কোরবানীর বিধি বিধান

কোরবানীর  বিধি বিধান

ফাইল ছবি

মুসলমানদের দ্বিতীয় বড় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা সমাগত। আগামী  ১ আগস্ট ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। ঈদুল আজহাকে আমাদের সমাজে কোরবানীর ঈদ বলে। ইসলামে মৌলিক পাঁচটি বিধান রয়েছে। এগুলো হচ্ছে কালেমা, নামাজ, রোজা,হজ্ব এবং জাকাত। কোরবানি শব্দের অর্থ নৈকট্য, সান্নিধ্য, উৎসর্গ। ঈদুল আজহার দিনসহ পরবর্তী দুইদিন আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট পশু জবাই করাকে ‘কোরবানি’ বলে। কোরবানির এমন বিধান হজরত আদম (আ.)-এর যুগ থেকেই চলে এসেছে। তবে বর্তমানে প্রচলিত কোরবানির গোড়া পত্তন করেন হজরত ইবরাহিম (আ.)। এই বিষয়ে পবিত্র কোরআনের সূরা সাফফাত-এ আল্লাহ বলেন, আমি তার (ইসমাঈলের) পরিবর্তে জবাই করার জন্য দিলাম এক মহান জন্তু। আর আমি এ বিষয়টি পরবর্তীদের মধ্যে রেখে দিয়েছি। তিরমিজি শরীফের একটি হাদীসে কোরবানির ফজিলত সম্পর্কে নবী করীম (সা.) বলেন, কোরবানির দিন কোরবানি করাই সবচেয়ে বড় ইবাদত। সেইসাথে অন্য আরেকটি হাদীসে বলা হয়, কোরবানির পশুর প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একেকটি করে নেকি দেওয়া হয়।

কোরবানির নিসাব:

সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি রুপা বা প্রয়োজনাতিরিক্ত আসবাবপত্র, যার মূল্য সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার সমপরিমাণ, তা কোরবানির নিসাব। তবে নিসাবের মালিক নয় এমন ব্যক্তির জন্য কোরবানি করা মুস্তাহাব। তবে  কেউ কোরবানির নিয়তে পশু ক্রয় করলে তা কোরবানি করা ওয়াজিব হয়ে যায়।

কোরবানির সময়:

কোরবানির সময় নিয়ে বুখারি শরিফে বলা হয়েছে, ১০ জিলহজ ঈদের নামাজের পর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোরবানি করা যায়। তবে ১০ জিলহজ কোরবানি করা উত্তম। আর কোরবানির দিনগুলোতে সম্ভব না হলে ক্রয়কৃত পশু বা কোরবানির মূল্য সদকা করে দিতে হবে। চান্দ্র মাস হিসেবে পূর্ণ পাঁচ বছর বয়সের  উট, দুই বছরের গরু ও মহিষ এবং এক বছরের ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা দ্বারা কোরবানি করতে হবে।

শরিকে কোরবানি:

শরিকে কোরবানি দেওয়ার বিষয়ে মুসলিম শরীফের একটি হাদীস থেকে জানা যায়, ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা দ্বারা কোরবানি দিলে একা দিতে হবে। আর উট, গরু ও মহিষে সর্বোচ্চ সাতজন শরিক হতে পারবে। সাতের কম যেকোনো সংখ্যায় কোরবানি করা জায়েজ। সেইসাথে হাদীস থেকে আরো জানা যায়, অন্ধ, কানা, লেংড়া বা এমন দুর্বল পশু, যা জবাইয়ের স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না, যে পশুর কোনো অঙ্গ এক-তৃতীয়াংশ বা তার চেয়ে বেশি কেটে গেছে, যে পশুর এত বেশি দাঁত পড়ে গেছে যে ঘাস-খাদ্য চিবোতে পারে না, যে পশুর শিং একেবারে গোড়া থেকে ভেঙে গেছে এগুলো দ্বারা কোরবানি শুদ্ধ হবে না।

গোশত বণ্টন:

কোরবানির গোশত বণ্টনের বিষয়ে মুসলিম শরীফের একটি হাদীসে থেকে জানা যায়, ঈদুল আজহার প্রথম দিন সর্বপ্রথম নিজ কোরবানির গোশত দিয়ে খানা শুরু করা সুন্নাত। কোরবানি শরিকানার হলে ওজন করে গোশত বণ্টন করতে হবে। কোরবানির গোশত তিন ভাগ করে এক ভাগ নিজের জন্য, এক ভাগ গরিবদের জন্য আর এক ভাগ আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীকে দেওয়া উত্তম। তবে মানতের কোরবানির গোশত নিজে এবং কোনো ধনী খেতে পারবে না। কোরবানির গোশত, চর্বি, হাড় ইত্যাদি বিক্রি করা বা পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া জায়েজ নয়। অবশ্য ঘরের অন্য সদস্যদের মতো কাজের লোকদেরও গোশত খাওয়ানো যাবে। কোরবানির গোশত হতে অমুসলিমকে ইসলামের প্রতি অনুরাগী করার জন্য দেওয়া বৈধ। আর তা ইসলামের এক মহানুভবতা। বুখারি শরীফ থেকে জানা যায়, আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) তার ইহুদী প্রতিবেশীকে দিয়ে গোশত বণ্টন শুরু করেছিলেন।