের কথা খোঁজ ও নেয়না। সেসব নারীরা সারাদিন কমপক্ষে ৩ /৪ জায়গায় ঠিকা ঝি-র কাজ করে সংসার চালাচ্ছে। এমন বহু প্রমাণ চোখের সামনে এখানে ওখানে দেখা যায়। স্বামী তার বাচ্চা প্রাক্তন বউ এর কাছে ফেলে যাওয়ার ঘটনা অহরহ ঘটছে। কি উচ্চবিত্ত কি নিম্নবিত্ত কি মধ্যবিত্ত। এই একজায়গায় তারা সবাই এক কাতারে শামিল। উদাহরণ নাই বা টানলাম। নারীদের বৈষম্য শুরু হয় মায়ের পেট থেকে। যদি জানতে পারে পেটে মেয়ে বাচ্চা আছে তখন সংসারে মন খারাপ শুরু হয়ে যায়। তবে সব জায়গায় না; কিছু কিছু পরিবারের কথা বলছি। মেয়েটা জন্মের পর থেকে তার নিগ্রহ শুরু হয়। পড়া লেখা, পোশাকে আশাকে, খাওয়া দাওয়া সব ব্যাপারে মেয়ে শিশুরা বঞ্চিত হতে থাকে। তাদের পুরাপুরি বেড়ে ওঠার আগেই বিয়ে দেয়া হয়। ফলে তার শরীর গঠন পরিপূর্ণ হওয়ার আগেই সন্তান এসে যায়। পেলভিস ডেভেলপমেন্ট হওয়ার আগে প্রেগন্যান্সি। ফলশ্রুতিতে বাচ্চা প্রসব বাধাগ্রস্থ হয়। সিজারিয়ান অপারেশনের কাছে দারস্থ হতে হয়। তাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য বিকশিত হওয়ার আগেই শ্বশুড় বাড়ি যেতে হয়। সেখানে পরিবারের মানুষের মন জুগিয়ে চলতে হয়। এটা একটি ভিসিয়াস সার্কেল তৈরি হয়েছে এবং এমনিভাবে চলছে।